রাশিয়ার তেলে মূল্য সীমা বেঁধে দিতে সম্মত ইইউ জোট, দুর্ভোগ বাড়বে তৃতীয় বিশ্বের
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার নতুন প্যাকেজে ঐক্যমত্যে হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)- জোটে। এর আওতায়- ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে, অর্থাৎ তৃতীয় কোনো দেশে রাশিয়ার জ্বালানি তেল বিক্রিতে মূল্য সীমা বেঁধে দেওয়াকেও সমর্থন দিয়েছে।
এর ফলে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর রাশিয়ার তেল কেনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে রাশিয়া তাদের কাছে ইইউ মূল্যসীমার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারবে কিনা–তা এখনও স্পষ্ট নয়।
চড়া মূল্যস্ফীতিতে বিশ্বব্যাপী যখন উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলি চরম বিপাকে তার মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ইইউ।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঐক্যমত্যের সময় ইউরোপীয়দের স্বার্থ ঠিকই রক্ষা করা হয়েছে। যেমন গ্রীস, সাইপ্রাস ও মাল্টার মতো ইইউ সদস্য যাদের জাহাজে পরিবহন (শিপিং) শিল্পে বেশি নির্ভরশীলতা রয়েছে– এতে যেন তাদের ওপর পড়া প্রশমন করা যায় সেদিকে লক্ষ রাখা হয়েছে।
ইইউ- দেশগুলির গোপন আলোচনার সাথে জড়িত সূত্রগুলির মাধ্যমে এবিষয়ে জানায় ব্লুমবার্গ। তবে সংশ্লিষ্টরা তাদের পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দেন মার্কিন গণমাধ্যমটিকে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রকাশ্যে বলেছেন, ইইউ'তে পোলান্ডের রাষ্ট্রদূত অ্যান্দ্রেঁ সাদোস। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা নিষেধাজ্ঞার নতুন প্যাকেজে অনুমোদন দিয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে, ইইউ নিষেধাজ্ঞা এড়াতে তৃতীয় কোনো দেশে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানির ওপর মূল্য সীমা আরোপ'।
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলি; যার আওতায় ইইউ নির্ধারিত মূল্য সীমার বেশি দামে– তৃতীয় কোনো দেশে সমুদ্রপথে (জাহাজে করে) রাশিয়ার তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছে ইইউ'তে চেক প্রেসিডেন্সি।
এতে আরও বলা হয়, বিধিনিষেধের সাম্প্রতিক ব্যবস্থার অধীনে রাশিয়া থেকে ইস্পাত আমদানি, এবং একইসাথে দেশটিতে তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল ও আইনি পরিষেবা রপ্তানিও থাকবে।
নতুন প্যাকেজের আওতায় আরও থাকছে, জাহাজে রাশিয়ার তেল পরিবহন ও এসংক্রান্ত পরিষেবা রাশিয়ার কাছে বিক্রিতে বিধিনিষেধ।
নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের খসড়া প্রস্তাবটি দেখেছে ব্লুমবার্গ। এতে তেলের মূল্য জি-৭ জোট নির্ধারিত মূল্য সীমার পর্যায়ে বা তার চেয়ে কম রাখার সুপারিশ রয়েছে।
রাশিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও সত্ত্বার ওপর আরোপিত হবে সাম্প্রতিকতম নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে, যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলে গণভোট আয়োজনের সাথে জড়িত ছিল তারা হবে মূল লক্ষ্যবস্তু।
এছাড়া, রাশিয়ায় বিভিন্ন ধরনের এভিয়েশন আইটেম বা বিমান উড্ডয়নে দরকারি সরঞ্জাম– যেমন বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, বিশেষ ধরনের রাসায়নিক রপ্তানিও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। রুশ সামরিক বাহিনীকে দরকারি প্রযুক্তিগত সহায়তা থেকে বঞ্চিত করাই যার উদ্দেশ্য।
তবে এবারের প্যাকেজ নিষেধাজ্ঞার খসড়ায় রাশিয়ার হিরা খনি কোম্পানিগুলোর ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রস্তাত আছে। এনিয়ে অসন্তুষ্ট বেশ কিছু ইইউ রাষ্ট্র।
সাদোস বলেন, 'প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ কঠিন, এজন্য আমাদের কিছু জায়গায় ছাড় দিতে হয়েছে। যারমধ্যে রাশিয়ার হিরাও রয়েছে'।
তবে তেলের মূল্য সীমা বেঁধে দিতে হলে ইইউ ব্লককে তাদের বর্তমান বিধান সংশোধন করতে হবে। এর আগে গত জুনে ইইউ দেশগুলি রাশিয়াতে আর্থিক ও বিমা পরিষেবা দান নিষিদ্ধের পাশাপাশি দেশটি থেকে সমুদ্রপথে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এখান থেকে বাদ রাখা হয় জাহাজে পণ্য পরিবাহী শিল্পকে। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকেই এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা; এরমধ্যেই নতুন প্যাকেজের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
- সুূত্র: ব্লুমবার্গ