‘সবচেয়ে বড় ভয়টাই সত্যি হলো’: ইউরোপের জ্বালানি সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) জ্বালানি সরবরাহ আরেক দফা কমিয়েছে রাশিয়া। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এ অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। শীত সামনে রেখে জ্বালানি ঘাটতি নিয়ে আটলান্টিকের দু'দিকেই দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম জানায় তারা নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে আগের তুলনায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করবে, যা তাদের সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ।
মার্কিন এক কর্মকর্তা জানান, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গৃহীত এই পদক্ষেপ ছিল রাশিয়ার প্রতিশোধ। শীতকালে চলার মতো পর্যাপ্ত গ্যাস নিয়ে গোটা ইউরোপকে অনিশ্চিত অবস্থায় ফেলেছে তারা।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিশ্ব জ্বালানি বিষয়ক প্রেসিডেনসিয়াল কো-অর্ডিনেটর আমোস হোচস্টেইনকে হোয়াইট হাউজ ইউরোপে পাঠিয়েছেন বলে জানান কর্মকর্তারা।
গত মার্চে ইউক্রেন আক্রমণের এক মাস পর গঠিত মার্কিন-ইইউ জ্বালানি টাস্কফোর্সের সঙ্গে জ্বালানি পরিকল্পনা বিষয়ক আলোচনা করতে তিনি প্যারিস ও ব্রাসেলস সফর করবেন।
মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, 'এটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়'। প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকলে ইউরোপের প্রভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে বলে জানান তিনি।
ইউরোপের স্থিতিস্থাপকতা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যের প্রশ্নেও এটি একটি বড় পরীক্ষা হবে, কেননা ক্রেমলিনের ইউক্রেন থেকে পেছনে হঠার কোনো লক্ষণ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাসেলস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের কাছে শীতের জন্য গ্যাস সংরক্ষণ করার জন্য অনুরোধ করেছে। মঙ্গলবার ইইউ দেশগুলোর জ্বালানি মন্ত্রীরা আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমাতে সম্মত হয়েছেন।
রাশিয়া গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে।
২০২০ সালে রাশিয়ার গ্যাসের প্রধান আমদানিকারক ছিল ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি। গ্যাস আমদানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইতালি।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মধ্যে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর যুক্তরাজ্যের নির্ভরতা কম। গত বছর যুক্তরাজ্যের চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছিল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে একেবারেই গ্যাস আমদানি করে না।
তবে ইইউ রাশিয়ার বিকল্প গ্যাস সরবরাহকারী খুঁজে পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
জ্বালানি বিশ্লেষক কেট ডোরিয়ান বিবিসিকে জানান, 'ইইউকে বিকল্প গ্যাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কাতারের মুখাপেক্ষী হতে হবে যারা ট্যাঙ্কারে করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করবে'।
'কিন্তু ইউরোপে যথেষ্ট সংখ্যক এলএনজি টার্মিনাল নেই। বিশেষ করে জার্মানির জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। জার্মানিতে এলএনজি আনলোড করার মতো সরঞ্জামাদিই নেই'।
গ্যাসের ঘাটতি পূরণের জন্য ইউরোপজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়েও সামনে আলোচনা হবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জার্মানি ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনা করলেও জ্বালানি সংকটের মধ্যে বার্লিনকে অবশিষ্ট তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু রাখার সময়সীমা বাড়াতে মার্কিন কর্মকর্তারা রাজি করানোর আশা করছেন।
- সূত্র: সিএনএন