ফিউশন বিক্রিয়ায় দূষণমুক্ত অফুরন্ত শক্তির সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
বছরের পর বছর ধরে যেভাবে সূর্য ও নক্ষত্ররা জ্বলছে, ঠিক সেই পদ্ধতিতেই ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে অফুরন্ত শক্তির সন্ধান পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। গত মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিষয়টি প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় সকাল ১০ নাগাদ এ নিয়ে সরকারিভাবে ঘোষণাটি দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব জেনিফার গ্রানহোম। সরকারের দাবি, ফিউশন বিক্রিয়া ব্যবহারের উপায় উদ্ভাবন জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিরাট সাফল্য। খবর রয়টার্সের।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এর মাধ্যমে দূষণমুক্ত উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নতুন পথ উদ্ভাবন হলো। এটি ব্যবহার করে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে। যদিও পুরো বিষয়টি এখনও বেশ সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতিতে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে এক দশক বা তার বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য লাভজনক এই ক্ষেত্রে গবেষণায় ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন জেফ বেজোস, বিল গেটসের মতো বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিশ্বের প্রায় সব দেশই এখনও মূলত কয়লার মতো প্রচলিত জ্বালানির ওপরে নির্ভরশীল। তবে মাটির নিচে সেই খনিজ ভাণ্ডার দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তার ওপর এতে রয়েছে দূষণের সমস্যা। জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনের সময়ে যে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তাতে বিশ্ব-উষ্ণায়নের মতো সমস্যা ভুগছে পৃথিবী। ফিউশন বিক্রিয়ায় এই সমস্ত সমস্যার সমাধান আনা সম্ভব হবে বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
বছরের পর বছর ধরে সূর্য আর নক্ষত্ররা কীভাবে জ্বলছে তা নিয়ে ১৯৩০ সাল থেকেই শুরু হয় গবেষণা। সংবাদমাধ্যমের দাবি, দীর্ঘ ৯০ বছরের ওই গবেষণা শেষে ফিউশন বিক্রিয়ার এ সুখবর নিয়ে এসেছেন ক্যালিফর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (এলএলএনএল) বিজ্ঞানীরা।
এলএলএনএল-এর পরিচালক কিম বুদিল বলেন, "মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।"
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদ্ধতিতে দু'টি পরমাণুর মধ্যে থাকা নিউক্লিও অংশ জুড়ে গিয়ে একটি বড় পরমাণু তৈরি হয়। তার ফলে মোট ভরের সামান্য তারতম্য ঘটে। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিপুল শক্তি।
গবেষণাগারে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটাতে বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণে তাপ (প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস) প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। গবেষণাগারে লেজার পদ্ধতিতে সেই তাপের জোগান দেওয়া হয়েছে। ফিউশন বিক্রিয়া একবার চালু হয়ে গেলে, তা থেকেই পরবর্তী ধাপের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি মেলে। আগের বিক্রিয়া থেকেই শক্তি সংগ্রহ করে নেয় পরমাণুরা।