ফিরে আসুক ‘রোরিং টুয়েন্টিজ’
আমি যদি বলি ২০২০ সালটা এ যাবতকালের সবচাইতে খারাপ বছর হিসেবে কেটেছে, বিশ্বাস করুন বা নাই করুন অনেকেই প্রতিবাদ করে বলে উঠবে, এ বছরেই তাদের জীবনের সেরা সময়টুকু কেটেছে! এটি ছিল তাদের জন্য নতুন করে শেখার সময়; চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং আধুনিকায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সময়।
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে সেই সময়ের মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের অনেক প্রাণের বিনিময়ে।
২০২০ এর গত হওয়া দিনগুলোতে যদি আমি চোখ বুলাই তাহলে সবগুলো দিন যেন একই রকম মনে হয়। কী এক বিড়ম্বনা! মনে হয় বছরের প্রতিটি দিন একটাই দিনের ভেতরে লীন হয়ে গেছে।
২০২০ এর ঘটনাপ্রবাহ এবং একেকটি ঘটনার তৎপরবর্তী প্রভাব এমন ছিল যে মানুষ গত ১০০ বছরেও এসব প্রত্যক্ষ করেনি। চিকিৎসা বিজ্ঞান, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, এমনকি প্রশাসনও এমনভাবে নতুনরূপে আবর্তিত হয়েছে যা নিকট অতীতের কোন কিছুর সাথেই মেলানো সম্ভব নয়।
আমরা যতই বছরটিকে ভুলে যেতে চাই না কেন, বিশ্বজুড়ে সমাজের উঁচুতলা এবং নিচুতলা উভয় শ্রেণির মানুষের জনজীবনে যেভাবে মহামারীর জন্য প্রতিবন্ধকতা নেমে এসেছে, সমাজের সবাই যেভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে তাতে ইতিহাস এ বছরটিকে মুছে যেতে দেবে না।
দুর্দশা এবং নিরাপত্তাহীনতা কথন
২০২০ সালকে ঠিক কীভাবে স্মরণে রাখা হবে তা নিয়ে দীর্ঘ তালিকা তৈরী করে রাখা যায়। স্কুলের পাঠ্যবইগুলোতে একে নিশ্চিত মহামারীর বছর হিসেবেই ঠাঁই দেয়া হবে। এটি আরো গণ্য হবে দীর্ঘ অসুস্থতার সময় হিসেবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাণিজ্যের কাল হিসেবে, তীব্র বেকারত্ব আর শিশুদের বিদ্যালয়ের বাইরে গৃহবন্দী দিন গোণার বছর হিসেবে। আবার কেউ বলবে এ বছর ছিল বৈষম্য এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চারের বছর, এ বছর ছিল প্রতিবাদের।
যারা কোভিড-১৯ এ নিজেদের প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের ক্ষতি অপূরণীয়। তবে অন্যদের জন্য এ বছর অনেক নতুন ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে । কাজের জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ির বাইরে বেরোতে হয়নি, অলসতা ঝেড়ে শরীরচর্চার জন্য সময় পাওয়া গেছে, গৃহকর্মীর ওপর নির্ভর না করে থেকে নিজের খাবার এবং কাজ নিজেই সারার সময় পাওয়া গেছে, জ্যাম ঠেলে ভ্রমণ না করেই বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করা গেছে, পরিবারকে সময় দেয়া গেছে, পোষা প্রাণির যত্ন নেয়া গেছে। এসব খুব সাধারণ শোনায় তবু এই কাজগুলোই এই মহামারীর আগে করার অবকাশ পাওয়া যায়নি।
বিশ্বে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮১ মিলিয়নের ওপর, ১.৮ মিলিয়ন লোক ইতিমধ্যে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে এবং প্রতিদিন আরো হাজারে হাজারে লোক সংক্রমিত হচ্ছে। করোনার প্রভাব পড়েছে ২০৩০ এ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে দেশগুলোর এগিয়ে যাবার গতির ওপর ।
১৯৩০ সালের পর আবারো বৈশ্বিক অর্থনীতি এতবড় লোকসানের কবলে পড়ল। অর্থনৈতিক অবস্থা যেমনই হোক, ভুগেছে প্রতিটি দেশ।
সীমান্ত বন্ধ হয়েছে, কর্মীরা বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেনি, সামাজিক কর্মকান্ড নানাভাবে রহিত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। তবু দীর্ঘদিন চলে আসা অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্যের খোলস উন্মোচন করে দিয়েছে কোভিড-১৯।
জলবায়ু সংকট, বৈষম্য এবং বিভাজনমূলক রাজনীতির অস্তিত্ব যে এখনো বিদ্যমান, মহামারীর পাশাপাশি এসব সংকট যে আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি সে কথাও চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়েছে এই ২০২০।
করোনা মহামারীর উত্থান যদি নাও ঘটত, তবু ২০২০ কে আলাদাভাবে মনে রাখার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে ভয়াবহ দাবানলে মাইলের পর মাইল বন উজাড় হলো। শুরুতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং বছরের শেষে কৃষক বিল নিয়ে ভারতে অস্থিরতা অব্যাহত থাকল। হংকং এ বিতর্কিত প্রত্যর্পণ আইনের বিরোধিতা করে মহামারীর ভেতরেই রাস্তায় শ'য়ে শ'য়ে মানুষ নেমে এলো, বৈরুত বন্দরের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল সমগ্র বিশ্ব। নেতাদের চিরাচরিত কথার লড়াই, বাণিজ্য যুদ্ধ, ব্রেক্সিট, মার্কিন নির্বাচন যেভাবে ২০২০ এর ক্যালেন্ডারে একটি একটি করে ছাপ ফেলে গেছে তাতে একে ২০১৯ এর নিস্তেজতা তো থেকে সহজেই আলাদা করা যায়।
তবু ইতিহাসবিদেরা ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এবং বিতরণের খবর সামনে এনে এ বছরের ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, ভেবেছিলেন এ মহামারীর ব্যাপ্তি কেবল এ বছর জুড়েই। কিন্তু বিধি বাম! বছর শেষে উলটো করোনার নতুন ধরন (স্ট্রেইন) এসে সংক্রমণের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে তুলল। এবার এতে যুক্ত হলো শিশুরাও।
২০২০- আরেকটি দশকের সমাপ্তি; নতুন দশকের জন্য অনেকেই আশায় বুক বেঁধে আছেন যে, আসছে দিনে মানব সভ্যতা এবার বৈপ্লবিক প্রযুক্তিগত বিবর্তন দেখতে পাবে। তাছাড়া, আধুনিকায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মহামারীর প্রথম দুই মাসেই পৃথিবী যেভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দেখতে পেল, তা সাধারণ সময়ে কার্যকর হতে বছর দু'য়েক লেগে যেত! বাড়ি থেকেই স্কুলের ক্লাস, ই-কমার্স, অথবা বাসা থেকেই অফিস করার যে প্রবণতা আমরা এ বছর দেখেছি তা পুরোপুরি ডিজিটাল সক্ষমতার উদাহরণ।
তবে ধরিত্রীর প্রতিটি অঞ্চলেই আগে থেকে যে 'ডিজিটাল' বিভাজন ছিল, তা কিন্তু কেটে যায়নি। আধুনিকায়নের ফলে একটি অংশ যেমন আরো বেশি করে নিজেদের প্রযুক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করেছে, তেমনি অপর অংশটি থেকেছে বরাবরের মতই পিছিয়ে। এই শ্রেণির জন্য ২০২০ এ সত্যিই দুর্দশা ছাড়া কিছু ছিল না।
অযাচিত রূপান্তর
মহামারীর এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির পাশাপাশি আমাদের সামনে নতুন করে সামনে এল মানুষের আচরণগত পরিবর্তন। রোজকার মিথস্ক্রিয়া, মেলা মেশা কিছুই আগের মত থাকল না। মানুষকে কাছ থেকে নয়, দেখতে হলো 'ভার্চুয়ালি'- এটি বোধহয় এই মহামারীর সবচাইতে বড় পরিবর্তনের একটি ছিল। এমনকি যেখানে লকডাউন কার্যকর ছিল না সেখানেও মানুষকে দেখা করতে হয়েছে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্কের আড়ালে। প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা বা নিছক হাত মেলানোর সুযোগ ছিল অনিবার্যভাবে সীমিত।
২০২০ এর শুরুটা নিতান্তই আটপৌরে ছিল। রোজকার প্রতিযোগিতা এবং মানুষের বরাবরের মতই ছুটে চলা। বুকভরে নিঃশ্বাস নেবার মত মুহূর্তটুকুও ছিল না। কিন্তু মহামারীর পর খুব ছোট ছোট জিনিসেও মানুষ আনন্দ পেতে শুরু করল। ক্যারিয়ার ভাবনার পাশাপাশি ভাষা শিক্ষা, শিল্পচর্চা থেকে শুরু করে, ছাদবাগানে সময় কাটানো, রাস্তার পাশের দোকানে দু'চুমুক কফি পান সবকিছুতেই মানুষ অর্থ খুঁজে পেতে থাকল; ছোট মুহূর্তগুলোও মানুষের কাছে আনন্দের হয়ে ধরা দিতে লাগল।
মহামারী রোজনামচায় নিয়ে এলো ব্যাপক পরিবর্তন। সমাজকে বুঝিয়ে দিল খুব সাধারণ অথচ বিশেষ মুহূর্তগুলোকে আমরা কতটা অবহেলা করেছি, জীবনকে আমরা আসলে কত হালকাভাবে দেখি! রাতের পর যেমন নতুন দিন আসে তেমনি মহামারীর সময়টাতেও মানুষ প্রতিদিন বেঁচে থাকার মাঝে নতুন নতুন অর্থ খুঁজে পেতে লাগল।
সমষ্টিগত কর্মের সীমাবদ্ধতা এবং আলোচনা
বছরের পর বছর ধরে সামষ্টিক কাজগুলোতে যে ব্যর্থতা রয়েছে, তাই যেন নতুন করে এই মহামারীর মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হলো আরেকবার। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সরকারের
সরকারের একেকটি উদ্যোগ কীভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে, সঞ্চিত সম্পদ সুষম বন্টনের প্রয়োজনীয়তা সেসবও আরেকবার তুলে ধরেছে এই ২০২০।
প্রধান নগরীগুলো বন্ধ হয়ে যাবার মধ্য দিয়ে প্রকৃতি উপকৃত হয়েছে এই মহামারীর ভেতর। বনে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে, আকাশ আরেকটু পরিষ্কার হয়ে গেছে, নদী-সমুদ্রের পানি আগের চাইতেও স্বচ্ছ, বাতাসের মান পূর্বের চাইতে বিশুদ্ধ। মানুষের চলাচল এবং কলকারখানার ব্যবহার সীমিত বলে গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমেছে উল্লেখযোগ্যহারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে ৫.৫ শতাংশ কম নিঃসরিত হয়েছে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক বস্তু। তবু পরিবেশের জন্য সবটা ইতিবাচক ঘটেছে তা বলা যাচ্ছে না। কেননা অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মেডিকেল বর্জ্য ; রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহারের সুযোগও কমে এসেছে কারখানাগুলো বন্ধ থাকায়।
মহামারীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিবেশের যে পুনরুজ্জীবন ঘটল তা কিন্তু সর্বব্যাপী নয়। ২০০৮ এ অর্থনৈতিক দুর্যোগের সময়েও লক্ষণীয় মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছিল । কিন্তু ২০১০ এ আবারো নিঃসরণ তাঁর পুরনো মাত্রায় ফিরে যায়। মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষার জন্য পৃথিবীর সব বড় বড় ল্যাবে ভ্যাকসিন তৈরীর প্রচেষ্টা চলছে; ফলে করোনার পরে কার্বন নিঃসরণ এবং দূষণের মতো, মানুষেরও পুরনো স্বভাবে ফিরে যেতে সময় লাগবে না।
পুরো পৃথিবীর ওপর একই তালে ছড়ি ঘোরানো মহামারী এটাও বুঝিয়ে দিল যে, জলবায়ু সংকট বা ঘূর্ণিঝড় হোক, যেকোন বৈশ্বিক দুর্যোগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যেসব দেশ করোনার আক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তাদের প্রশাসনে একতা ছিল, সমন্বয় ছিল। নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া , জাপান এবং তাইওয়ান প্রভৃতি দেশ তাদের সুসংহত, সুপরিকল্পিত সরকার ব্যবস্থার জন্যই করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।
২০২০ আরো যা পেছনে রেখে যাচ্ছে
মহামারী যে অর্থনৈতিক মন্দার ছাপ রেখে যাচ্ছে তা আসছে দিনগুলোতে ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারী উভয়ের মানসিকতাতেই পরিবর্তন আনবে।
একদিকে জীবিকার এবং সংসারের বাড়ন্ত খরচ আবার কর্পোরেট ঋণের বোঝা সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনাটা করোনা পরবর্তী সময়ে কঠিন হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে তাৎক্ষণিক তারল্য ঝুঁকি হ্রাসের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবু সরকারকর্তৃক পরবর্তী যেকোন অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেবার আগে হতে হবে সাবধানী। করোনা পরবর্তী স্বাভাবিকীকরণ উদ্যোগগুলো যেন ঝুঁকিকে উলটো বাড়িয়ে না তোলে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নতুন ঝুঁকি নেবার যে প্রবণতা রয়েছে তাতে ইতিমধ্যেই যে লাগাম মহামারী টেনে ধরেছে , সে কথা বলতে বাঁধা নেই।
এ সংকট সরকারের প্রত্যাশার নীতিতে বদল এনেছে। ২০২০ এর পরে সংকট-পরবর্তী রাজস্ব-নীতি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেই জোর দিবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্যোগের পর যেভাবে সরকারী নীতিতে মিতব্যয়ীতার একটা ঝোঁক ছিল তার এবার ব্যত্যয় ঘটবে।
তবুও সামনে এগোতে হবে
নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বেশ কিছু অঞ্চলে নতুন করে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ম্লান হতে শুরু করেছে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সম্ভবনা। যদিও করোনার ভ্যাক্সিনের অগ্রগতি মধ্যম ধাপের প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত করছে। এই অভূতপূর্ব সাফল্য আশা জোগায় মহামারীর সমাপ্তির সূচনার, আশা জোগায় বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামা।
২০২১ এবং পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আশা জাগানিয়া বিষয় হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও স্প্যানিশ ফ্লুর পর বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা।
যেখানে প্রযুক্তগত অগ্রগতির মাধ্যমে দ্রুতই ঘরবাড়ি, কলকারখানায় পৌঁছে গিয়েছিল বিদ্যুৎ, অটো-মোবাইল, রেডিও, বিমান, টেলিফোন সহ নানান ধরণের বৈদ্যুতিক সামগ্রীর উৎপাদন ও বাজারজাত করার মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সেই দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
যখন পৃথিবী মহামারীর কোল থেকে বেরিয়ে আসছে, তখন সুযোগ এসেছে এই পরিস্থিতির মাঝেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়তা এবং আধুনিকায়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অপরিবর্তনীয়ভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির এবং আরো বাস্তবসম্মত প্রকল্প নিয়ে ২০২১ সালের শেষনাগাদ প্রাক-মহামারী উৎপাদন স্তরে ফিরে আসা।
বিশ্ব অর্থনীতি খুব কম সময়ই সম্মিলিত স্বার্থ বিবেচনা করে চলে। একটি সমন্বিত বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে গত ৪ দশকে মাত্র ১২ বার এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং উদীয়মান বাজার বিকাশলাভ করেছে একই বছরে, যা ২০১৭ সালে সর্বশেষ ঘটেছে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সবার জন্য সমান নয় এমনকি টিকাদানের মাধ্যমেও বিভিন্ন শিল্প এবং দেশে সমান হবে না এই পথ। ২০২১ সালে আইএমএফ ৫.২% বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সামান্য প্রত্যাবর্তন আশা করছে, যার বেশিরভাগই চীনের প্রত্যাশিত ৮.২% প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে।
এভাবে আরো কয়েক বছর লেগে যাবে বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু জিডিপি ২০১৯ পর্যায়ে ফিরে আসতে।
২০২১ সালের অর্থনৈতিক যাত্রা কেমন হতে পারে তা ২ মাস আগের থেকে এখন অনেক বেশি পরিষ্কার।
এই যাত্রায় কিছু ধকলের মুখে পড়তেই হবে যা সুশাসনের মাধ্যমেও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
ঘুরে দাঁড়াবার প্রাণপণ চেষ্টা সুযোগ তৈরি করছে দ্রুতই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বিকাশের পথ তরান্বিত করার যা বিপদ ডেকে আনবে পৃথিবীর নানান দেশে প্রতিষ্ঠিত দুঃশাসনের জন্য।
২০২১ ঐতিহাসিক একটা বছর হবে বিশ্বনেতাদের জন্য একে অপরের প্রতি প্রাণবন্তভাবে সহযোগিতাপূর্ণ প্রকাশ করার। এবং এর মাধ্যমেই ২০২১ সাল হতে পারে নিকটবর্তীকালে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সবচেয়ে দুর্দান্ত স্মৃতিময় একটা বছর।
এই মহামারীর সময়ে নানানভাবে আমাদের সামনে প্রবৃদ্ধির অনেক নতুন সম্ভাবনা এসেছে, কিন্তু আফসোসের বিষোয় হলো সেইসব সম্ভাবনার উৎপত্তি হয়েছে দুঃসহ এক ভাইরাসের মধ্য দিয়ে।
ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে টেকসই পরিবর্তন নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদেরই।
এই মহামারী আমাদের বাধ্য করেছে প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি পরিবেশ বান্ধব হয়ে উঠতে, যা দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।
নানান দেশের অভ্যন্তরে এবং অন্য দেশের সাথে অর্থনৈতিক ও তীব্র সামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান থাকায় সর্বসাধারণের জন্য টিকার প্রাপ্যতা বৈষম্যমূলক এবং দুষ্কর হয়ে উঠবে।
সামাজিক ন্যায়বিচার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেয় এমন একটি নতুন ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে আমাদের, ঠিক যেমন মহামারীর সময় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।
- লেখক: বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ
- মূল লেখা: Hoping for a roaring 20s
- অনুবাদ: মেহজাবিন তুলি