কোন পক্ষকেই ঢালাওভাবে সমর্থন করা উচিত হবে না
জাতিসংঘসহ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পারস্পারিক বিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কোন একটা পক্ষকে ঢালাওভাবে সমর্থন না করে বাংলাদেশের উচিত হবে কেস বাই কেস পযালোচনা করে সমর্থন দেওয়া কিংবা ভোটদান থেকে বিরত থাকা।
মানবিক ইস্যু থাকলে বাংলাদেশের ভোট দেওয়া উচিত। এর বাইরে এক পক্ষকে কোণঠাসা করার অন্যান্য প্রস্তাবে বাংলাদেশের ভোটদান থেকে বিরত থাকা উচিত। ভোটদান থেকে বিরত থাকার অর্থ হলো, কাউকে সমর্থন না করা, বা প্রস্তাবের সঙ্গে একমত না।
পশ্চিমা জোট ও রাশিয়াকে বাংলাদেশের এটা বুঝাতে হবে বলে আন্তর্জাতিক পযায়ে এভাবে ভোটাভুটির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংকট শেষ পযর্ন্ত আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজেই রাশিয়া থেকে এখনও তেল কিনছে এবং যুদ্ধ শুরুর পর এখন তেল কেনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা সারাবিশ্বের মানুষ দেখছে। বাংলাদেশকে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে মিড টার্ম নির্বাচন হওয়া পযর্ন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে। এই সংকট জিইয়ে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যদিও তার জয়লাভের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই তিনি অনেক সমালোচিত হচ্ছেন।
আমরা যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার পক্ষে সরাসরি অবস্থান না নিয়ে নিজেদের স্বার্থ দেখবো। আমরা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে এমন কিছু করবো না, যাতে তাদের কোন একটি পক্ষ বাংলাদেশের উপর রাগান্বিত হতে পারে।
ভারত এখনও নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। ইউক্রেনের বুচায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে উত্থাপিত এ ধরণের একটি প্রস্তাবে ভারত স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে। রাশিয়াও বুচায় গণহত্যা নিয়ে স্বাধীন তদন্তের আগে কোন ধরণের উপসংহারে না পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ভারতের অবস্থান রাশিয়ার বক্তব্যকেই সমর্থন করছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের পক্ষাবলম্বন নিয়ে পশ্চিমারা যে ধরণের চাপ দিয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তেমন নয়। কারণ, পাকিস্তানের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন। পাকিস্তানের মিলিটারি সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছে। দেশটি সিয়াটো চুক্তি করে আফগান্তিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ কোন দেশ বা জোটের সঙ্গে পাকিস্তানের মতো ওই ধরণের কোন মিলিটারি এ্যালায়েন্সে যুক্ত হয়নি, যুক্ত হওয়া উচিতও হবে না। কারণ, কোন দেশ একবার কোন মিলিটারি এ্যালায়েন্সে যুক্ত হলে ওই জোট থেকে বের হওয়া কঠিন। বের হতে গেলে নিজ দেশের অনেক বড় ধরণের কোন ক্ষতি মেনে নিতে বাধ্য হয়। আমাদের চীন, রাশিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্র- কারও সঙ্গে মিলিটারি যাওয়া উচিত হবে না।
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বে আমাদেরকে বুদ্ধি করে চলতে হবে। সব পক্ষকেই বলতে হবে যে, আমরা তাদের সঙ্গে আছি, সবার সঙ্গেই আছি। কারও সামরিক কাঠামোর সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে চাচ্ছি না।
(অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বিশেষ প্রতিবেদক আবুল কাশেমের সাথে ফোনালাপে তিনি এসব বলেন)