সন্তানদের জন্য খেলনা কিনবেন কি না
সন্তানদের খুশি করতে খেলনা কেনা বেশিরভাগ বাবা-মায়ের জন্য স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয়। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় প্রশ্ন জাগে: খেলনা কেনার সঠিক সীমা কোথায়?
আমরা কি সন্তানদের সব চাহিদা পূরণ করতে পারি, নাকি খেলনা কেনার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া উচিত? এ নিবন্ধে আমরা সন্তানদের খেলনা কেনার আর্থিক ও মানসিক দিক নিয়ে আলোচনা করব এবং কীভাবে ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তা তুলে ধরব।
আজকের শিশুরা এক উচ্চাভিলাষী সমাজে বড় হচ্ছে, যেখানে বিজ্ঞাপন ও ইন্টারনেট তাদের নতুন নতুন খেলনার প্রতি আকৃষ্ট করছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এর এক গবেষণায় (২০১৮) বলা হয়েছে, সন্তানের খেলনার প্রতি আগ্রহের মূল কারণ বিজ্ঞাপনের প্রভাব এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর মানসিক চাহিদা।
কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক সময় খেলনার মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে সেই খেলনা বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসই তাদের একমাত্র মনোযোগের উৎস হয়ে যায়।
অনেক বাবা-মা মনে করেন, বেশি খেলনা দিলে সন্তানরা খুশি হবে। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান-এর (২০২০) গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি খেলনা থাকলেও শিশুদের মধ্যে মানসিক তৃপ্তি আসে না। বরং তারা আরও নতুন নতুন খেলনা চাওয়ার প্রবণতা দেখায়।
খেলনার সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে বাবা-মায়ের সময় এবং মনোযোগ পেলে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। তাই সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য খেলনার পাশাপাশি মানসিক সম্পর্ক ও সময় দেওয়াটাই বেশি প্রয়োজন।
খেলনা কিনতে অবশ্যই হবে, তবে ভাবতে হবে কতটা এবং কেমন খেলনা কেনা উচিত। আন্তর্জাতিক মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থা-এর এক প্রতিবেদনে (২০১৯) বলা হয়েছে, "সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য সীমিত ও সৃজনশীল খেলনা নির্বাচন সবচেয়ে কার্যকর।"
খেলনা কেনার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, যাতে সন্তানদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হয় এবং তারা অযথা চাহিদা বা প্রভাবিত হয়ে নতুন খেলনার পেছনে ছুটতে না থাকে।
প্রথমে, সন্তানের জন্য খেলনা কেনার আগে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে প্রতিটি ক্রয়ের একটি সীমা আছে। যদি আপনি সন্তানকে শপিংয়ে নিয়ে যান, তবে তাকে আগে থেকেই নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে খেলনা কিনতে শেখানো উচিত। এতে শিশু খরচের মূল্য সম্পর্কে সচেতন হবে এবং ক্রয় সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করবে।
গবেষণা বলছে, এভাবে আর্থিক শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তোলা শিশুদের ভবিষ্যতে বাজেট পরিচালনায় সহায়ক হয়।
অনেক অভিভাবক মনে করেন, খেলনা কিনে দিলে সন্তান খুশি থাকবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিশুরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে আরও বেশি সময় এবং মানসিক সমর্থন চায়। ন্যাশনাল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট-এর জরিপে (২০১৭) বলা হয়েছে, "শিশুরা খেলনার চেয়ে বাবা-মায়ের মনোযোগ বেশি আশা করে।"
সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরিহার্য। সময় কাটানো, সৃজনশীল কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়া এবং তাদের আবেগের বিকাশের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
খেলনা কেনার আগে সন্তানের আসল চাহিদা মূল্যায়ন করা উচিত এবং শিক্ষামূলক ও সৃজনশীল খেলনা কেনা উচিত যা শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক হতে পারে।
সবশেষে, সন্তানের খেলনা চাহিদা এবং আর্থিক সীমার মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি। সব চাহিদা পূরণ করা বা খেলনা দিয়ে সময় ভরিয়ে দেওয়া কখনোই সমাধান নয়।
এর পরিবর্তে, আর্থিক সচেতনতা এবং সন্তানের মানসিক বিকাশের দিকে নজর দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সাইফুল হোসেন: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।