নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধ, ইউরোপে রকেট গতিতে বাড়ল গ্যাসের দাম
ইউরোপে তাদের গ্যাস সরবরাহের অন্যতম প্রধান একটি পাইপলাইন (নর্ড স্ট্রিম-১) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। এই ঘোষণা ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসন্ন শীতে গ্যাস সংকট ও রেশনিং- এর ভীতিকে উস্কে দিয়েছে। ফলে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) মহাদেশটির বাজারে গ্যাসের দামও হয় রকেট গতিতে ঊর্ধ্বগামী, যা বেড়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ।
গেল সপ্তাহে নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলে তিন দিন বন্ধ রাখে রাশিয়া। এরপরে শুক্রবার আরেকটি যান্ত্রিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করে– ওই সময়ের বাইরেও পাইপলাইনটি অনির্দিষ্টকাল বন্ধ থাকবে বলে জানায়। এতে ইউরোপের বাজারে প্রতি মেগাওয়াটঘণ্টা গ্যাসের মূল্যসূচক চড়েছে প্রায় ২৭২ ইউরোর মতো বড় পরিসরে।
তবে ডাচ টিটিএফ সূচকে অক্টোবরের জন্য গ্যাসের ক্রয়মূল্য শেষপর্যন্ত কিছুটা কমলেও– তা এখনও ২৫৬ ইউরো বেশি। আগের দিনের চেয়ে যা ২৩ শতাংশ বেড়েছে, তাতে করে এক বছর আগের তুলনায় গ্যাসের দাম হয়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ বেশি।
গ্যাসের দামে আগুনের ছোঁয়া এরমধ্যেই চাপে ফেলেছে ইউরোপের ভোক্তাদের, গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধও রাখতে হয়েছে কিছু শিল্পে।
ইইউ এর অভিযোগ, ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে মস্কোর ওপর পশ্চিমারা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তারই প্রত্যাঘাত করতে জ্বালানি সরবরাহকে 'হাতিয়ার' বানিয়েছে রাশিয়া।
অন্যদিকে, মস্কো বলছে- পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছে; এসব নিষেধাজ্ঞার ফলেই পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বাল্টিক সাগরের তলদেশ ছুঁয়ে রাশিয়ায় থেকে জার্মানিতে গিয়ে শেষ হয়েছে নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন। যুদ্ধের আগে এ পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে মোট গ্যাস রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ করতো রাশিয়া। গত সপ্তাহে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কথা বলে সরবরাহ স্থগিতের আগেই এটি দিয়ে সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস প্রবাহিত হচ্ছিল।
ইউক্রেন দিয়েও পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। সেখানেও গ্যাস প্রবাহ কমানো হয়েছে। ফলে শীতের আগে গ্যাস ভাণ্ডার পুনঃমজুদ করতে বিকল্প উৎসের সন্ধানে ছুটতে হচ্ছে ইইউকে।
ইইউ সদস্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র জ্বালানি সাশ্রয়ে জরুরি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা পুরোদমে কার্যকর হলে জ্বালানি রেশনিং শুরু হতে পারে। এতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।
অরোরো এনার্জি রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জ্যাকব ম্যান্ডেল মন্তব্য করেন, 'এই মুহূর্তে সরবরাহ পাওয়াই কঠিন, রাশিয়া থেকে যতোটা সরবরাহ কমছে–বিকল্প উৎস থেকে কিনে সেই ঘাটতি পূরণ আরও দুরূহ হয়ে উঠছে দিনকে দিন'।
গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনেরও প্রধান জ্বালানি ইইউ এর বড় অর্থনীতির দেশগুলোয়। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ও বিক্রয়মূল্য দুইই হয়েছে গগনচুম্বী দাম। তাছাড়া, সার ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো কিছু শিল্পে সরাসরি গ্যাস ব্যবহার হয় ব্যাপক মাত্রায়– সংকটের কারণে এবার এগুলোর উৎপাদন কমাতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা পরিবারগুলিকে সহায়তা দিচ্ছে ইইউ'ভুক্ত নানান দেশের সরকার শত শত কোটি ইউরো বরাদ্দ করছে।
- সূত্র: রয়টার্স