এপ্রিল ইজ দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থ
টিএস এলিয়ট 'দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড'-এর প্রথম পঙক্তিতেই এপ্রিলকে নির্মমতম মাস হিসেবে এমনভাবে খোদাই করেছেন যে, এপ্রিলের অন্য কোনো চিত্রকল্প আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। এলিয়টই আধুনিক মানসকে যেভাবে 'প্রোগ্রামড' করেছেন, তাতে এপ্রিল কেবলই নির্মমতা, শূন্যতা ও মোহভঙ্গের মাস হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। অবশ্য এপ্রিলের হিটওয়েভে হিট অফিসারও যে অসহায় হয়ে পড়বেন এমন কিছু তিনি বলেননি।
মধ্য এপ্রিলেই আসে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথের হাতে বৈশাখের রুদ্ররূপ শেষ পর্যন্ত কল্যাণের: 'তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক'। কিংবা 'ঝড় উঠেছে তপ্ত হাওয়ায়, মনকে সুদূর শূন্যে ধাওয়ায়/ অবগুণ্ঠন যায় যে উড়ে'। প্রকৃতির নির্মমতার মাসও এপ্রিল। আবহাওয়ার মেজাজ ধরেছে, গরম অসহ্য হয়ে উঠেছে।
বাংলায় আরও যেসব গরম তার অনেকগুলোর প্রকোপ এপ্রিলেই।
মাথা গরম আর গা গরম; এ দুইয়ের মধ্যে বিস্তর তফাত। আবার আক্ষরিক অর্থে গা গরম আর প্রতীকী অর্থে গা গরম — এ দুইয়ের মধ্যে যে তফাত তা ধারণ করতে এক অভিসন্দর্ভ যথেষ্ট নয়।
দুটো গা গরমের একটির বর্ণনা রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রসহ অনেকেই সাফল্যের সঙ্গে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের দু-চার পঙক্তি উদ্ধৃতি দোষণীয় হওয়ার নয়। 'ছুটি' গল্পের ফটিক চক্রবর্তীর কথা, স্কুলপাঠ্য হওয়ার কারণে আমার প্রজন্মের কারও ভোলার কথা নয়। দুজন পুলিশ যখন ফটিককে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামিয়ে বিশ্বম্ভর বাবুর সামনে উপস্থিত করল: 'তাহার আপাদমস্তক ভিজা, সর্বাঙ্গে কাদা, মুখ চক্ষু লোহিতবর্ণ, থরথর করিয়া কাঁপিতেছে।'
'বালকের জ্বর অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিল। সমস্ত রাত্রি প্রলাপ বকিতে লাগিল। বিশ্বম্ভর বাবু চিকিৎসক লইয়া আসিলেন। ফটিক তাহার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উন্মীলিত করিয়া কড়িকাঠের দিকে হতবুদ্ধিভাবে তাকাইয়া কহিল, "মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি?'"
গরমে গা পুড়িয়া যাইতেছে, এ বর্ণনা বিখ্যাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখোপাধ্যায়দের রচনায় অঢেল। কিন্তু দ্বিতীয় গা গরম নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কিঞ্চিৎ লেখালেখি করে মামলা খেয়েছেন দুই বসু (বুদ্ধদেব আর সমরেশ)। যুগটা তখন 'ক্রসফায়ার' আর 'এনকাউন্টার'-এর নয় বলে বেঁচে গেছেন দুজনেই। এ ঘরানার গা গরম নিয়ে যত গরম গরম বই লিখিত হয়েছে, তার প্রায় সবই কোনো না কোনো সময়, কোনো না কোনো দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে (দ্য ওয়েল অব লোনলিনেস, লেডি চ্যাটার্জিস লাভার, ট্রপিক অব ক্যানসার, ললিতা, কামসূত্র, আর্স অ্যামাটোরিয়া, দ্য জয় অব সেক্স দীর্ঘ তালিকার মাত্র কয়েকটি। এমনকি কবিরাও সুযোগ ছাড়েননি — ওভিদ, কালিদাস, স্যাপো, পেত্রার্ক তো রয়েছেনই, অ্যালেন গিন্সবার্গও রেহাই দেননি)।
আমার বিশেষ প্রিয় 'গরম' কবিতাটি। এটি ঋতুবিষয়ক, ঋতু শুনেই গরম হয়ে যাবেন না। ষড়ঋতুর একটি গ্রীষ্ম নিয়েই অমন কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে আসেনি। কাজী নজরুলের হাতেও না। এসেছে রামগড়ুরদের জাতীয় পিতা সুকুমার রায়ের হাতে 'গ্রীষ্ম' কিংবা 'সর্বনেশে গ্রীষ্ম' নামে খাই খাই কাব্যগ্রন্থে।
সর্বনেশে গ্রীষ্ম এসে বর্ষশেষে রুদ্রবেশে
আপন ঝোঁকে বিষম রোখে আগুন ফোঁকে ধরার চোখে।
তাপিয়ে গগন কাঁপিয়ে ভুবন মাতল তপন নাচল পবন।
রৌদ্র ঝলে আকাশতলে অগ্নি জ্বলে জলে স্থলে।
ফেলছে আকাশ তপ্ত নিশ্বাস ছুটছে বাতাস ঝলসিয়ে ঘাস,
ফুলের বিতান শুকনো শ্মশান যায় বুঝি প্রাণ হায় ভগবান।
দারুণ তৃষায় ফিরছে সবায় জল নাহি পায় হায় কি উপায়,
তাপের চোটে কথা না ফোটে হাঁপিয়ে ওঠে ঘর্ম ছোটে।
বৈশাখী ঝড় বাধায় রগড় করে ধড়ফড় ধরার পাঁজর,
দশ দিক হয় ঘোর ধূলিময় জাগে মহাভয় হেরি সে প্রলয়।
করি তোলপাড় বাগান বাদাড় ওঠে বারবার ঘন হুংকার
শুনি নিয়তই থাকি থাকি ওই থাকে হৈহৈ মাভৈঃ মাভৈঃ।
তারপরও ঋতুর ঘোর যদি না কেটে থাকে, তাহলে লুসিল ক্লিফটনের 'ইন প্রেইজ অব মেনস্ট্রুয়েশন' কবিতাটি পাঠ করে ঘোর কাটাতে পারেন: ইফ দেয়ার ইজ আ রিভার/ মোর বিউটিফুল দ্যান দিস/ রিটার্নিং ইচ মান্থ/ টু দ্য সেইম ডেলটা? ইফ দেয়ার ইজ...'
ইউরোপের ভদ্রজন কথোপকথন শুরু করেন আবহাওয়া দিয়ে। বিলেতে সাড়ে সাতশ দিনসহ অনেক বই এ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু ইউরোপেরই সন্তান অস্কার ওয়াইল্ড (বাঘের ঘরে ঘোগ) তুড়ি মেরে নাকচ করে দিলেন ইউরোপের কথোপকথন সংস্কৃতি। বললেন, আবহাওয়া নিয়ে কথোপকথন হচ্ছে কল্পনাশক্তিহীন মানুষের শেষ আশ্রয়।
অস্কার ওয়াইল্ড এমন একটি প্রকৃতি নির্বান্ধব উদ্ধৃতি দেওয়ার প্রেরণা সম্ভবত স্যামুয়েল জনসনের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। স্যামুুয়েল জনসনের জীবনীকার বসওয়েল লিখেছেন, ১৭৭৫ সালের ৭ এপ্রিল জনসন সাহেব গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলেছেন তা হচ্ছে: দেশপ্রেম হলো বদমাশদের শেষ আশ্রয়।
কেউ কেউ কথাটি নেপোলিয়নের বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন, নেপোলিয়নের দেশিরা এটা মানতে রাজি নন। দ্য গল বলেছেন, ইংরেজরা মনে করে দেশপ্রেম হচ্ছে তাদেরও বাপদাদার সম্পত্তি।
ইংরেজের সাবেক ঔপনিবেশ হিসেবে দুটোর গরমেই আমাদের প্রাণান্তর অবস্থা; দেশপ্রেমিক শুনলে ভাবি বদমাশ নয়তো? বদমাশ শুনলে মাথা নুইয়ে সম্মান জানাই — দেশপ্রেমিক নয়তো?
ব্রিটেন তো এমনি ঠান্ডার দেশ। গরম বড্ড দুর্লভ। তবুও ব্রিটিশরা নাকি চান তাদের এমপিরা যেন সংসদেই থাকেন। বাইরে বেরোলে তাদের গরমে নাগরিকদের গায়ে আঁচ লাগে। সংসদ ভবনের ভেতর গরম বাতাস বরফ হয়ে যায় — কংগ্রেসনাল হট এয়ার ফ্রিজেস।
ব্রিটিশদের গরম হওয়ার কথা আর একটু বলে নিই। ইউরোপের অন্যান্য দেশে মানুষের যৌনজীবন আছে, আর ইংরেজদের আছে হট-ওয়াটার বোটল। গরম পানির বোতল।
আমাদের কারও কারও প্রিয় লেখকদের একজন বিখ্যাত সরদারজি খুশবন্ত সিং 'ডার্টি ওল্ডম্যান' হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে এই বদনাম কামাই করেছেন (জন্ম পাকিস্তানের শিয়ালকোট, দিল্লিতে বসবাস, বাংলাদেশে এসে বিমানের ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেসের অঢেল প্রশংসা করেছেন)। তার দুশমন শ্রেণির লেখকদের একজন হলফ করে বলেছেন, খুশবন্ত সিং নারীর গরম (কিংবা উষ্ণতা) শুষে নিতে পারেননি, যেটুকু পেরেছেন তা হট ওয়াটার ব্যাগ থেকে।
গরম কবিতা
মাতিলদা এবং চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরির মতো বেস্টসেলার কিশোর উপন্যাসের লেখক রোয়াল্ড ডাল কবিতাও লিখতেন। তার ছয় পঙক্তির বিখ্যাত 'হট অ্যান্ড কোল্ড' কবিতাটি এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
গরম ও ঠান্ডা
আমার মা চিনতেন এমন একজন নারী
ভেতরে এলেন এবং পরনের সব কাপড় খুলে ফেললেন।
বললাম আমি, বয়স আমার তেমন বেশি নয়
'হায় এ কী ঈশ্বর! নিশ্চয়ই আপনার ঠান্ডা লাগছে।'
চিৎকার করে তিনি বললেন, 'না, না, মোটেও তা নয়।
আমি শয়তানের মতো গরম হয়ে উঠেছি।'
কবিতার সমঝদারগণ টেড হিউজসের 'দ্য ওয়ার্ম অ্যান্ড দ্য কোল্ড' পুনঃপাঠ করতে পারেন। তারুণ্যের গরম আর মধ্যজীবনের গরম যে এক নয় এ ব্যাখ্যা কবির চেয়ে ভালো আর কে দেবেন। সুসান নোয়েস অ্যান্ডারসনের কবিতা 'অ্যাজ হ্যাপেনস'-এ হট ফ্লাশ:
আমরা যখন তরুণ ছিলাম, তোমাকে দেখলে
লাল হয়ে যেতাম
তারপর গরম এবং ঠান্ডা এবং তারপর মন্ড
আমি এখনো তা-ই অনুভব করি, এটা সত্য
কিন্তু এটা কি আমার মেনোপোজ না তুমি?
এক হাজার একশ বছর আগের গরম কবিতা
কোমল হাতে আমি সাদা পালকের পাখা নাড়ি
শার্ট খোলা, বসি সবুজ বনে
আমার ক্যাপ খুলে নিই, ঝুলিয়ে দিই
বেরিয়ে থাকা একটি পাথরে;
পাইন বন থেকে বেরিয়ে আসা বাতাস
আমার খোলা মাথায় চুইয়ে পড়ে।
উদ্ধৃত এ কবিতাটি লিখেছেন চীনদেশীয় কবি লি পো। ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম নেওয়া এ কবির কবিতায় পাওয়া যায় তার সময়ের গরমের চালচিত্র।
মার্শাল ম্যাকলুহান তার বিখ্যাত 'মিডিয়া হট অ্যান্ড কোল্ড' রচনাটি প্রকাশ করেন নতুন সহস্রাব্দের সূচনাতেই। তার বইটির নাম আন্ডারস্ট্যান্ডিং মিডিয়া: দ্য এক্সটেনশন অব ম্যান। তিনি হাইডেফিনিশন ও লো-ডেফিনিশনের ব্যাখ্যা দিয়ে সিনেমাকে বলেছেন হট মিডিয়া, ইন্টারনেটকে কোল্ড। আবার এ-ও বলেছেন, প্রযুক্তির দৌড় গরম ও ঠান্ডার সীমান্ত ভেঙে দেয়। অন্তত ইন্টারনেটযুগে বাস্তবের শরীর কোণঠাসা হয়ে গেছে, সমস্ত উত্তাপ শুষে নিয়েছে ভার্চুয়াল নারী ও ভার্চুয়াল পুরুষ। এবারের বাংলাদেশে গরমটা একেবারেই দুর্বিষহ। শরীরের গরম উবে যাওয়ার পর প্রকৃতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে চেয়েছে।
গরম মশলা কতটা গরম হবে নির্ভর করবে উপাদানগুলোর মিশ্রণের অনুপাতের ওপর। গরম মশলার উপাদান: গোল মরিচ, সাদা মরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জৈত্রী, কালো এলাচ, সবুজ এলাচ, তেজপাতা, জিরা ও ধনে।
তপ্ত প্রবাহের গান
হিটওয়েভ যখন মানুষ ও প্রকৃতিকে বিপন্ন করে তুলল ষাটের দশকে (১৯৬৩), 'হিটওয়েভ' গান দিয়ে লিন্ডা রোনস্টাড পশ্চিম মাতিয়ে দিলেন। হিটওয়েভের মানেই বদলে গেল। অথচ তখনো অরণ্যে জ্বলছে আগুন। সেই গানটি বাংলায় ভাষান্তর করলে কেমন দাঁড়াতে পারে দেখুন:
যখন আমি তোমার সাথে
আমার ভেতর কিছু একটা জ্বলতে শুরু করে
আমি পূর্ণ হয়ে উঠি কামনায়
একি আমার ভেতরের শয়তান
নাকি ভালোবাসা এমনই হওয়ার কথা?
তপ্ত প্রবাহের মতোই
আমার হৃদয়ে জ্বলছে
না কেঁদে পারছি না
আমাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করছে।
যখন সে আমার নাম ধরে ডাকে
কোমল, লঘু, মিষ্টি, সুরেলা, আমার কেমন যে লাগে
বেশ তো আমি ওই জ্বলন্ত সিসা অনুভব করি
উচ্চরক্তচাপ কি আমাকে পেয়ে বসেছে
নাকি ভালোবাসা এমনই হওয়ার কথা?
(দ্রষ্টব্য: এটি কিন্তু নারীর গান!)
গোলার গরম
প্রথম মহাযুদ্ধের গরম দিনগুলোর একদিন। এমডেন নামের একটি জার্মান যুদ্ধজাহাজ কয়েক দিন বঙ্গোপসাগরে থেকে ভারি উৎপাত করেছে এবং যথেষ্ট উত্তাপ সঞ্চারিত করেছে। এরও সাক্ষী সুকুমার রায়:
'সেই জাহাজের একটা গোলা মাদ্রাজের একটা প্রকাণ্ড কেরোসিনের চৌবাচ্চায় পড়িয়া সমুদ্রের ধারে যে অগ্নিকাণ্ড লাগাইয়াছিল "তামাসা" হিসাবে সে দৃশ্য নাকি অতি চমৎকার হইয়াছিল। আর কেরোসিনের জন্ম যেখানে–সেখানে ব্যবসার জন্য খনি খুঁড়িয়া, কুয়া বসাইয়া, কেরোসিনের হ্রদ বিল ও কেরোসিনের ফোয়ারার সৃষ্টি করা হয়, সেখানে যখন আগুন ধরিয়া যায় আর লক্ষ লক্ষ মণ কেরোসিন ধূ ধূ করিয়া জ্বলিতে থাকে তখন ব্যাপারটি যে কেমন হয় তাহার আর বর্ণনা হয় না। পেটুক আগুন তখন মনের মতো খোরাক পাইয়া উল্লাসে লক্ষ লক্ষ জিভ মেলিয়া ধোয়ার হুঙ্কার ছাড়িয়া স্বর্গ মর্ত্য গ্রাস করিতে চায়। তাহার কাছে লঙ্কাকান্ডই বা কি আর খান্ডব দহনই বা লাগে কোথায়।'
দারুণ অগ্নিবাণে রে
যে বছর রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে সে বছরের একটি দিন ১০ জুলাই ১৯১৩ ছিল সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত দিন। রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ কিংবা শান্তিনিকেতনে নয়, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে, রেকর্ড করা তাপমাত্রা ৫৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন দগ্ধদিনের গান:
দারুণ অগ্নিবাণে রে
হৃদয় তৃষ্ণায় হানে রে
রজনী নিদ্রাহীন, দীর্ঘ দগ্ধদিন
আরাম নাহি যে জানে রে।
গরমে কী হয় — শিশু ভাষ্য
মুরগি যে ডিমটা পাড়ল ওটা একেবারে ওমলেট হয়ে এসেছে। কেউ কেউ বলছে হার্ড বয়েলড এগ।
গরুর ওলান থেকে বেরোচ্ছে এভাপোরেটেড মিল্ক।
গরু আর মুরগি কাছাকাছি থাকলে আপনি পাচ্ছেন ইনস্ট্যান্ট পুডিং।
নিতান্ত শৈশবে চা গরমের দিকে আমার টান না থাকলেও আমার বাবার ছিল। আমার পছন্দ ছিল ঘটি গরম চানাচুর আর হট পেটিস। টিনের বাক্সের নিচের স্তরে কয়লার আগুন এবং ওপরের স্তরগুলোতে চার আনা, দুই আনা এবং এক আনা দামের হট পেটিস। এই পেটিসওয়ালাকে আমার মনে হতো অনুসরণযোগ্য অনুকরণযোগ্য প্রিয় মানুষ। গরম পেটিসওয়ালার পেছন পেছন ঢাকার রাস্তায় অনেক হেঁটেছি, খেয়েছি খুব কমই। আমার গরম-জ্ঞান হট পেটিস পর্যন্তই ছিল। জ্ঞান সমুদ্রের বেলাভূমিতে নুড়ি কুড়াতে যেদিন আইনস্টাইন হয়ে উঠলাম, জানলাম ঝাল ইংরেজি হট, গোপনীয় কাজও হট, সুন্দর ও আকর্ষণীয় নারীও হট। আমিও পান্ডিত্যের ভাব নিয়ে বললাম জ্ঞানের অসীম সমুদ্র এখনো আমার অজানা রয়ে গেছে।
গোপন যে হট তার একটা ব্যাখ্যা দিতে চাই। ঢাকা শহরের যে পাড়াটিতে আমার জন্ম, তার নাম রাজাবাজার। আমার প্রাইমারি স্কুলজীবনে এর একপ্রান্তে থাকতেন কবরী, অন্য প্রান্তে শাবানা। আমরা কজন তাদের বাড়ির আশপাশে গোয়েন্দা সফর করে জানার চেষ্টা করেছি তাদের সঙ্গে কার কার হটলাইন।
আশির দশকে একজন নারী এমপি, সংসদে তিরিশ সেট অলংকার হিসেবে সমাদৃত বাছাইকৃত প্রতিনিধির একজন, আমার প্রতি অতিশয় স্নেহপরায়ণ হয়ে বলেছিলেন, দেশের প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের সঙ্গে তার হটলাইন। অবশ্য এ কথা তিনি এপ্রিলে বলেননি, বলেছিলেন ডিসেম্বরে। এমনিতেই সাধারণ মানুষেরও জন্যও ডিসেম্বর উষ্ণতা খোঁজার মাস।
এপ্রিলে ইউরোপও উষ্ণতার খোঁজে বেরোয়। প্রিয় গন্তব্য: ইতালির সিসিলি, ক্যানারি আইল্যান্ড, সাইপ্রাসের নিকোসিয়া, স্পেনের গ্র্যান কানারিয়া, পর্তুগালের আলগার্ভ, গ্রিসের ক্রিটে, মাল্টা, আমস্টারডামের মতো জায়গা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।