কংগ্রেসের নতুন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে কে: অনুগত, সংস্কারপন্থী নাকি কেবলই পদ দখলকারী?
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কংগ্রেস সভাপতি থেকেছেন কোনো না কোনো গান্ধী। ২০২২ সালে সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে দলীয় প্রধানের পদে নির্বাচিত হয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। খবর এনডিটিভির
দলীয় নির্বাচনে হাড্ডাহাডি লড়াই না হলেও, খাড়গেকে হারানো সহজও ছিল না। কারণ অংশ নেওয়া প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে জয়ের রেকর্ড রয়েছে তার।
এজন্যই কানাড়ায় খাড়গের সমর্থকরা তাকে স্থানীয় ভাষায় ডাকেন 'সলিলারা সারাদারা' বলে, যার অর্থই হলো 'অপরাজেয় নেতা'।
দলীয় নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে ২৪ বছর ধরে কংগ্রেস সভাপতি পদে গান্ধীদের আধিপত্যের অবসান ঘটালেন তিনি। একইসঙ্গে, দ্বিতীয় দলিত হিসেবে দলের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন আজ বুধবার (১৯ অক্টোবর)। কংগ্রেসের প্রথম দলিত সভাপতি ছিলেন জগজীবন রাম। পরবর্তী ৫০ বছরে কোনো দলিত প্রার্থী সভাপতি পদে নির্বাচিত হননি। সে ধারাবাহিকতা ভাঙ্গার মাধ্যমেও খাড়গে তার অর্জনের ঝুলি ভারী করেছেন।
ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের সদস্য তিনি। উচ্চ কক্ষের আইনপ্রণেতা হওয়ার আগে কর্ণাটক থেকে লোকসভার আসনে জিতেছেন ৯ বার। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে যখন মোদি জোয়ারে কংগ্রেসের তরী ডুবেছিল, তখনও তার লোকসভা আসনটি তিনি ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
২০১৯ সালের নির্বাচনে আরও ভরাডুবী হয় কংগ্রেসের। এবার তিনিও হারেন। তবে ২০২১ সালে কর্ণাটক থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রাজ্য সভার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। গত মাসে পদত্যাগের আগপর্যন্ত তিনিই ছিলেন রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা।
'কংগ্রেসের এক ব্যক্তি, এক পদ' নীতির প্রতি আনুগত্য দেখিয়েই দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের আগে পদটিতে ইস্তফা দেন খাড়গে।
নির্বাচনে ৮০ বছরের মল্লিকার্জুন খাড়গের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৬৬ বছরের শশী থারুর। কিন্তু, সাড়ে ৯ হাজার দলীয় প্রতিনিধির মধ্যে ৭ হাজারের বেশি ভোট পান খাড়গে। তার অন্তত দুই বা এক প্রজন্মের অনুজ প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুর পান মাত্র ১,০০০ ভোট।
তবে মল্লিকার্জুনের সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, বয়সের জ্যেষ্ঠতা কারণেই তাকে যোগ্যতম বলে বিবেচনা করা হয়েছে। কারণ, কংগ্রস আশা করছে তার নেতৃত্বে আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদির বিজেপিকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া যাবে।
অন্যরা বলছেন, তিনি দলের প্রথাগত নেতৃত্ব কাঠামো অর্থাৎ গান্ধীদের প্রতি অনুগত। তাই কেবল পদ দখলকারী হয়েই থাকবেন। খুব একটা সংস্কার চেষ্টা করবেন না। প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুরও এনিয়ে আলোচনা করেছেন।
আসলে চালকের আসনে কে?
তিনি নিজেকে গান্ধীদের 'রিমোট কন্ট্রোল চালিত' বলতে নারাজ হলেও দল এবং ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীদের ভূমিকা নিয়ে সরব থেকেছেন খাড়গে।
হয়তো একারণেই তাকে গান্ধী পরিবারেরই প্রতিনিধি বলার অভিযোগটা এত জোরালো।
কংগ্রেসের সূত্রগুলির বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সোনিয়া গান্ধীর বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন খাড়গে। কিন্তু, একাজ করলে তিনি গান্ধীদের 'কলের পুতুল' এই অভিযোগের পালে আরও হাওয়া লাগবে– সেটাও অনুধাবন করেন। এবং শেষপর্যন্ত খাড়গের বাড়িতে গিয়েই তাকে অভিনন্দন জানান সোনিয়া।
তবে অনুগত হওয়ার অভিযোগের সাফাই দেওয়ার মানুষও নন তিনি। তার কারণ হচ্ছে এই যে, অনুগতদের মধ্যে তিনি গান্ধীদের প্রথম পছন্দ ছিলেন না। তবে তিনি বলেছিলেন, সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থীতার বিষয়ে তিনি 'গান্ধী পরিবার ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে এক গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেবেন'।
গান্ধী পরিবার প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে। কিন্তু, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে নারাজ হলে শেষপর্যন্ত খাড়গেকেই সমর্থন দিতে হয়।
১৯৬৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী, ঠিক সে সময়ে একজন আইনজীবী ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা হিসেবে কংগ্রেসের খাতায় নাম লেখান বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ।
কর্ণাটকে তার নিজ জেলা গুলবার্গার (বর্তমান নাম কালাবুরাগি) গুরমিতকাল আসন জিতেছেন টানা ৯ বার। ছিলেন নগর কংগ্রেসের সভাপতি। পরবর্তীতে হন রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান।
কর্ণাটকে সংস্কারের অনেক চেষ্টা করেছেন খাড়গে। তার নেতৃত্বে গঠিত কয়েকটি কমিশন নানান সামাজিক সংস্কারের সফল উদ্যোগ নেয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো- ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ। কর্ণাটকের বিধানসভাতেও বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তিনি।
দলীয় কাঠামোতেও সংস্কারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নতুন সভাপতি। এরমধ্যে রয়েছে দলের সব পর্যায়ে ৫০ বছরের কম বয়সীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। অর্থাৎ, অপেক্ষাকৃত নবীনদের নেতৃত্বে এনে দলকে শক্তিশালী করতে চাইছেন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে।
এর আগে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের আমলে মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় শ্রম, রেলওয়ে ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন খাড়গে।
কর্ণাটকে অবশ্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় শীর্ষপদ হোম মিনিস্টার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধাঁচের) ছিলেন।