চ্যাটজিপিটি কি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও সহায়ক হবে?
এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা নিয়েও চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা। ইতিমধ্যেই শিক্ষাক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিয়ে 'প্লেজিয়ারিজম' ইস্যুতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এবার চিকিৎসা বিজ্ঞানেও চ্যাটজিপিটির কার্যকারিতা নিয়ে সাড়া জাগানো একটি গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত গবেষণায় আলোচিত এআই চ্যাটবটটি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সফলভাবে ইউএস মেডিকেল লাইসেন্সিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। খবর জিও টিভির।
মেডিকেল লাইন্সেন্সিং পরীক্ষাটি অপেক্ষাকৃত বেশ কঠিন একটি পরীক্ষা। একজন পরীক্ষার্থীকে এই পরীক্ষায় পাশ করার জন্য প্রথমত জৈবনীতি সম্পর্কে মৌলিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এছাড়াও পরীক্ষায় পাশ করতে গড়ে একজন শিক্ষার্থীর ৩০০ থেকে ৪০০ ঘণ্টার সার্বিক প্রস্তুতির দরকার।
ইউএস মেডিক্যাল লাইসেন্সিং পরীক্ষায় মূলত তিনটি কঠিন টেস্ট নেওয়া হয়। সম্প্রতি এ পরীক্ষায় চ্যাটজিপিটির যে সাফল্য সেটি সুদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত শিক্ষায় একটি নতুন সম্ভবনা তৈরি করতে পারে। এছাড়াও এ এআই চ্যাটবটটি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয়ও করা যেতে পারে।
গবেষণাটির সাথে যুক্ত গবেষকদের তথ্যমতে, "উক্ত গবেষণায় কোনো প্রকার ট্রেনিং কিংবা প্রভাব ছাড়াই চ্যাটজিপিটি ইউএস মেডিক্যাল লাইসেন্সিং পরীক্ষার তিনটি টেস্টে কয়েকটি ক্ষেত্রে পাশ করেছে। এছাড়াও এআই চ্যাটবটটি এ পরীক্ষায় উচ্চ মাত্রার নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে সমর্থ হয়েছে।"
আন্সিবল হেলথ স্টার্টআপের গবেষকেরা মূলত ইউএস মেডিক্যাল লাইসেন্সিং পরীক্ষার কিছু নমুনা প্রশ্ন চ্যাটজিপিটি চ্যাটবটে পরিকল্পনামাফিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন ঠিক করার ক্ষেত্রে গুগলে যেসব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর নেই সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে করে চ্যাটবট হিসেবে চ্যাটজিপিটির ইনপুট হিসেবে দেওয়া সকল তথ্যকে পর্যালোচনা করে সক্ষমতার সর্বোচ্চ পরিচয় দিতে হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, একই পরীক্ষার তিনটি টেস্টে চ্যাটজিপিটি ৫২.৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নম্বর পেয়েছে। এক্ষেত্রে পাশ নম্বর ছিল ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। এছাড়াও ফলাফল পর্যালোচনা করে গবেষকরা এআই টুল এ প্রদত্ত মোট প্রশ্নের প্রায় ৮৮.৯ শতাংশ উত্তরকে 'কাল্পনিক', 'অস্পষ্ট' ও 'চিকিৎসাগতভাবে বৈধ' ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন।
এ গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, "খুবই কঠিন এ পরীক্ষাটিতে চ্যাটজিপিটি কোনোরূপ প্রভাব ছাড়াই ক্ষেত্রবিশেষে পাশ নম্বর অর্জন করেছে। এ ঘটনা ক্লিনিকাল এআই এর উন্নতিতে এক অভূতপূর্ব মাইলস্টোন সৃষ্টি করল।"
চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত সাহিত্যের জন্য বিশেষভাবে তৈরিকৃত চ্যাটবট পাবমেডজিপিটির ৫০.৩ শতাংশ পর্যন্ত সঠিক ফলাফল দিয়ে থাকে। আর সম্প্রতি সংগঠিত মেডিক্যাল লাইসেন্সিং পরীক্ষার ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির ফলাফলের নির্ভুলতার পরিমাণ পাবমেডজিপিটির নির্ভুলতাকে পরিমাণকেও অতিক্রম করেছে।
তবে চ্যাটজিপিটিতে যেসব কনটেন্ট তথ্য আকারে ইনপুট দেওয়া হয়েছে সেগুলো সব নির্ভুল নয়। এমনকি এআই চ্যাটবটটকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চ্যাটজিপিটি প্ল্যাটফর্মটি অকপটে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে। তবে সুদূর ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসা সেবার সাথে যুক্ত পেশাদারদের স্থান দখল করবে বলে মনে করেন সাইন্স এলার্ট এর সাংবাদিক ডেভিড নিল্ড।
চ্যাটজিপিটি মূলত একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক সার্চ টুল। এ প্রযুক্তিটি একটি বৃহৎ ল্যাংগুয়েজ মডেলের সাহায্যে ওয়েবে থাকা তথ্যগুলোকে সমন্বয় করে যেকোনো বিষয়ে একটি সুসজ্জিত ফলাফল প্রদান করে থাকে। গত বছরের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটির আবির্ভাবে ভবিষ্যতে বিশ্ব প্রযুক্তিতে এক আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমবিএ পরীক্ষায় পাশ করে চ্যাটজিপিটি আগামীর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছিল। ঠিক তেমনিভাবে এবার ইউএস মেডিক্যাল লাইসেন্সিং পরীক্ষায় বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পাশ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার নিয়েও সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলছে। এছাড়াও গতবছর ওপেন এআই ক্ষেত্রে সাড়া ফেলেছিলো ওপেন এআই ইমেজ জেনারেটর ডল-ডি। প্রযুক্তিটি টেক্সটের নির্দেশনা অনুযায়ী ছবি তৈরি করতে পারে।