অপ্রাপ্তবয়স্করা দিনে এক ঘণ্টার বেশি টিকটক ব্যবহার করতে পারবে না!
টিকটকের প্রতি অপ্রাপ্তবয়স্কদের আসক্তির ব্যাপারটি বরাবরই আলোচিত। এবার ভিডিও শেয়ারিং-এর জনপ্রিয় এ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন স্ক্রিন টাইম ও ফ্যামিলি পেয়ারিং সুবিধা চালু করেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের টিকটকে দৈনিক এক ঘণ্টার স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করে দিতে পারবেন অভিভাবকেরা। খবর আল জাজিরার।
একইসাথে, শিশুরা যাতে নির্দিষ্ট শব্দ কিংবা হ্যাশট্যাগ সংশ্লিষ্ট কন্টেন্ট দেখতে না পারে তা যাতে অভিভাবকরা মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেজন্য একটি টুলও তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যাপটির নিরাপত্তা ও অ্যালগরিদম নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সমালোচনার মুখে এসব পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে টিকটক।
গতকাল (বুধবার) টিকটকের পক্ষ থেকে এসব পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স সিঙ্গাপুরে নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার পূর্বে চীন থেকেই প্ল্যাটফর্মটি নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
ইন্টারনেট আসক্তি কাটাতে ২০২১ সালে চীনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ছুটির দিনগুলোতে দৈনিক সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা অনলাইন গেম খেলার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল দেশটির সরকার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের প্রতি শিশুদের আসক্তি এতটাই বেড়েছে যে, শিশুদের টিকটক ব্যবহারের সময়সীমা কমিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের তিন ভাগের দুই ভাগ শিশু টিকটক ব্যবহার করে।
টিকটকের ট্রাস্ট ও সেইফটি প্রধান করম্যাক কেনান এক ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে জানান, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের একাউন্টে স্ক্রিন টাইম সেট করা হলে এক ঘণ্টা ব্যবহারের পর তাদের কাছে সময় শেষ হওয়ার বার্তা পাঠাবে টিকটক। শুধু তা–ই নয়, অতিরিক্ত সময় টিকটক ব্যবহারের জন্য একটি কোডও পাঠাবে। কোডটি লিখলে অতিরিক্ত সময় টিকটক ব্যবহার করা যাবে।
অন্যদিকে ১৩ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম শেষ হওয়ার পর অভিভাবকদের কাছে এ কোডটি পাঠানো হবে। অভিভাবকেরা কোডটি লিখলেই কেবল শিশুরা বাড়তি সময় টিকটক ব্যবহার করতে পারবে।
টিকটকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বোস্টন চিলড্রেন হসপিটালের ডিজিটাল ওয়েলনেস ল্যাবের গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে এই সময়সীমা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্যারেন্টিং ও তরুণদের নিয়ে কাজ করা সিভিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে পরামর্শ করে শিশুদের একাউন্টে অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের ফিচারটি তৈরি করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ ব্যবহারকারীরা ঠিক কোন ধরনের কন্টেন্ট পোস্ট করছে সেটি নিয়েও সম্প্রতি আলোচনা হচ্ছে। গত বছর প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, টিকটকের অ্যালগরিদম শিশুদের একাউন্টে 'ক্ষতিকর' কন্টেন্ট প্রচার করছে। একইসাথে আরেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইন্সটাগ্রামের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম সাধারণত ব্যবহারকারীর আগ্রহের টপিক শনাক্ত করে একই ধরনের কন্টেন্ট দেখাতে থাকে। এতে করে ব্যবহারকারী আরও বেশি সময় প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচকেরা মনে করেন, পছন্দের কন্টেন্টের অ্যালগরিদমের মাধ্যমেই অনেক সময় ক্ষতিকারক কন্টেন্ট দেখানো হয়।
টিকটকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন এ সুবিধা বন্ধ রেখে নিজেদের জন্য আলাদা স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করতে পারবেন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীরা। সপ্তাহ শেষে নির্দিষ্ট একাউন্টে স্ক্রিন টাইম পর্যালোচনা করে ব্যবহারকারীকে তা নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানানো হবে।
একইসাথে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে একাউন্ট প্রাইভেট করে রাখা এবং ব্যবহারকারীর বয়স ১৬ বছর না হলে সরাসরি মেসেজ না করতে পারার ফিচার যুক্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে শুধু অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে টিকটক। প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহারকারীরা এখন থেকে সপ্তাহে আলাদাভাবে প্রতিদিন কাস্টমাইজ করে স্ক্রিন টাইম লিমিট নির্ধারণ করতে পারবেন। একইসাথে শিডিউল করে নোটিফিকেশন মিউট করা এবং রাতে ঘুমের সময়টা নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার মত ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে।
তরুণদের মাঝে একদিকে যেমন টিকটকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি অন্যদিকে টিকটকের সাথে চীনের সংশ্লিষ্টতার কারণে তা পশ্চিমা দেশগুলোর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট, ইউরোপিয়ান কমিশন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কাউন্সিল ইতোমধ্যেই নিজেদের অফিসিয়াল ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে।
একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গভর্নমেন্ট, কংগ্রেস এবং অর্ধেকেরও বেশি রাজ্যে টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কানাডা সরকারও সরকারি ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ রিপাবলিকানরা একটি বিল পাশের চেষ্টা করছে। বিলটি পাশ হলে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে পুরো দেশব্যাপী টিকটক নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা থাকবে। তবে এ বিলের বিপক্ষে ইতোমধ্যেই অবস্থান নিয়েছে দেশটির সিভিল সোসাইটির বহু সংগঠন।
সংগঠনগুলোর মতে, বিলটি পাশ করে দেশব্যাপী টিকটক নিষিদ্ধ করলে তা হবে অসাংবিধানিক।
বিবিসির সূত্রমতে, টিকটকের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর এ নিষেধাজ্ঞাকে 'মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশগুলোর ভন্ডামি' হিসেবে অভিহিত করে সমালোচনা করেছে বেইজিং।