মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব কমছে পশ্চিমের, জি-৭ জোট চিন্তায়
আগামীকাল (১৬ এপ্রিল) জাপানে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনশীল রাজনীতিতে নিজেদের ক্রমহ্রাসমান প্রভাব নিয়ে দেশগুলো নিজেদের কৌশল পর্যালোচনা করবে। খবর রয়টার্সের।
দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বিদ্যমান। তবে গত মার্চে নিজেদের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দুই বিরোধী পরস্পর বিরোধী আঞ্চলিক পরাশক্তির এই উদ্যোগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পরাশক্তির দেশগুলো মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
একইসাথে সম্প্রতি সৌদি আরবের পক্ষ থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা করা হচ্ছে। সৌদির পাশাপাশি অন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও পশ্চিমা পরাশক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে সিরিয়ার সাথে নতুন করে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রান্সের এক কূটনৈতিক সিএনএনকে বলেন, "মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন করে সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।"
জি-৭ ভুক্ত দেশ অর্থাৎ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই বৈঠক করবেন।
ফ্রান্সের ঐ কূটনৈতিক বলেন, "ইরানের নিউক্লিয়ার ইস্যু থেকে শুরু করে সৌদি-ইরান-রাশিয়ার চুক্তির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে একটি বড় উত্থান দেখা যাচ্ছে। এমনকি ভূমিকম্পের পর সিরিয়া ইস্যুতেও মধ্যপ্রাচ্যে আমরা বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করছি।"
সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এমনকি পশ্চিমা নির্ভরতা কমিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে চীনসহ অন্য দেশগুলোর সাথে বহুমাত্রিক সম্পর্ক উন্নয়নের কথা ভাবছে সৌদি।
ফ্রান্সের কূটনৈতিক আরও বলেন, "জি-৭ জোটের দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবশ্যই কাজ করে যাবে। আর এর সাথে শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তাই নয় বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তাও জড়িত।"
মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর বিতর্কিত নীতির কারণেই আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তাদের সম্পর্কের মাত্রা নিয়ে নতুন করে ভাবছে। একইসাথে অ-পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারে উদার নীতি গ্রহণ করে সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জি-৭ জোটের এক কূটনৈতিক বলেন, "ইরান-সৌদি-চীনের মধ্যকার চুক্তি আমাদের মাথাব্যাথার কারণে হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউই ভাবতেই পারেনি এমন কিছু হবে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নিজেদের আবারও একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।"
পশ্চিমা আরেক কূটনৈতিক বলেন, "মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে জি-৭ জোটের দেশগুলোর নতুন করে ভাবতে হবে। ওপেকের তেলের দাম নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে যেয়ে সৌদি আরবের কার্যক্রম এক্ষেত্রে আরেকটি বার্তা।"
অন্যদিকে জাপানের হিরোশিমায় আগামী ১৯ মে জি-৭ জোটের পক্ষ থেকে সামিট আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের ঐ সামিটে উত্তর কোরিয়া, ইরান ও রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ফ্রান্সের ঐ কূটনৈতিক বলেন, "সামিটে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ, রাশিয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারলেই জি-৭ জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় থাকবে।"