ইংল্যান্ডের রাজার চেয়েও বড়লোক: ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পদের মালিক ঋষি সুনাক!
লিজ ট্রাস ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ৪৪ দিনের মধ্যে স্বেচ্ছায় ডাউনিং স্ট্রিট থেকে সরে দাঁড়ানোর পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ঋষি সুনাক। ইতোমধ্যেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিবিদের জীবনের খুঁটিনাটি নানা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা হচ্ছে, তার একটি হলো- ঋষি সুনাকের ব্যক্তিগত সম্পদের প্রাচুর্য্য! ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো ঋষি সুনাককে 'ঋষি রিচ' নামে আখ্যা দিয়েছে। নিউজউইক ম্যাগাজিন বলছে, ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাকই হতে যাচ্ছেন গণতান্ত্রিক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নেতা।
একথা না বললেই নয় যে, ঋষি সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। সানডে টাইমস-এর 'রিচ লিস্ট' অনুযায়ী, ঋষি সুনাক ও অক্ষতা মূর্তির যৌথ সম্পদের পরিমাণ ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড (৮২৮ মিলিয়ন ডলার)।আশির দশকের শেষভাগ থেকে সংবাদমাধ্যমটি প্রতিবছর এই 'রিচ লিস্ট' বা ধনীদের তালিকা করে আসছে, যেখানে প্রথমবারের মতো কোনো ফ্রন্টলাইন রাজনীতিবিদ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন ঋষি সুনাক।
একসময় গোল্ডম্যান সাকস-এ কাজ করা ঋষি সুনাক হেজ ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে বেশ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছিলেন। এরপর তিনি বিয়ে করেন অক্ষতা মূর্তিকে। অক্ষতা মূর্তির বিলিয়নিয়ার বাবার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি 'ইনফোসিস'-এ শেয়ার রয়েছে অক্ষতা মূর্তির।
ঋষি-অক্ষতা জুটির যৌথ সম্পত্তি হিসাব করলে দেখা যায়, তারা রাজা দ্বিতীয় চার্লসকেও পেছনে ফেলেছেন। ব্রিটেনের রানির মৃত্যুর পর রাজা দ্বিতীয় চার্লসের সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার; যদিও রাজপরিবারের কাছে গয়না, শিল্প সংগ্রহ ও জমি মিলিয়ে রয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ!
গত এপ্রিলে ঋষি সুনাক চ্যান্সেলর থাকাবস্থায় তাদের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সেসময় অক্ষতা মূর্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল যে তিনি তার বৈদেশি আয়ের উপর কর ফাঁকি দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে; এর কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছিলেন যে একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে যুক্তরাজ্যকে তার 'স্থায়ী নিবাস' বলে মনে করেন না তিনি। তবে সেই বিতর্কের পর অক্ষতা মূর্তি কর দিতে রাজি হন।
ঋষি সুনাকের এই বিপুল সম্পত্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে। কিন্তু তার সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কিভাবে তার সম্পদের তুলনা করা যায়?
সৌদি রাজপরিবারের নেতা বা আফ্রিকান স্বৈরশাসকদের কাছে হয়তো সুনাকের এই অর্থবিত্ত কিছুই না! কিন্তু চীন, রাশিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের সাথে কী সুনাকের ব্যাংকব্যালেন্সকে তুলনা করা যায়? আর পশ্চিমা বিশ্বের গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত নেতাদের সাথেই বা তার সম্পদের পার্থক্য কতখানি?
জো বাইডেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রায়ই নিজেকে একজন 'মধ্যবিত্ত' প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করেন। কিন্তু ফোর্বস এর এক পাবলিক রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাইডেনের সম্পত্তির পরিমাণ ৮ মিলিয়ন ডলার।
যদিও ওই প্রকাশনায় বলা হয়েছে যে তার আসল সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে বেশিই হওয়ার কথা, কারণ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরবর্তীকালে তার সম্পদ ছিল ১৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৭ মিলিয়ন ডলার কর দেওয়া এবং দান, স্টাফদের বিল ইত্যাদির পেছনে ১.৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরেও তার ব্যাংকে আরেকটু বেশিই অর্থ থাকার কথা।
তবে যাই হোক না কেন, নিজের পূর্বসূরি ও বিশ্বের প্রথম বিলিয়নিয়ার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পদের তুলনায় বাইডেনের সম্পদ নিতান্তই চুনোপুঁটি। যদিও ফোর্বস বলছে, ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ ৩.২ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি!
জাস্টিন ট্রুডো, কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সম্পদের পরিমাণ ১০ মিলিয়ন ডলার, যদিও এর বেশিরভাগই পারিবারিক সূত্রে পাওয়া বলে জানিয়েছে সেলিব্রেটি নেট ওর্থ। ট্রুডোর বাবা পিয়েরও ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং তার দাদা রিয়েল এস্টেট ও গ্যাস স্টেশনের ব্যবসায়ে মোটা অংকের টাকা আয় করেছেন।
অ্যান্থনি আলবেনিজ, অস্ট্রেলিয়া
একেবারেই আড়ম্বরহীন পরিবারে বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজের সম্পদের পরিমাণ ৫ মিলিয়ন ডলার, বলছে ডেইলি মেইল।
ইমানুয়েল মাখোঁ, ফ্রান্স
শীর্ষ সারির একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল মাখোঁর ক্যারিয়ার ছিল বর্নাঢ্য। রাজনীতিতে পা রাখার আগেই তিনি ছিলেন মিলিয়নিয়ার। কিন্তু এরপরেই তার সম্পদ হ্রাস পেতে থাকে এবং ডেইলি এক্সপ্রেস সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে তার সম্পদের পরিমান ৫৪০,৮১৫ ডলার।
ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেন
ফোর্বস সূত্র অনুযায়ী, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পদের পরিমাণ ২০-৩০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। এর পেছনে টিভি কোম্পানিতে শেয়ার থেকে প্রাপ্ত আয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। যদিও রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসার আগে তিনি সেই শেয়ার ছেড়ে দেন।
শি জিনপিং, চীন
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ নিয়ে রহস্যের শেষ নেই! বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তার সম্পর্কে ভেসে বেড়ায় বিভিন্ন তথ্য,কেউ দাবি করেছে তার সম্পদের পরিমাণ ১ মিলিয়ন ডলার, আবার কেউবা বলছে ১.২ বিলিয়ন ডলার! যেহেতু এসব তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তাই শি জিনপিং এর সম্পদের আসল হিসাব কেউই জানে না।
কিম জং উন, উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম নেতা কিম জং উন ২০১৩ সালেই ৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিলেন বলে দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকার পরিচালিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস জানিয়েছে, কিম জং উনের মালিকানায় আছে একাধিক রাজকীয় বাড়ি, ইয়ট, ব্যক্তিগত বিমান এবং একশোরও বেশি লাক্সারি গাড়ি।
ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়া
চলতি বছরের মার্চে ফরচুন ম্যাগাজিন 'ইজ পুতিন সিক্রেটলি দ্য ওয়ার্ল্ড'স রিচেস্ট ম্যান' শিরোনামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। তবে পুতিন আসলেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রেসিডেন্ট কিনা তা আজও এক রহস্য!
ক্রেমলিন দাবি করেছে, পুতিন খুবই সীমিত আয়ের মধ্যে থেকে জীবনধারণ করেন এবং ৮৩০ বর্গফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। রাশিয়ান অধিকারকর্মীরা কৃষ্ণ সাগরের কাছে একটি বিশাল রাজকীয় প্রাসাদের উপর দিয়ে ড্রোন উড়িয়ে নিয়ে ভাইরাল হয়েছিল এবং এই প্রাসাদকে তারা পুতিনের মালিকানায় বলে দাবি করেছিল; যদিও ক্রেমলিন তা অস্বীকার করেছে।
সিইও টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাক্তন রাশিয়ান সরকারি উপদেষ্টা স্টানিস্লাভ বেলকোভস্কি হিসাব করেছিলেন পুতিনের সম্পত্তির পরিমাণ ৭০ বিলিয়ন ডলার। তবে মার্কিন হেজ ফান্ড ম্যানেজার বিল ব্রাউডারের মতো অনেকের ধারণা, পুতিনের সম্পদের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বলে বিবেচিত, স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক নিজেই এর আগে দাবি করেছিলেন যে পুতিন আসলে তার চাইতেও ধনী!