২৫ বছরের তরুণতম ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান- ম্যাক্সওয়েল আলেহান্দ্রো ফ্রস্ট কে?
"আমার নাম ম্যাক্সওয়েল আলেহান্দ্রো ফ্রস্ট; আর আমি-ই হব কংগ্রেসে (প্রতিনিধি পরিষদে) প্রথম জেনারেশন- জেড- এর সদস্য।"
বুধবার (৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় প্রকাশিত হয় ফ্লোরিন্ডার ওরল্যান্ডোর কংগ্রেস আসনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল। আসনটি জেতার পরই টুইটারে এভাবে বিজয় বার্তা লিখেছেন বছর ২৫- এর ম্যাক্সওয়েল। খবর দ্য হিলের
ইতিহাসের সূচনা তিনি এভাবেই করলেন। নতুন প্রতিনিধি পরিষদে তিনিই হবেন তরুণতম সদস্য।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তারা হল- জেড প্রজন্ম।
অবশ্য ফল ঘোষণার বেশ আগেই ভোরের দিকে স্থানীয় গণমাধ্যম ফ্লোরিডা পলিটিক্সকে রিটুইট করে ফ্রস্ট লিখেছিলেন, তার বিজয়ে রাজনীতির প্রতিষ্ঠিতরা হতবাক হবে'।
তিনি মার্কিন গণমাধ্যম দ্য হিলকে ওই টুইটের ব্যাখ্যায় বলেন, 'খুব সকালে আমি যা বলতে চেয়েছি, তা হলো– প্রায়শই উপেক্ষিত হয় তরুণদের মতামত, আর আমি সেদিকেই একাগ্র মনোযোগ দিতে চাই। আমি সকলকে জানাতে চাই, তরুণ হওয়ার বিষয়ে আমার কোনো জড়তা, সংকোচ নেই'।
ফ্লোরিডায় রয়েছেন ডেমোক্রেট দলের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক। তাদের ভিড় ঠেলে এভাবে এগিয়ে আসার পথটা ছিল না সহজ এ তরুণের। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ে নানান বর্ণের প্রার্থীরা জয়ী হয়ে– কংগ্রেসে আসছেন; কিন্তু তাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য ম্যাক্সের বিজয়।
মিশ্র মার্কিন নাগরিকত্ব ও বহু সংস্কৃতির এক বৈচিত্র্য আছে ম্যাক্সের বেড়ে ওঠায় ও তার দৈনন্দিন জীবনে। যেমন তার দত্তক বাবা-মা হলেন– কিউবান আমেরিকান এক নারী ও তার শ্বেতাঙ্গ স্বামী। তার আসল মা-বাবা ছিলেন, একজন লেবানিজ বংশদ্ভুত পুয়ের্তোরিকান নারী এবং তার পুরুষ সঙ্গী- যিনি ছিলেন হাইতির বাসিন্দা।
কৃষ্ণাঙ্গ ফ্রস্ট বাড়িতে ইংরেজি ও স্প্যানিশ– দুই ভাষাতেই কথা বলেন। বহু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠার এই বিষয়টিকে তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালানোর সময়েও সফলভাবে ব্যবহার করেন ম্যাক্স।
তারপরও, যতটা তারুণ্যে তিনি রাজনীতির এত গুরুত্বপূর্ণ আসনে, তাও আবার সিনিয়র ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি থেকে– প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলেন– কোনোভাবেই যেন তার বয়সের সাথে মানানসই ঠেকে না।
তবে জেনে রাখা দরকার, উড়ে এসে জুড়ে বসেননি তিনি রাজনীতিতে। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় তিনি গত এক দশক ধরেই। প্রধানত প্রচারণা চালিয়েছেন, আগ্নেয়াস্ত্র- ঘটিত সহিংসতা এবং গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে। যুক্ত ছিলেন 'মার্চ ফর আওয়ার আমেরিকান লাইভস' এবং 'আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন' - নামক দুটি সংস্থার সাথে।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে হিস্পানিক ককাসের প্রচারণা শাখা– বোল্ড প্যাক- এর নির্বাহী পরিচালক ভিক্টোরিয়া ম্যাক গ্রোয়ারি বলেন, 'ম্যাক্সওয়েল খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং চমৎকার এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বিশেষ প্রার্থী। আমি মনে করি, তার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল'।
'ম্যাক্সওয়েল খুবই তরুণ এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর– একইসাথে তার আছে, পরিবর্তনের জন্য এক দশক ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা'- যোগ করেন তিনি।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই গড়ে উঠেছে ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্টের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। ২০১৬ সালে ওরলান্ডো শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণের মাঝে পড়ে গিয়েছিলেন ফ্রস্ট ও তার বন্ধুরা। সেখান থেকে কোনোরকমে পালিয়ে বাঁচেন তারা।
অন্যদিকে, গর্ভপাতের অধিকার নিয়েও তার অভিজ্ঞতা খুবই ব্যক্তিগত। যেমন তার জন্মদাত্রী মায়ের ছিল না- গর্ভধারণকালে কোনো চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ।
নিঃসন্দেহে মার্কিন রাজনীতিতে আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাস, গর্ভধারণ, চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি আজ অন্যতম প্রধান বিতর্কের, রাজনৈতিক লড়াইয়ের ইস্যু। কিন্তু, এসবের পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদে তিনি শিল্পের পক্ষে থাকবেন বলে জানান ম্যাক্স।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে অধিকার কর্মী হয়ে ওঠার পেছনে তিনি তার পালক বাবার কাছ থেকে পাওয়া সঙ্গীত শিক্ষাকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন। জানালেন এই শিক্ষাই তাকে দিয়েছিল প্রেরণা ও শৃঙ্খলাবোধ।
'আমার (পালক) বাবা পুরোদস্তুর একজন বাদ্যশিল্পী। স্কুলের সেকেন্ড গ্রেডে পড়ার সময়েই তিনি আমাকে একটি ড্রাম সেট কিনে দেন। আর তাতেই আমার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। আমিও একজন মিউজিশিয়ান হয়ে উঠি, বাড়িতে গান শুনতে শুনতেই বড় হয়েছি'- দ্য হিলকে বলছিলেন ফ্রস্ট।
তিনি আরও বলেন, 'আমি যখন আরও ছোট ছিলাম– তখন অন্য বাচ্চাদের মতো আমিও জানতাম না– জীবনে আসলে কোথায় আমি যেতে চাই। কী হতে চাই…কিন্তু, আমার মনের এই দশাকে বদলে দেয় সঙ্গীত ও শিল্প। আমার নিজস্ব শক্তিকে কাজে লাগাতে আমার বাবা প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছেন'।