রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন?
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইউক্রেনে বেশ প্রস্তুতি চলছে বলে মনে হচ্ছে।
'রাশিয়া যদি এর বিশেষ সামরিক অভিযানের পূর্বঘোষিত লক্ষ্যগুলো বদলায়, তাহলে ইউক্রেন আলোচনা ও শান্তিচুক্তির জন্য প্রস্তুত,' বলেছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ।
গত ৮ জুন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি খেরসন ভ্রমণ করার পর এমন মন্তব্য করলেন রেজনিকভ।
বোধহয় জেলেনস্কি এমন সব তিতা তথ্য পেয়েছেন, যেগুলো তিনি শুনতে চাননি: ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ খুব ভালো যাচ্ছে না এবং দেশটির সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। রাশিয়ান বাহিনী অনেকগুলো ইউক্রেনীয় ট্যাংক বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এ তালিকায় আছে ফ্রান্সের এএমএক্স-১০ ট্যাংক ও তিনটি জার্মান লেপার্ড এ-৬ ট্যাংক।
ইউক্রেনের আইরিস-টি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ একটি রাডারও ধ্বংস করেছে রাশিয়া। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের আকাশে রাশিয়ার আধিপত্য আরও বেড়ে গেছে।
রাশিয়ার এ যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি বা রসদ ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। তবে এটা জানা গেছে যে, ইউক্রেনের সবচেয়ে আধুনিকায়িত ৪৭ মেকানাইজড ব্রিগেড নিজেদের ভূমি পুনর্দখল করতে বা রাশিয়ানদের পিছু হটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ ব্রিগেডটিকে ইউরোপে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ন্যাটো। এটি নাইট ভিশন, থার্মাল ইমেজিং গিয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যাডলি ফাইটিং ভেহিকলের মতো বিভিন্ন সাঁজোয়া যান, এবং হিমার্সসহ প্রচুর পরিমাণ আর্টিলারি দ্বারা সমৃদ্ধ একটি ইউনিট।
তবে ইউক্রেনের এখনো বিশাল সংখ্যক একটি বাহিনী আছে যাদেরকে দেশটি চাইলেই আক্রমণের জন্য ফ্রন্টলাইনে পাঠাতে পারবে। তবে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের পালটা আক্রমণ প্রাথমিক স্তরেই রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার আবার বিপুলসংখ্যক রিজার্ভ সেনা রয়েছে — এ সংখ্যাটা প্রায় দুই লাখ হতে পারে। রাশিয়া এসব সেনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে শুরু করেছে।
জেলেনস্কি অবশ্য খোলাখুলি রাশিয়ার কাছে কোনো সমঝোতার কথা বলতে পারবেন না। কারণ এমনটা করলে তার সঙ্গে আমেরিকা ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নিজ দেশে তিনি দুর্বল হিসেবে প্রতীয়মান হবেন।
রেজনিকভ যদি তার মন্তব্যের মাধ্যমে কোনোপ্রকার আলোচনায় বসার আগেই রাশিয়ানদেরকে তাদের অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বানকে ইঙ্গিত করেন, তাহলে সেটাকে পত্রপাঠ বিদায় করার মতো বাদ দেবে রাশিয়ানেরা। অন্যদিক রেজনিকভের মন্তব্যের বিষয়ে ক্রেমলিন থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। রেজনিকভ কি আদৌ ইউক্রেনের হয়ে আলোচনা করার কর্তৃত্ব রাখেন কি না — এ বিষয়টিও এখনো নিশ্চিত নয়।
সম্প্রতি জেলেনস্কি দুর্নীতির দায়ে রেজনিকভকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তার সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তবে সার্বিকভাবে জেলেনস্কি ও রেজনিকভের মধ্যকার সম্পর্ক এখন কঠিনই হওয়ার কথা।
রেজনিকভ কি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বাকি সদস্যের হয়েও কথা বলছেন? তিনি কি নিজে থেকেই কোনো কিছু করার চেষ্টা করছেন? রাশিয়াকে এ বিষয়গুলোও পরখ করে দেখতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শেষবার গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা হয়েছিল যখন সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ইউক্রেন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সে শাটল ডিপ্লোমেসি চালিয়েছিলেন। বেনেট দাবি করেন, তার চেষ্টা প্রায় সফল হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেলেনস্কি মার্কিন প্রশাসনের চাপে কোনো চুক্তিতে না পৌঁছেই আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসেন।
ওলেকসি রেজনিকভ যদি আদতেই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃত্ব ধারণ করেন, সেটা তাকে রাশিয়ানদের কাছে প্রমাণ করতে হবে।
কিন্তু রেজনিকভ যদি নিজে থেকেই এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন, অথবা ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন — তাহলে রাশিয়ানরা এটিকে আলোচনার পথ হিসেবে না দেখে ইউক্রেনের একতা ভাঙার আরেকটি দারুণ সুযোগ হিসেবেই দেখবে।