এ ১০টি গোপন তথ্য কখনোই প্রকাশ করবেন না
প্রতিদিন আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলো প্রকাশ করা জরুরি নয়। কিছু তথ্য, অভ্যাস, বা ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ করলে তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আমরা সবাই আমাদের জীবনে সফল হতে চাই, কিন্তু সফলতার পথে কিছু ভুল পদক্ষেপ সেই পথকে আরও কষ্টসাধ্য করে তুলতে পারে। এখানে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হল, যা কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত নয়, কারণ এগুলো আমাদের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।
১.
আর্থিক তথ্যের গোপনীয়তা। আপনার আর্থিক অবস্থা যেমন সঞ্চয়পত্র, ঋণ, বিনিয়োগ, বা সম্পদের পরিমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন না। বিশেষ করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে আপনার অংশগ্রহণ জনসমক্ষে না আনা ভালো।
আর্থিক বিষয়গুলো প্রকাশ করলে তা পরবর্তীতে আপনার সামাজিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। এ তথ্য ফাঁস হওয়া মানে অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অযথা উদ্বেগ তৈরি হওয়া এবং প্রতিযোগীদের হাতে আপনার দুর্বল দিক তুলে দেওয়া।
২.
অতীতের বিব্রতকর ঘটনা বা ছবি। আমাদের জীবনের এমন কিছু ঘটনা বা ছবি থাকতে পারে যা অতীতে আমাদের জন্য বিব্রতকর ছিল। এ ধরনের ঘটনা বা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা মানে নিজের জীবনের দুর্বলতাকে প্রকাশ করা।
অন্যরা তা ভবিষ্যতে ব্যবহার করে আমাদের বিপদে ফেলতে পারে। ব্যক্তিগত ছবি বা ঘটনা গোপন রাখা একান্তই নিজের দায়িত্ব, এবং এসব তথ্য ফাঁস হওয়া মানে আপনার ভবিষ্যতের সফলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া।
৩.
ব্যক্তিগত সময়ের ব্যবহারের তথ্য। আপনি ফাঁকা সময়ে কি করেন, তা জনসমক্ষে শেয়ার করার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি মানুষ তার ব্যক্তিগত সময়ের একটি নির্দিষ্ট ব্যবহার করে, তা বই পড়া, সিনেমা দেখা, বা বিশ্রাম নেওয়া হোক।
এ বিষয়গুলো ব্যক্তিগত হওয়াই শ্রেয়, কারণ এগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করলে তা অন্যের ভুল ব্যাখ্যার শিকার হতে পারে এবং আপনার পেশাদার ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
৪.
ব্যক্তিগত ডিভাইসের নিরাপত্তা। আপনার মোবাইল, ল্যাপটপ, বা অন্য কোনো ডিভাইসে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখুন। আপনার ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট, ছবি বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেন অন্য কেউ সহজে অ্যাক্সেস করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ডিভাইসের নিরাপত্তা বজায় রাখার মাধ্যমে আপনি নিজেকে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন।
৫.
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য। আপনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সমস্যা বা মেডিক্যাল তথ্য ফাঁস করা উচিত নয়।
যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার কথা জনসমক্ষে জানালে অনেক সময় কর্মজীবন বা পেশাগত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এসব তথ্য শুধু নিকটজনের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন তথ্য শেয়ার করার আগে সচেতন থাকুন।
৬.
ব্যক্তিগত সম্পর্কের গোপনীয়তা। আপনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কোনো মুহূর্তের ছবি বা ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের ছবি বা ঘটনা শেয়ার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু এটি ভবিষ্যতে আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ব্যক্তিগত সম্পর্কের কিছু মুহূর্ত একান্ত ব্যক্তিগত থাকাই ভালো। সপ্তমত, গোপন সম্পর্ক বা সংশ্লিষ্টতা। কোনো ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতা যদি গোপন রাখা প্রয়োজন হয়, তবে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন না।
৭.
বিভিন্ন সময়ে আমরা আর্থিক বা সামাজিক লাভের জন্য গোপন সম্পর্ক বা অংশীদারিত্বে যাই, কিন্তু সেগুলো সবার কাছে উন্মুক্ত করা আমাদের ক্ষতি করতে পারে। সংযম বজায় রেখে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক পরিচালনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৮.
ব্যক্তিগত মতামত। ধর্ম, রাজনীতি, বা বিশেষ কোনো ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মতামত জনসমক্ষে প্রকাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমাদের অনেকেই ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের কারণে সামাজিক ও পেশাগত জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মতামত প্রকাশ করা যেমন আমাদের অধিকার, তেমনই কিছু বিষয় ব্যক্তিগত রাখার মধ্যেও বুদ্ধিমত্তা রয়েছে।
৯.
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আপনি পরবর্তীতে কি করবেন তা সবার সামনে প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।
চাকরি পরিবর্তন, নতুন ব্যবসা শুরু, বা ব্যক্তিগত জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা বেশি লোকের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। অতিরিক্ত প্রকাশ করলে প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে এবং আপনার পরিকল্পনা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
১০.
অযথা কথা বলা থেকে বিরত থাকা। আমাদের জীবনে অনেক সময় আমরা এমন কথা বলে ফেলি, যা না বললেও চলতো। অযথা কথা বলার মাধ্যমে আমরা নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করি, যা ভবিষ্যতে আমাদের ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।
আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সংযম থাকা উচিত এবং মুখের কথা সংরক্ষণ করা উচিত। জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য গোপন রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি পদক্ষেপে সংযম এবং সচেতনতা আমাদের সাফল্যের পথকে বাধাহীন করে তুলবে।
সাইফুল হোসেন: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।