শ্রম আইন বিষয়ে রোববার আলোচনায় বসবে মার্কিন প্রতিনিধিদল ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা
ইপিজেড লেবার ল সংশোধন করে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংশোধন করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকা সফরে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসেবে খ্যাত ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) এর কর্মকর্তারা।
ইউনাইটেড স্টেট ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ব্রায়ান লুটি'র নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল আগামী রোববার (২১ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে। সূত্র থেকে জানা গেছে, সভায় শ্রম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ইউএসটিআর এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সভায় কটন ফিউমিগেশন, ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস ও লেবার প্রোটেকশনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর মধ্যে অন্যতম এজেন্ডা হলো- যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত তুলায় উৎপাদিত তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া যাবে।
রানা প্লাজা ধসের পর থেকে স্থগিত থাকা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনঃবর্হালের প্রস্তাব করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম নকল করার যে অভিযোগ ইউএসটিআর এ রয়েছে- সে বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরে সমস্যা সমাধানে বাড়তি সময় চেয়ে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি চাবে বাংলাদেশ।
ইপিজেড লেবার ল সংশোধন করে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা এবং আইএলও কনভেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম আইন সংশোধনের শর্তসহ ৯ দফা অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশের উপর চাপ রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিক থেকেও।
ইতোমধ্যে ২০২৬ সাল নাগাদ এসব অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের একটি রোডম্যাপ ইইউতে জমা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। তবে রোডম্যাপ অনুযায়ী বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের তিন মাসের মাথায় বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে একটি অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের শর্ত দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ওই অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন হয়েছে দাবি করে বিভিন্ন সময় জিএসপি পুনঃবহালের দাবি জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রতিবারই যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে, শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের উন্নয়নের আরও অনেক সুযোগ রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে জিএসপি সুবিধা পুনঃবহালে যুক্তরাষ্ট্রকে আর অনুরোধ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ওই সময় তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষায় শেষপর্যন্ত কাজ করলেও তারা তা পুনঃবহাল করবে না।
তবে টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও টিকফা সভাসহ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জিএসপি সুবিধা পুনঃবহালের দাবি করছে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বহু বছর ধরে কটন আমদানির ক্ষেত্রে ডাবল ফিউমিগেশন পদ্ধতি বাতিলের দাবি ছিল। ইতোমধ্যে এ প্রথা বাতিল করেছে সরকার। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় উৎপাদিত তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি জানিয়ে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট প্রণয়নের তাগাদা ছিল। ইতোমধ্যে আইসিটি ডিভিশন এ আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে। এই খসড়া আইনে যুক্তরাষ্ট্রের কনসার্নগুলো এড্রেস করা হয়েছে কি-না, সে বিষয়ে আলোচনা করবে ইউএসটিআর প্রতিনিধিদল।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস, পেটেন্ট প্রোটেকশন বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সফটওয়্যারসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্য নকল করার অভিযোগ রয়েছে দেশটির।