ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে কি যুদ্ধ বাধতে যাচ্ছে?
অবশেষে ভারত তার ৫০ বছরের বন্ধুত্বকে ধরে রাখার চেষ্টা করলো। কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলনে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে সেখানে রাশিয়া ও ইউক্রেন বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বর্তমানে ইউরোপের ২৮ দেশের সমর্থন তার পক্ষে সংহত করতে পেরেছে । সেদিকে দীর্ঘদিনের রাশিয়ার বন্ধু ভারতকে সরাসরি দলে নিতে পারেনি।
যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়ার নামের কোনো উল্লেখ নেই। কোয়াড শুধু দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলনির্ভর একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা । সরবরাহ ব্যবস্থা পাইরেসি ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে বক্তব্য রেখেছে এতে সুস্পষ্ট হয় যে এই বক্তব্য চীন কে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে বলা যায়। যদিও সেই বক্তব্যে চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে ২৮টি ইউরোপীয় দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তারা যদি এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে তাতে রাশিয়াকেও যেমন ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তেমনি ইউরোপীয় দেশগুলোরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
সেই ক্ষতির মাত্রা কতদূর প্রসারিত হবে তা এখনও বোঝা মুশকিল। সামরিক শক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরস্পরের কাছাকাছি পারমাণবিক শক্তির কথা বাদই দিলাম । ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান শক্তি সবদিক থেকেই রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। রাশিয়ান নির্মিত যুদ্ধবিমান মিগ৪১ পৃথিবীর কাছে অতটা ব্যাপক পরিচিত নয়। পোল্যান্ডের বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার এফ-১৫ বিমান পাঠিয়েছে। এফ-৩৫ বিমানবহর এখনো নির্দিষ্ট বিমানঘাঁটিগুলোতেই রয়েছে। পোল্যান্ডের ঘাঁটিতে মার্কিনদের পক্ষ থেকে সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ইউক্রেনের বর্ডারে কয়েক হাজার রাশিয়ান । ইউক্রেন থেকে মার্কিন নাগরিকদের প্রত্যাহারের ঘোষণা এসেছে গতকাল, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার আলোচনা ভেঙে গেছে কোন সমঝোতা ছাড়া।
তারপরও প্রত্যাশা করা যেতে পারে বিশ্ব অর্থনীতির স্বার্থে এই যুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নেবে না । যদিও মার্কিনিরা সবসময় যুদ্ধকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। যুদ্ধে জেতা অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তার প্রমাণ অতীতেও বহুবার পাওয়া গেছে । কিন্তু ইউক্রেন নিয়ে যদি কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাহলে রাশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রাথমিকভাবে ইউরোপের অনেকগুলো দেশ রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। ইউরোপের প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গেও তাদের এমন-ই একটি গ্যাস-চুক্তি আছে। কিন্তু, সবকিছুর পরও যুদ্ধ কি অনিবার্য ! এই মুহূর্তে তা মনে হচ্ছে না, আরো দু'একদিন না গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে না।
আন্তর্জাতিক নানা গণমাধ্যম যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করছে, শেষ পর্যন্ত দেখা যাক যুদ্ধটা আসলে হয় কিনা। ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার ইতিহাস একটি দীর্ঘ ইতিহাস, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কিংবা তারপরের বহুকাল ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফলভাবে একটি সংঘাতের রাস্তায় নিয়ে গেছে । আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে আসলেই সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করতে পারছে কিনা?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনীতির স্বার্থে ইউরোপের বুকে আরেকটি যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিনা তাও পরিষ্কার হবে । যদিও জার্মান এই যুদ্ধের বিষয়ে খুব আগ্রহী ভূমিকা এখনো রাখেনি। জার্মান নৌবাহিনীর প্রধানকে কয়েকদিন আগে বরখাস্ত করা হয়েছে পুতিনের পক্ষে মন্তব্য করার দায়ে । তারপরও আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর মার্কিন নীতির পক্ষে দাঁড়িয়ে যুদ্ধকে সমর্থন করবে। যে ২৮টি দেশ নিয়ে ন্যাটো বর্তমানে চলছে তার অন্যতম দেশ পোল্যান্ড যে বহুদিন যাবৎ ধর্মীয় মৌলবাদের দিকে হাঁটছে, নানান বিষয়ে তাদের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে মতান্তর ঘটেছে। ইউরোপের দু-একটি দেশের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন সমর্থন নিয়ে ইউক্রেনের বিরোধী অবস্থানের দিকে। সে কারণে যুদ্ধের আশঙ্কা হয়তো সঠিক হবে না।