মমতাই ফিরছেন
পশ্চিমবাংলায় জয় বাংলা জয় যুক্ত হতে চলেছে। পশ্চিমবাংলা বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। প্রাথমিক কয়েক রাউন্ডের ভোট গণনায় সুস্পষ্টভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে। আসন সংখ্যার দিক থেকে ব্যাপক পার্থক্য সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সবচেয়ে দুঃখের খবর ৩৪ বছরের বাম শাসনের মোর্চা মাত্র একটি আসনে এগিয়ে আছে। আর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে শুভেন্দু অধিকারী মমতা ব্যানার্জিকে পেছনে ফেলে সিঙ্গুরে এখনও এগিয়ে আছেন। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আরও আছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয় ২০ হাজার ভোটে পিছিয়ে আছে পঞ্চম রাউন্ডে। ভোট গণনার প্রাথমিক পর্ব চলছে, কোথাও ৫ রাউন্ড ভোট গণনা হয়েছে, কোনো কোনো আসনে ২০ রাউন্ড পর্যন্ত। ভোট গণনা শুরু হয়েছে ব্যালেট ভোট গণনার মাধ্যমে।
ইভিএম ভোট গণনা চলছে। প্রথম রাউন্ড দ্বিতীয় রাউন্ড হয়েছে, তাতে যে ব্যবধান দেখা যাচ্ছে এই ব্যবধানই চূড়ান্ত নয়। হয়তো এর কিছুটা পরিবর্তন হবে। তবে উত্তর ভারত থেকে আমদানি করা রাজনৈতিক নেতা যোগী আদিত্যনাথ পশ্চিম বাংলার মাটিতে এক বিন্দু জায়গাও করতে পারেনি। এটা প্রবলভাবে প্রমাণ হতে যাচ্ছে। পশ্চিমবাংলার শহরগুলো এক সময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিংশ শতাব্দীতে। সেই আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর ভারতে স্থানান্তরিত হয়, তারাই আজ ভারত শাসন করছে। কিন্তু তারা আজও পশ্চিমবাংলার ক্ষমতা ফেরত পেল না।
সামনে আরো যত ভোট গণনা বাড়বে ততই যে চিত্রটি ফুটে উঠছে, তাতে মোদি এবং অমিত শাহের ভরাডুবি হতে চলেছে পশ্চিমবাংলায়। মোদি এবং অমিত শাহ জুটি পশ্চিমবাংলা জুড়ে গুজরাটের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছিল তাদের দলকে দিয়ে। কিন্তু পশ্চিমবাংলার মানুষ সুস্পষ্টভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে তাদের এ প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিল।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষের দিকে ব্যাপকভাবে ধর্মতাত্ত্বিক প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছিল অমিত শাহ এবং তাদের পশ্চিমবাংলার অনুসারীরা। তারা সরাসরি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদেরকে আক্রমণ করেছিল। বাংলার ক্ষেত্রে স্পষ্ট যে ছবি দাঁড়িয়ে, তা হল ধর্মতত্ত্ব পশ্চিমবাংলায় এখন পর্যন্ত কার্যকর নয়। এই মুহূর্তে ৮০টি আসনের কাছাকাছি ফলাফলের আংশিক গণনার ভিত্তিতে যা দেখানো হল তা হচ্ছে টিএমসির ২০৮ আর বিজেপির ৮০। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক কিন্তু বাস্তব সত্য বামপন্থীরা যে আব্বাস সিদ্দিকীর ঘাড়ে ভর করে পশ্চিমবাংলার মানুষকে সেই তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার গল্প ও সমাজতন্ত্রের গল্প শোনানোর চেষ্টা করেছিল তা শূন্যের কোঠায় পৌঁছাচ্ছে।
এখন বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা আর কয়েক ঘন্টা পরে হয়তো পরিস্থিতির আরো পরিবর্তন হবে। তবে দেখা যাক কী ঘটে। এই পর্যায়ে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে বিজেপি পরাজিত হতে চলেছে পশ্চিমবাংলায়। কিন্তু নন্দীগ্রামে আবার বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এখনও প্রায় ৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে আছেন। শুভেন্দু অধিকারীর কাছে নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী পিছিয়ে থাকলেও ধারণা করা হয় ১ নম্বর ব্লকে তার অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাঁটি এই আসনটিতে শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা ব্যানার্জি দুই হেভিওয়েটের লড়াই চলছে। আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বোঝা যাবে যে তৃণমূল নেত্রীর বিজয় কিভাবে ঘটে।
পরিশেষে এ কথা বলা যায়, মোদির ওড়াকান্দির মথুরা দর্শন কোনো কাজ করেনি। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে মোদি নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। বাংলাদেশ সরকার সে দিক থেকে কোন কৃপণতা দেখায়নি। মোদির ওড়াকান্দি এবং সাতক্ষীরায় দুই জায়গাতেই তাকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু মোদির সেই নির্বাচনী প্রচারণা পশ্চিমবাংলায় কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বিষয়টা তৃণমূল কংগ্রেস এখন কিভাবে নেবে আগামীতে সেটাও একটি বড় প্রশ্ন?