পাকিস্তানে রমজান মাসের খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্রে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু
রমজান মাস উপলক্ষে জনসাধারণের কাছে খাবার সরবরাহের জন্য পাকিস্তানের করাচির এক কেন্দ্রে পদদলিত হয়ে ১১ জন মারা গিয়েছেন। নিহতদের সবাই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে পুলিশ এবং উদ্ধারকারী কর্মীরা।
শুক্রবারের ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেও বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা মুগিস হাশমি। একটি কারখানাকে কেন্দ্র বানিয়ে খাবার সরবরাহ শুরু করার পর হঠাৎ করে শত শত মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে কয়েকজন পার্শ্ববর্তী ড্রেনে পড়ে যান। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ঐ সময়ে ড্রেনের পাশে থাকা একটি দেয়ালও ভেঙে পড়ে, যেটি ঘটনার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই ঘটনায় ৮ জন নারী এবং ৩ জন শিশু নিহত হয়েছেন।
হাশমি জানিয়েছেন, খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কারখানা মালিক তার পরিকল্পনা সম্পর্কে পুলিশকে কোনো কিছু জানাননি। পুলিশকে জানানো হলে সরবরাহ কেন্দ্রের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশ পাঠিয়ে এই দুঃখজনক ঘটনা এড়ানো যেত বলেও জানান তিনি।
সিন্ধ রাজ্যের রাজধানী করাচিতে জন্ম নেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান শুরু হওয়ার পর এটিই খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্রে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় ঘটনা। সর্বশেষ এই ঘটনায় রমজান মাসে সরবরাহ কেন্দ্রে পদদলিত হয়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২১ জনে।
স্থানীয় মোহাম্মাদ আরসালান জানান তিনি কারখানার পাশেই থাকেন এবং সকাল থেকেই লোকজন কারখানার পাশে ভিড় জমিয়েছে বিনামূল্যে খাবার পাওয়ার জন্য। তিনি জানেন না ঠিক কীভাবে এই ঘটনা শুরু হয়েছে, কিন্তু "তিনি কান্নার শব্দ শুনতে পান এবং এই পদদলনের ঘটনা জানতে পারেন।"
রমজান মাসে খাবার সরবরাহ কেন্দ্রে যাতে অতিরিক্ত ভিড় না জমে সেজন্য কেন্দ্রে স্থানীয় পুলিশ মোতায়েনের আদেশের একদিন পরেই এ ঘটনা ঘটেছে।
নগদ টাকাবিহীন পাকিস্তান তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের দৈনন্দিন খাবার যোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে।
গত সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার রমজান মাসে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে আটা-ময়দা সরবরাহের উদ্যোগ নেয়, যাতে করে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি এবং দারিদ্র্যের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রভাব কিছুটা লাঘব হয়।
নিজেদের অর্থনীতি ঠিক রাখতে হিমশিম খাওয়া পাকিস্তান সরকার আইএমএফ-এর ঋণ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই ঋণ প্রস্তাব গত নভেম্বর মাস থেকে মুলতবি রেখেছে আইএমএফ। তারা ১.১ বিলিয়ন ডলার কিস্তি পাঠানোর জন্য পাকিস্তান সরকারকে বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে করের হার বাড়ানো, ভর্তুকি বন্ধ করা এবং পাকিস্তানি রুপির বিনিময় হার উন্মুক্ত করে দেওয়া।
গত শুক্রবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের এক সরবরাহ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং খাবার নিতে আসা নারীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি। জনগণের সাথে ভালো ব্যবহার এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়া নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারকে নির্দেশ দেন শরীফ।
সূত্র: আল জাজিরা