পুরুষ দিবসকে সামনে রেখে পুরুষরা যে দাবি জানালেন
আজ (১৯ নভেম্বর) বিশ্ব পুরুষ দিবস। সমাজের প্রতি পুরুষদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে এবং পুরুষদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এই দিবসটি পালন করা হয়।
পুরুষ দিবস উপলক্ষে শনিবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের। দিবসটিকে সামনে রেখে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলায় তদন্ত ছাড়া গ্রেপ্তার বন্ধের দাবিতে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরু হয় সাইকেল র্যালি দিয়ে।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব পীরজাদা শহীদুল হারুন। সাইকেল র্যালির শুভ উদ্বোধন করেন সাবেক জাতীয় ফুটবল তারকা কায়সার হামিদ।
এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম তার বলেন, 'বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মিথ্যা মামলার হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষরা। পাশাপাশি এই আইনগুলোতে জামিন কঠিন হওয়ার কারণে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী নারীরা ইচ্ছে করেই এই মামলাগুলোকে পুরুষ নির্যাতন ও পুরুষকে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।'
সুস্পষ্ট তদন্ত ছাড়া শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে একজন পুরুষকে গ্রেপ্তার করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে উল্লেখ করে তিনি এই আইনগুলোর সংশোধন দাবি করেন।
প্রধান অতিথি পীরজাদা শহীদুল হারুন তার বক্তব্যে বলেন "আমাদের সংবিধান কিন্তু নারী ও পুরুষের সমান অধিকার এর কথা বলা আছে, কিন্তু এখন আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। তদন্ত ছাড়া পুরুষকে অযাচিত গ্রেপ্তার বন্ধ করা এবং আইনের আইনের সংস্কার করা এখনই জরুরি।'
এবারের আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল 'হেল্পিং মেন অ্যান্ড বয়েজ'।
কেন পুরুষ দিবস?
হিন্দুস্তান টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও রোজকার জীবনে অনেক চাপ সামলাতে হয়। অফিসে কাজের চাপ ছাড়াও বাড়ির নানা দায়িত্ব, সন্তানদের ভবিষ্যৎ, ঋণের বোঝা—সবকিছু নিয়েই তাদের ভাবতে হয় রোজ। সারাদিন এসব চাপ সামলেও তারা হাসিমুখে থাকেন। আনন্দে রাখেন পরিবারের অন্যদেরও। আমাদের চারপাশের এমন পুরুষরাই সত্যিকারের পুরুষ। পাশাপাশি তারা আমাদের রোল মডেলও।
এই পুরুষদের জন্যই ১৯ নভেম্বর বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিশ্ব পুরুষ দিবস হিসেবে। এই দিনটি শুধু তাদের উদযাপনের জন্য। সারা বিশ্বে এমন একটি দিন পালনের আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক সে কারণগুলো।
১. বিশ্ব পুরুষ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হল আদর্শ পুরুষদের কথা আরও বেশি করে সবাইকে জানানো। কর্মঠ ও পরিবারের খেয়াল রাখে এমন পুরুষরাই আমাদের রোল মডেল। তাদের গল্প সবাইকে বলাই দিনটির প্রধান লক্ষ্য।
২. পুরুষরা রোজকার জীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছে বাড়ির সদস্যদের খেয়াল রাখা, বাচ্চার যত্ন নেওয়া, তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া ও বড় করে তোলা। এসবের পাশাপাশি নিজের সঙ্গিনীকে ভালো রাখার দায়িত্বও আছে। এছাড়া কেউ বিপদে পড়লে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। সমাজের প্রতি পুরুষদের এই দায়িত্বের কথাই মনে করিয়ে দেয় দিনটি।
৩. রোজকার চাপ সামলাতে সামলাতে পুরুষদেরও নানারকম অসুস্থতা হতে পারে। বিশ্ব পুরুষ দিবস তাদের শরীরের খেয়াল রাখার কথাও মনে করিয়ে দেয়।
৪. সমাজে নারীদের মতো পুরুষরাও বেশ কিছু জায়গায় বৈষম্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হন। তাদের সেই আচরণ থেকে রক্ষার করার বার্তাও দেয় এই বিশেষ দিন।
৫. লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে আনার ব্যাপারে এখন পুরো পৃথিবী সচেতন। এর জন্য নারীর পাশাপাশি কিছু কিছু বিষয়ে পুরুষের অধিকারও সুনিশ্চিত করা দরকার। বিশ্ব পুরুষ দিবস সে কথাগুলোই মনে করায়।
এই দিনটি পালনের দাবি অনেক আগে থেকেই উঠেছিল। ১৯৬০ সাল থেকে এমন একটি দিন পালনের দাবি অনেকেই জানাতে শুরু করে। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস পালন করা শুরু হলে এই দাবি আরও জোরালো হয়।
তবে পুরুষ দিবস প্রথম পালন করা শুরু করেন টমাস ওস্টার। ১৯৯২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এই দিনটি প্রথম পালন করা হয়। এরপর ১৯৯৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের অধ্যাপক জেরোম তিলক সিংয়ের প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিবসের দিন ধার্য হয় ১৯ নভেম্বর। তখন থেকেই প্রতি বছর দিনটি ১৯ নভেম্বর পালিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস মূলত ৬টি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে তৈরি। সেগুলো হলো:
১. ইতিবাচক রোল মডেলদের তুলে ধরা। শুধু সিনেমা বা খেলাধুলার তারকা নয়, সাধারণ কর্মজীবী শ্রেণি সৎ পুরুষদের প্রচারের আলোয় আনা।
২. সমাজ, পরিবার, বিয়ে, শিশুর যত্ন ও পরিবেশে পুরুষদের ইতিবাচক অবদান তুলে ধরা।
৩. পুরুষের সামাজিক, শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া।
৪. সমাজসেবা, সামাজিক আচরণ ও প্রত্যাশা এবং আইনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রতি বৈষম্যের ওপর আলোকপাত করা।
৫. লিঙ্গ সমতার প্রচারণা করা এবং পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক ভালো করা।
৬. অধিক নিরাপদ ও ভালো পৃথিবী গড়ে তোলা, যেখানে মানুষ নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে এবং তাদের সমাভবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারবে।