ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়ার জাভা, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫২
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার সিয়ানজুর শহরে আঘাত হানা ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫২ জনে দাঁড়িয়েছে।
একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় সরকার।
পোস্টে আরো বলা হয়, এখনও আরো ৩১ জন নিখোঁজ আছেন। এ পর্যন্ত আহতের সংখ্যা ৩৭৭।
ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৬০ জন বাস্তুহারা হয়েছেন।
সোমবার বিকালে দেশটিতে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে এই প্রাণহানি ও বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে।
ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া বাড়িঘর এবং ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও মৃতদেহ খুঁজে পেতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে মঙ্গলবার উদ্ধারকারীরা।
ভূমিকম্প পরবর্তী ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, সেতু, বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট এবং ভারী যন্ত্রপাতির অভাবের কারণে ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকারীদের কাজে বিঘ্ন ঘটে।
গতকালের পর আজ মঙ্গলবার ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ফোন যোগাযোগের উন্নতি হতে শুরু করেছে।
পশ্চিম জাভা গভর্নর রিদওয়ান কামিল নিহতদের সংখ্যা ঘোষণার সময় জানান, প্রত্যন্ত-গ্রামীণ এলাকায় বিল্ডিং ধসে পড়ার সময় সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই তাদের সেদিনের ক্লাস শেষ করে ইসলামিক স্কুলগুলোতে ধর্মীয় পাঠ নিচ্ছিলো।
পাবলিক ওয়ার্কস অ্যান্ড হাউজিং মুখপাত্র এন্ড্রা আত্মাভিদজাজা বলেছেন, "উদ্ধার কার্যক্রমে সিয়াঞ্জুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই এলাকাগুলোতে এখনও অনেকে আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"
এদিকে রাজধানী জাকার্তা থেকে খাদ্য, তাঁবু, কম্বল এবং অন্যান্য সরবরাহ বহনকারী কার্গো ট্রাকগুলো অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণের জন্য মঙ্গলবার ভোরে জাভাতে পৌঁছায়।
সিয়াঞ্জুর শহরে আনুমানিক এক লাখ ৭৫ হাজার মানুষের বাস। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ শহরের একতলা বা দোতলা বাড়িতে বাস করেন।
১৩ হাজারেরও বেশি লোকের বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে জরুরি কর্মীরা হাসপাতালের বাইরে, টেরেস এবং পার্কিং লটে স্ট্রেচার এবং কম্বলে আহতদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। শিশুসহ আহতদের অক্সিজেন মাস্ক এবং আইভি লাইন দেয়া হয়েছে। শত শত মানুষ সিয়াঞ্জুর আঞ্চলিক হাসপাতাল ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, পাঁচ দশমিক ছয় মাত্রার ভূমিকম্পটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের নিচে ১০ কিলোমিটার (ছয় দশমিক দুই মাইল) গভীরে উৎপন্ন হয়।
ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া, জলবায়ুবিদ্যা, এবং ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা কমপক্ষে ২৫টি কম্পন রেকর্ড করেছে।
'রিং অফ ফায়ার' নামে পরিচিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেসিনে আগ্নেয়গিরি এবং ফল্ট লাইনের চাপে অবস্থিত ২৭০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের দেশটি প্রায়শই ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং সুনামির মুখোমুখি হয়।
ফেব্রুয়ারিতে, পশ্চিম সুমাত্রা প্রদেশে ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং ৪৬০ জনেরও বেশি আহত হয়।
এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, পশ্চিম সুলাওয়েসি প্রদেশে ৬ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে একশোর বেশি লোক নিহত এবং প্রায় সাড়ে ছয় হাজার জন আহত হয়।
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামিতে বেশ কয়েকটি দেশে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল ইন্দোনেশিয়ায়।