ভারতে বিলুপ্তির ৭০ বছর পর ফের জন্ম নিলো ৪ চিতা শাবক
ভারতে ৭০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া চিতা প্রজাতির চারটি শাবক জন্ম নিয়েছে। খবর বিবিসির।
ভারত থেকে বিলুপ্ত চিতার বসবাস ও বংশবৃদ্ধির জন্য নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সম্প্রতি চিতা এনেছে ভারত সরকার। এবার এই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই জন্ম নিলো চিতাগুলো।
ভারতের পরিবেশমন্ত্রী ভুপেন্দর ইয়াদাব টুইটারে চিতা শাবক জন্মের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একইসাথে এ অর্জনকে 'স্মরণীয় ঘটনা' বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
দেশে চিতার অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে কয়েক দশক ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গতবছর নামিবিয়া থেকে মোট ৮টি চিতা এনেছিল দেশটি। একইসাথে সাউথ আফ্রিকার সাথেও চুক্তি করে গত মাসে ১২টি চিতা এনেছে ভারত।
গতবছর নামিবিয়া থেকে আনা চিতাগুলোর একটিই এই চার শাবকের জন্ম দিয়েছে। দেশটির কুনো ন্যাশনাল পার্কে মুক্ত পরিবেশে শাবকগুলোকে রাখা হয়েছে।
এ সম্পর্কে পরিবেশমন্ত্রী টুইটাতে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, "আমি 'প্রজেক্ট চিতা' টিমের সকলকে চিতার অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে নিরলস প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাই। একইসাথে পূর্বের পরিবেশগত ভুলগুলো সমাধানে কাজ করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।"
প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, শনাক্তের পাঁচ দিন আগে এ শাবকগুলো জন্ম নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বুধবার নতুন জন্ম নেওয়া এ শাবকগুলো কুনো ন্যাশনাল পার্কের বন কর্মকর্তারা শনাক্ত করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও চিতার নতুন শাবক জন্মের ঘটনাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। বনের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, শাবকের জন্ম দেওয়া মা চিতা 'সিয়ায়া' ও শাবকগুলো এখন সুস্থ আছে।
অবশ্য শাবক জন্মের এ খবর প্রকাশের দুইদিন আগে নামিবিয়া থেকে আসা আটটি চিতার মধ্যে একটির মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। জানা যায়, কুনো ন্যাশনাল পার্কে কিডনি বিকল হয়ে চিতাটি মারা গেছে।
গতবছর নামিবিয়া থেকে চিতা এনে ইতিহাস সৃষ্টি করে ভারত। কেননা এর আগে বিলুপ্ত প্রাণীর অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে বড় মাংসাশী প্রাণীকে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে নিয়ে আসার নজির নেই।
১৯৪০ সালের দিকে একদিকে বাসস্থানের অভাব, অন্যদিকে শিকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে ভারতে চিতার অস্তিত্ব আশঙ্কাজনকহারে কমতে থাকে।
১৯৫২ সালে স্থলভাগের সবচেয়ে দ্রুততম প্রাণীটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ভারত সরকার। মোদি সরকারের উদ্যোগে প্রায় ৭০ বছর পর আবারও দেশটিতে ১২০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম এ প্রাণীটি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বর্তমানে পৃথিবীতে আফ্রিকান ও এশিয়াটিক প্রজাতির চিতার অস্তিত্ব রয়েছে। মোট ৭ হাজার চিতার মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান প্রজাতির, যার বাসস্থান সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া ও বতসোয়ানায়।
অন্যদিকে এশিয়াটিক চিতা বর্তমানে একেবারেই বিপন্ন। একমাত্র দেশ হিসেবে ইরানে প্রজাতিটির মাত্র ৫০টি চিতার অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানা যায়।
আগামী ৮ থেকে ১০ বছর পর্যায়ক্রমে চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে আফ্রিকান চিতা পাঠাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। চুক্তিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে করে ভারতে ধীরে ধীরে চিতার একটি নির্ভরযোগ্য বাসস্থান গড়ে উঠবে।