১২৫ বছর আগে আজকের দিনেই ড্রাকুলা এসেছিল!
১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতেই আটলান্টার এক সাংবাদিক খবর করলেন, 'স্টোকারের পরের বইয়ের বিষয় হল ভূত'। ব্যাস! এইটুকুই। আর কিচ্ছু না। দুই মাস পরেই আব্রাহাম স্টোকার এক বিশাল টাইপ করা কাগজের বান্ডিল পৌঁছে দিলেন আর্চিবল্ড কনস্টেবলের অফিসে।
জায়গায় জায়গায় পেন দিয়ে শব্দ সংশোধন করা। প্রকাশক যে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন এই বই নিয়ে, তা বললে মিথ্যে বলা হবে। তারা স্টোকারকে এক পাউন্ডও অগ্রিম দিতে রাজি নন। চুক্তি হলো প্রথম সংস্করণে তিন হাজার কপি ছাপা হবে। প্রতি কপি বিক্রিতে লেখক পাবেন মাত্র এক শিলিং। পরে আবার দ্বিতীয় সংস্করণ হলে, তখন দেখা যাবে। চুক্তিপত্র তৈরি হতে হতে কেটে গেল একটা বছর।
১৮৯৭ সালের ২০ মার্চ ঠিক হল সেই বছরই প্রকাশ পাবে স্টোকারের নতুন উপন্যাস। নাম The Un-Dead; যার মৃত্যু নেই। কিন্তু উপন্যাসের গালি প্রুফ দেখার সময় আপন মনেই উপন্যাসের নাম পরিবর্তন করে দিলেন স্টোকার। টাইপ করা পাতার এক পাশে বড় বড় হরফে লিখলেন উপন্যাসের এক চরিত্রর নাম। এর নামেই পরিচিত হবে তার জীবনের সেরা কীর্তি। বইয়ের নাম দিলেন ড্রাকুলা।
১৮৯৭ সাল থেকে আজ অবধি একবারও আউট অফ প্রিন্ট হয় নি ব্রাম স্টোকারের 'ড্রাকুলা' বইটি। প্রকাশের দিন থেকেই পাঠককে ক্রমাগত সে এক অজানা জগতের হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে। যে জগতের কিছুটা জানা, অনেকটাই অজানা।
ট্রান্সিলভানিয়ার লোককথা, মৃতদের রাজত্ব, প্রেম, ইতিহাস, রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার, নেকড়ে, বিশালাকার বাদুড়, আচমকা প্লট টুইস্ট সব মিলিয়েমিশিয়ে এক চরম ভিক্টোরিয়ান পট বয়লার। যারা একে ভাল উপন্যাস বলতে দ্বিধাও করেন, তারাও স্বীকার করতে বাধ্য এত ভাল গল্প খুব কমই বলা হয়েছে।
ভয়ের কাহিনির খোল নলচে একেবারে বদলে দিয়ে এক ভয়ানক গা ছমছমে কাহিনির জন্ম দেন ব্রাম স্টোকার। কিংবা না, হয়তো ভুল বললাম। এই প্রথম ইংরেজী ভাষায় এক ভয়ের কাহিনির জন্ম নিল যাতে একটি লাইনও লেখক নিজে লেখেন না। গোটা বইটাই নানা জার্নাল, ডায়েরী আর চিঠিপত্রের সংকলন। স্টোকার যেন পরম যত্নে গ্রন্থন করেছেন এদের। আর তা থেকেই জন্ম নিয়েছে বিখ্যাত ড্রাকুলা এনিগমা বা ড্রাকুলা ধাঁধাঁর।
তবে কি সত্যিই ড্রাকুলা ছিল? ছিল জোনাথন হার্কার, লুসি, মিনা, ডা. স্টুয়ার্ট কিংবা ভ্যান হেন্সলিং?
ঠিক এখান থেকেই খোঁজ শুরু করেন লেসলি ক্লিংগার...তার প্রায় মিথে পরিণত হওয়া বই The New Annotated Dracula তে। যাত্রা করেছেন সেই পথ ধরে যে পথে ঘোড়ার গাড়িতে একদিন পাড়ি দিয়েছিলেন জোনাথন হার্কার, কাউন্ট ড্রাকুলার দূর্গের উদ্দেশ্যে। খেয়েছেন সেই হোটেলে যেখানে রাত কাটিয়েছিলেন জোনাথন হার্কার। আর সব শেষে যা পেয়েছেন যা চমকে দেবার মত।
রাজশেখর বসুর ভাষায় 'সব আছে। সব সত্যি'। ঠিক ১২৫ বছর আগে আজকের দিনেই প্রকাশ পেয়েছিল এই বই। সঙ্গে সেই বইয়ের প্রথম সংস্করণের মলাট।
- কৌশিক মজুমদার: ভারতীয় বিজ্ঞানী ও লেখক