‘অলরাউন্ডার’ লেখকের আবির্ভাব: চ্যাটজিপিটির লেখা বইয়ে সয়লাব অ্যামাজন!
এই কদিন আগেও ব্রেড শিকলার কল্পনাও করতে পারেননি কখনো কোনো বইয়ের লেখক হিসেবে নিজের নাম দেখতে পাবেন। যদিও এ স্বপ্ন তার বহুদিনের। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রোগ্রাম চ্যাটজিপিটির খোঁজ পাওয়ার পর শিকলার একটা সুযোগ পেয়ে গেলেন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা শিকলার বলেন, চ্যাটজিপিটির সুবাদে অবশেষে তার বই লেখার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
সাধারণ নির্দেশনা থেকেই পাতার পর পাতা লেখা তৈরি করতে পারে চ্যাটজিপিটি। এই টুলটি ব্যবহার করেই শিকলার ৩০ পৃষ্ঠার একটি ইলাস্ট্রেটেড শিশুদের ইবই লিখে ফেললেন। তা-ও মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। বইটি তিনি প্রকাশ করেছেন অ্যামাজন ডটকমের সেলফ-পাবলিশিং ইউনিটের মাধ্যমে।
শিকলারের এ বইটির প্রধান চরিত্র স্যামি নামের একটি কাঠবিড়ালি। স্যামিও এআই ব্যবহার করে। সে তার বনের বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা সঞ্চয় ও বিনিয়োগের বিষয়ে শেখে।
'দ্য ওয়াইজ লিটল স্কুইরেল: আ টেইল অভ সেভিং অ্যান্ড ইনভেস্টিং' নামের বইটি অ্যামাজন কিন্ডল স্টোরে ২.৯৯ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর ছাপা সংস্করণ বিক্রি হচ্ছে ৯.৯৯ ডলার। এখন পর্যন্ত বইটি বিক্রি করে শিকলারের আয় হয়েছে ১০০ ডলারের কিছু কম। টাকার অঙ্কটা বেশি না হলেও শিকলারকে আরেকটি বই লিখতে অনুপ্রাণিত করার জন্য যথেষ্ট।
শুধু ব্রেড শিকলার না, আরও অনেকেই চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে বই লিখছেন। মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অ্যামাজনের কিন্ডল স্টোরে ২০০-র বেশি ইবই ছিল, যেগুলোর লেখক অথবা সহলেখক চ্যাটজিপিটি। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে, 'হাউ টু রাইট অ্যান্ড ক্রিয়েট কন্টেন্ট ইউজিং চ্যাটজিপিটি', 'দ্য পাওয়ার অভ হোমওয়ার্ক', কবিতা সংকলন 'ইকোজ অভ দ্য ইউনিভার্স'।
চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে লেখানো বইয়ের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অ্যামাজনে একটি নতুন সাব-জনরাও যোগ করা হয়েছে: চ্যাটজিপিটি ব্যবহার নিয়ে বই, পুরোটাই লিখেছে চ্যাটজিপিটি।
অবশ্য মোট কতগুলো বই এআই ব্যবহার করে লেখা হয়েছে, তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি।
তবে চ্যাটজিপিটি যেহেতু বিদ্যমান কোটি কোটি পৃষ্ঠার লেখা ঘেঁটে নতুন লেখা দাঁড় করায়, তাই সে লেখার কতটুকু নিজস্বতা আছে তা নিয়ে বিতর্ক ও সন্দেহ রয়ে গেছে।
চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে বই লেখানোর কারণে 'আসল' লেখকরা হুমকিতে পড়তে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকেই। বিশেষ করে নতুন ঔপন্যাসিক ও আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের লেখকরা চ্যাটজিপিটির ফায়দা সবচেয়ে বেশি নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ফ্রাঙ্ক হোয়াইট নামের একজন লেখক এক ইউটিউব ভিডিওতে দেখিয়েছেন, একদিনেরও কম সময়ে 'গ্যালাকটিক পিম্প: ভলিউম ১' নামের ১১৯ পৃষ্ঠার নভেলা লিখিয়ে নিয়েছেন তিনি চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে। হোয়াইট বলেন, এআই ব্যবহার করে বছরে এরকম ৩০০ বই লেখা সম্ভব।
তবে সবাই হোয়াইটের মতো সৎ নন। অনেকেই এআইয়ের সাহায্যে বই লিখে, সেই তথ্য প্রকাশ করেন না। আর তা প্রকাশ করা নিয়মও তৈরি করেনি অ্যামাজন।
তবে ভোক্তারা এখনও পর্যন্ত এআইয়ের সাহায্য নিয়ে লেখা বইয়ের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে লেখা বইকে 'একঘেয়ে' বলে অভিহিত করেছেন লেখক মার্ক ডসন।