অচিরেই ঢাকার আকাশ ‘বার্ডম্যান’ বা আদম পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠবে!
বিবর্তন, একটি চলমান বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। পরিবেশের সাথে প্রাণীদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার এই প্রক্রিয়ার সময়কাল যেমন কয়েক মিলিয়ন বছর হতে পারে, তেমনি হতে পারে মাত্র কয়েক বছর।
সামুদ্রিক প্রাণীদের কথাই ধরা যাক। সমুদ্রের যেসব প্রাণীদের এখন তীরে উঠে আসতে দেখা যায় তা কিন্তু একদিনে হয়নি। কয়েক মিলিয়ন বছর সময় লেগেছে তাদের এটি রপ্ত করতে। অন্যদিকে, স্যাপিয়েনদের গাছে আরোহণ করা এবং স্থলবাসী হয়ে উঠতে এর থেকে তুলনামূলক কম সময়ই লেগেছে।
তবে, কিছু প্রাণীর বিবর্তনে এর চেয়েও কম সময় লাগতে দেখা গেছে; এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য নরওয়ের ক্লিফ সোয়ালো পাখি। পোকামাকড় খাওয়ার জন্য রাস্তার পাশের খাড়া অংশ থেকে উড়াল দেওয়ার সময় এসব পাখি প্রায়ই রাস্তার যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আঘাত পেত এবং এতে বেশিরভাগ পাখিই মারা যেত।
একদিন হঠাৎই দেখা গেল, সোয়ালো পাখি আর মারা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখতে পান, পাখিদের মধ্যে খুব দ্রুত বিবর্তন ঘটেছে। ডানায় পরিবর্তন ঘটায় রাস্তার কাছ থেকে পোকামাকড় ধরার প্রয়োজন পড়ে না তাদের আর।
অর্থাৎ, পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য ধীর প্রক্রিয়ার পরিবর্তে, ক্লিফ সোয়ালো পাখির বিবর্তন ঘটেছে স্বল্প সময়ের মধ্যেই।
কিন্তু কেনই বা আমি এসব বিবর্তনীয় প্রমাণাদি নিয়ে বলছি? এর কারণ হলো, ঢাকা শহরে এমন কিছু ঘটছে, যা অচিরেই মানুষের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। এমন কিছু, যা মানুষের বিবর্তন এবং ইতিহাসের গতিপথও বদলে দেবে।
আমরা দেখেছি, গত ১০ বছরে চলাচলের জন্য ঢাকা একটি অসহনীয় শহরে পরিণত হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার গাড়ির কারণে রাস্তায় দিনভর আটকে থাকার মতো দুর্ভোগ নিয়ে চলছে এ শহরের বাসিন্দারা।
লোকেরা বাইরে যাওয়াকে প্রতিনিয়ত অভিশাপ দিলেও তাদের নিজেদের বাইরে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
গ্রিডলকড এই শহরে চলতে না পারা মানুষের বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমেই মনে হয়- ইশ! তাদেরও যদি পাখির মতো ডানা থাকতো!
একদল জীব যখন তাদের জীবনকে উন্নত করার জন্য এত তীব্রভাবে কিছু চায়, তখনই বিবর্তন ঘটে।
ঢাকাইয়াদের পাখির মতো ডানার এই তীব্র ইচ্ছা থাকায় আমি নিশ্চিত যে তাদের মধ্যে একটা বিবর্তন ঘটছে। এখনই তাদের ডানা গজানো এবং উড়তে শুরু করার উপযুক্ত সময়।
এ কথা হাস্যকর শোনালেও এমনটিই হতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে।
এমনকি ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্সও ঢাকা থেকে মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। তারা এও বলেছে, মানুষের জন্য সামনে একটি বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে, তবে সেটি আসলে কী তা তারা প্রকাশ করেনি। কিন্তু আপনি সহজেই তা ধারণা করতে পারছেন। কী, পারছেন না?
আমি নিশ্চিত, তারা ঢাকাইয়াদের মধ্যে ডানা গজানোর লক্ষণ খুঁজে পেয়েছে। অচিরেই ঢাকার আকাশ 'বার্ডম্যান' বা আদম পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠবে; নিজেদের আমরা এই নামে ডাকতেই পারি।
প্রথমে তারা চড়ুই পাখির মত কম দূরত্বে ওড়ার ক্ষমতা গড়ে তুলবে, যাতে শুধুমাত্র এই শহরের উপর দিয়ে পাড়ি দেওয়া যায়।
কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে, রাস্তার অচলাবস্থা শুধু এই শহরেই নয়, চলছে ঢাকার বাইরের মহাসড়কেও। আমরা প্রায়ই শুনি, মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা মহাসড়কে আটকে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কথাই। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম যেতে আগে ৯ থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগতো। এরপর রাস্তা প্রশস্ত করা হয়, যোগ করা হয় আরও লেন। কিন্তু এখনও এই পথ পাড়ি দিতে সেই ৮ থেকে ৯ ঘণ্টাই লেগে যায়।
তাই এখন মানুষ চায় শুধু রাজধানীতে নয়, বরং এক শহর থেকে আরেক শহরেও উড়ে যেতে। আশা করা যাচ্ছে তারা শীঘ্রই চিল বা ঈগলের মতো ওড়ার ক্ষমতা অর্জন করবে।
আদম পাখিতে বিবর্তন আদতে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে। এতে করে আমাদের তেমন একটা ব্যয়বহুল রাস্তার প্রয়োজন হবেনা এবং উদ্বৃত্ত সেই অর্থ আমরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার খাতে কাজে লাগাতে পারবো।
তাহলে শীঘ্রই হয়তো ধনী দেশের খাতায় নাম লেখাতে পারবো আমরা।
- ইংরেজি থেকে অনূদিত
- মূল লেখা: Here cometh the birdmen