আমাদের অবশ্যই ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দায়বন্ধ থাকতে হবে: আফসানা মিমি
'বন্ধু গিয়াসউদ্দিন সেলিম আমাকে কদিন আগে একটা কথা বলেছে। বলেছে, আমি যখন অভিনয় শিখে ফেলেছি- তখনই নাকি অভিনয় ছেড়ে দিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো, প্রায় ২০ বছর পর অভিনয়ে ফিরলাম সেলিমের সিনেমা দিয়েই। তবে সেই সিনেমার আগে রিলিজ হলো নিখোঁজ নামের ওয়েব সিরিজ।' আবার অভিনয়ে ফেরা প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন প্রতিভাবান অভিনেত্রী আফসানা মিমি।
গত ১৭ মার্চ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম- চরকিতে মুক্তি পেয়েছে নিঁখোজ নামের ৬ পর্বের একটি সিরিজ। ফ্যামিলি ড্রামা ও থ্রিলার ঘরানার গল্পের এই সিরিজটি পরিচালনা করেছেন- রিহান রহমান। তারকাবহুল এ সিরিজে আফসানা মিমিকে বহুদিন পর পর্দায় আবার দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে 'নিখোঁজ'–এর মধ্য দিয়েই ওয়েব দুনিয়ায় অভিষেক হলো তার।
অনেকদিন পর ক্যামেরার সামনে কাজ করছেন তাও ওটিটির জন্য- পুরো বিষয়টি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন আফসানা মিমি। নিঁখোজ- এ যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কাজটি করার জন্য যখন ফোন পাই তখন প্রথমেই বলেছিলাম, মোটাসোটা বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে কাজটি করার এপ্রোচ করছেন, চরিত্রটা আমার সাথে যাবে তো? পরে যখন পরিচালক রিহানের সাথে পরিচয় হয় আর স্ক্রিপ্টটা পড়ি তখনই আমার মনে হয়েছে, কাজটা করা যায়। স্ক্রিপ্ট পড়েই আমার চরিত্রের পাশাপাশি আর সবার চরিত্র আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। শ্যুটে যাওয়ার আগে আমরা অনেক আড্ডা দিয়েছি, রিহার্সেল করেছি।'
আফসানা মিমি নিজেও একজন নির্মাতা। জানতে চাই, তরুণ এই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা? তিনি বলেন, 'শুটিংয়ের সময় মানে ক্যামেরার সামনে আমি একদম পরিচালকের বাধ্য বালিকা। আমি যে একজন নির্মাতা সেটা ভুলে যাই একদম। আর ডিরেক্টর হিসেবে রিহান চমৎকার। আমি ওর উপরে ১০০% ডিপেন্ড করেই কাজটা করেছি।'
পাশাপাশি সহশিল্পীদের নিয়েও কথা বলেন এই অভিনেত্রী। এখানে যারা অভিনয় করেছেন তারাও দুর্দান্ত ছিলেন। বিশেষ করে শ্যামল মাওলার অভিনয়ের ভূয়সী প্রসংশা করেন।
অনেকদিন কাজ না করা প্রসঙ্গেও বলেছেন। মিমি বলেন, মাঝের সময়টা আমি নির্মাণ ও নিজের ব্যবসায়িক কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই অভিনয়ের দিকে একেবারেই সময় দিতে পারিনি। কিন্তু কিছুদিন হলো মনে হচ্ছে অভিনয়ে নিয়মিত হওয়া দরকার। সে কারণেই ২০১৯ সালে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'পাপপূন্য' সিনেমায় অভিনয় করেছি। পরের বছর নূর ইমরান মিঠুর 'পাতালঘর' সিনেমায় অভিনয় করেছি। তারপর আরও কিছু কাজের কথা হচ্ছে।'
তবে টেলিভিশন আর ওটিটির কাজের পার্থক্য নিয়েও তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, 'ওটিটি ও টেলিভিশনের কাজের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। গত প্রায় ১৫-২০ বছর টেলিভিশনগুলো একই জায়গায় আটকে আছে। টেলিভিশন নাটকগুলো নষ্ট হয়েছে, কারণ যে খুশি সে বানাতে পারে, যাকে দিয়ে ইচ্ছে অভিনয় করায়। চ্যানেলগুলো যদি তাদের ধ্যান-ধারণা না বদলায়, তাহলে দর্শক শেষপর্যন্ত তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।'
তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেছেন। সেই স্মৃতি মনে করে এই অভিনেত্রী বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটা সমৃদ্ধ অতীত আছে। সেখানে ভালো ভালো সাহিত্য, মৌলিক নাটক, ভালো নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের কাজ দেখে বড় হয়েছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। নিজেরাও সেরকম কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনকার ৭৫ ভাগ কাজের পেছনে পেছনে কোনো চিন্তা নেই, উদ্দেশ্যে নেই। সেখানে যে কেউ লিখতে পারে, বানাতে পারে, অভিনয় করতে পারে এবং প্রডিউস করতে পারে।
'মূল কথা হলো, আমরা সবাই ব্যবসায়ী হয়ে গিয়েছি। সমস্যা হলো, আপনি যদি শুধু ব্যবসা করতে যান- তাহলে সাবান বিক্রি করুন। কিন্তু আপনি যদি শিল্পসাহিত্য নিয়ে কাজ করেন তাহলে একটা কমিটমেন্ট থাকতে হয়, একটা দায়িত্ব থাকতে হয়। শুধু তকমা লাগানোর জন্য না করি। আমরা এই জগতটাকে আমরা অনেক বেশি অসন্মান করেছি। আমাদের অবশ্যই ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দায়বন্ধ থাকতে হবে।'
আফসানা মিমি বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্য ও চলচ্চিত্র শাখার পরিচালক। সেখানে তো কাজ করতেই হয়, পাশাপাশি আবারো অভিনয়ের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। বলেন, ভালো গল্প ও নির্মাতা পেলে অবশ্যই সামনে আরও কাজ করব। আমি এমন কিছু করতে চাই না, যা করে আমার অভিনয়শৈলী নষ্ট হয়।