ভারত-চীনের কাছে জ্বালানি বিক্রি করে তিন মাসে রাশিয়ার আয় ২৪ বিলিয়ন ডলার
চীন ও ভারতের কাছে জ্বালানি বিক্রি করে মাত্র তিন মাসে ২৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পরবর্তী তিন মাসে এ আয় হয়েছে রাশিয়ার। এ থেকেই বোঝা যায়, জ্বালানির উচ্চমূল্য কিভাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে চাপে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে সীমিত করছে।
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তিন মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা কেনা বাবদ ১৮.৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে চীন, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এদিকে, একই সময়ে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কিনতে ৫.১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যা বিগত বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।
এর ফলে ২০২১ সালের মার্চ থেকে মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তিন মাসে এই দুটি দেশ থেকে বাড়তি ১৩ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব পেয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কিছু দেশ রাশিয়া থেকে কেনাকাটা বন্ধ করে দেওয়ায় দেশটি যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠতে ভূমিকা রেখেছে এই বাড়তি রাজস্ব। এসব দেশের নিষেধাজ্ঞার ফলে বিকল্প সরবরাহের দাম বেড়েছে এবং চরম মুদ্রাস্ফীতির ফলে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোকে মন্দার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার- এর প্রধান বিশ্লেষক লাউরি মিলিভিরতা বলেন, "পাইপলাইন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দরগুলো ব্যবহার করে রাশিয়া যেসব জরুরি পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম, তার সবই কিনছে চীন।"
ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার জ্বালানিপ্রবাহ নিয়ে পর্যালোচনা করছেন লাউরি। তিনি আরো বলেন, "জাহাজে করে যেসব পণ্য আটলান্টিকের বাইরে যাচ্ছে, তার প্রধান ক্রেতা ভারত। ইউরোপের দেশগুলো এখন আর এই পণ্যগুলো কিনতে চাইছে না।"
লাউরি মিলভিরতা জানান, ক্রয়ের এই ধারা খুব শীঘ্রই শেষ হবার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে জ্বালানির দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি, এমনকি বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে রাশিয়া বিভিন্ন রকম ছাড়ও দিচ্ছে। ভলিউমের ভিত্তিতে গত জুন মাসে চীনের আমদানি ধীরগতিতে অব্যহত ছিল বলা যায়।
অন্যদিকে, রাশিয়ার তেলের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার ফলে আগামী মাসগুলোতে ভারত রাশিয়া থেকে আরো ক্রয় বৃদ্ধির প্রণোদনা পেতে পারে।
মিলভিরতার গবেষণা অনুযায়ী, সামগ্রিক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চীন এবং ভারত এখনো ইউরোপকে একটি ব্লক হিসাবে অনুসরণ করেছে। কয়লা ও তেলের উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় এবং রাশিয়া কিছু ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করায় ইউরোপের ক্রয় সঙ্কুচিত হতে থাকবে।
চীন ও ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। মূল্যহ্রাস ও স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধের সুযোগ করে দিয়ে এ দুই দেশের সাথে এবছর বাণিজ্যপ্রবাহ আরো শক্তিশালী করেছে মস্কো।
চীন এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশ এবং সাইবেরিয়ান তেল ও গ্যাস আমদানির জন্য তাদের ডেডিকেটেড পাইপলাইন আছে। কোভিড লকডাউনের কারণে ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে চীনের জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ কম হলেও, উচ্চ মূল্যের কারণে ভলিউম কিছুটা বৃদ্ধির কারণে এই সময়ে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বাবদ বেশ অর্থ খরচ করতে হয়েছে দেশটিকে।
এদিকে রাশিয়ার সাথে ভারতের কোনো সীমান্ত নেই এবং তাদের বন্দরগুলো সাশ্রয়ী শিপিং এর উপযুক্ত নয়। তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরো নাটকীয় মোড় নেওয়ার পর ভারতের ক্রয়ের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পেট্রোলিয়াম ও কয়লা আমদানির পেছনে ৮.৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ভারত, যা পুরো ২০২১ সালে রাশিয়ান পণ্য কেনায় তাদের মোট ব্যয়ের চাইতে বেশি।
তেল ও কয়লা আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারত তিনটি কার্গো বোঝাই রাশিয়ান লিকুইফাইড প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করেছে। অথচ গত বছরের একই সময়ে মাত্র একটি কার্গো বোঝাই লিকুইফাইড প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করেছিল ভারত।
গত মাসে একটি রিসার্চ নোটে জ্বালানি গবেষক ওয়েই চিওং হো বলেন, "পূর্ববর্তী ইতিহাসে দেখা যায়, রাশিয়া থেকে খুব কমই তেল আমদানি করেছে ভারত। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ান তেলের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার ফলে তেলের বাণিজ্যপ্রবাহে একটি পুনঃভারসাম্য তৈরি হয়েছে।"
সূত্র: ব্লুমবার্গ