জাপানি লেখক মুরাকামির বই কেনার জন্য মাঝরাত থেকেই পাঠকের দীর্ঘ সারি!
সম্প্রতি জনপ্রিয় লেখক হারুকি মুরাকামির নতুন উপন্যাস 'দ্য সিটি এন্ড ইটস আনসার্টেইন ওয়ালস' প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর প্রকাশিত জাপানি লেখকের বইটি কিনতে মাঝরাত থেকেই জড়ো হয়েছিল পাঠকেরা। এমনকি বইয়ের দোকানের সামনে উৎসুক পাঠকদের দীর্ঘ সারি করে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গিয়েছে। খবর বিবিসির।
রাজধানী টোকিওর একটি বইয়ের দোকানের এলইডি ব্যানারে বইটি প্রকাশের দিনক্ষণ গুনতেও দেখা যায়। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এসব ছবি বিশ্বজুড়ে মুরাকামির অসংখ্য পাঠকের মনেও উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে।
লেখক মুরাকামি 'দ্য সিটি এন্ড ইটস আনসার্টেইন ওয়ালস' উপন্যাসটি করোনা মহামারীর ঘরবন্দী সময়ে লিখেছেন। উপন্যাসে উঁচু দেয়ালে ঘেরা বদ্ধ একটি শহরে মূল চরিত্রের জীবনযাপনকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৬৬১ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি মোট তিন ভাগে বিভক্ত। যেখানে মূল চরিত্রের কিশোর বয়স থেকে মধ্য বয়সের সময়কালকে ফুটিয়ে তুলেছেন ৭৪ বছর বয়সী এই লেখক।
বইটি সম্পর্কে প্রকাশিত বিবৃতিতে মুরাকামি বলেন, "২০২০ সালের মার্চ মাসে, যখন করোনা মহামারী জাপানে ছড়িয়ে পড়ছিল, আমি ঠিক তখন এই উপন্যাসটি লেখা শুরু করি। উপন্যাসটি শেষ করতে আমার প্রায় তিন বছর সময় লেগে যায়।"
করোনা মহামারীর সময়টাতে লেখক খুব একটা বাইরে যেতেন না। বইটি সম্পর্কে মুরাকামি বলেন, "এই অস্থির, অসাধারণ সময়টাতে আমি সযত্নে বইটি লিখেছি। যাত্রাটা অনেকটা এমন যে, একজন 'স্বপ্নপাঠক' লাইব্রেরিতে 'পুরনো স্বপ্ন' পড়ছেন।"
মুরাকামি প্রায় চার দশক ধরে লেখালেখির সাথে জড়িত। এখন পর্যন্ত তার অন্তত ১৪টি উপন্যাস ও বেশ কয়েকটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০টি ভাষায় তার এসব সৃষ্টিকর্ম অনূদিত হয়েছে।
তবে সদ্য প্রকাশিত বইটি নিয়ে জাপানে যে উত্তেজনা, সেটি নিজ দেশে লেখকের জনপ্রিয়তাকেও যেন বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরছে।
দীর্ঘ সময় ধরে মুরাকামির বই পড়তে থাকা পাঠক ইউ নতুন বইটি নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। একইসাথে মুরাকামির বইয়ে স্বপ্ন ও বাস্তবতার আলাদা দুই জগতের যে মধুর সংমিশ্রণ, সেটি নিয়েও নিজের ভালোলাগা প্রকাশ করেছেন।
৩৬ বছর বয়সী ইউ জানান, প্রায় ২০ বছর আগে তার প্রাইমারী স্কুলের এক শিক্ষকের পরামর্শে তিনি মুরাকামির বই পড়া শুরু করেন। সেই থেকে আজও তিনি মুরাকামির লেখার ভক্ত।
নতুন বইটি প্রকাশের একদিন পরেই ইউ এক বসাতেই পুরো উপন্যাসটি পড়ে ফেলেছেন। সদ্য প্রকাশিত উপন্যাসটি এই পাঠকের কাছে যেন শৈশবে মুরাকামির প্রথম বই পড়ার অনুভূতির মতোই মনে হয়েছে।
নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির জাপানিজ স্টাডিজের প্রভাষক ম্যারিয়েন হ্যান্সেন বলেন, "আমি মনে করি, বিশ্বজুড়ে মুরাকামির এত পাঠক থাকার মূল কারণ তিনি নির্দিষ্ট কোনো সংস্কৃতিকে ফোকাস না করে সার্বজনীন লেখালেখি করেন। তার লেখায় আধুনিক জীবনের মানবতার মূল গল্পগুলো ফুটে ওঠে।"
তবে মুরাকামির লেখায় নারীর চিত্রায়ন নিয়ে রয়েছে বহু আলোচনা-সমালোচনা। সমালোচকদের মতে, লেখক তার বইয়ে নারী চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে যৌনতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। একইসাথে নারী চরিত্রকে পুরুষ চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেন।
তবু সকল আলোচনা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলে মুরাকামির নতুন বই কিনতে পাঠকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। বইটির প্রকাশনী শিনচোশার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথম মুদ্রণে উপন্যাসটির প্রায় ৩ লাখ কপি ছাপানো হয়েছে।
প্রকাশের প্রথম সপ্তাহেই বইটি দেড় লাখ কপির বেশি বিক্রি হয়েছে। অভাবনীয় সাড়ার কারণে ইতোমধ্যেই বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণের কাজ শুরু হয়েছে। একইসাথে খুব শীঘ্রই উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হবে।
৬ বছর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুরাকামির উপন্যাস 'কিলিং কম্যান্ডেটোর' মোট দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। দুইটি খণ্ড যথাক্রমে ৭ লাখ ও ৬ লাখ কপি করে বিক্রি হয়েছিল।
মুরাকামির প্রথম বই ছিল ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত 'হিয়ার দ্য উইন্ড সিং'। আর ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত `নরওয়েজিয়ান উড' তার প্রথম বেস্টসেলার।
'নরওয়েজিয়ান উড' বইটিই মূলত মুরাকামিকে তরুণ তারকা সাহিত্যিকের খ্যাতি এনে দেয়। এছাড়াও তিনি 'আফটার ডার্ক', 'বার্থডে স্টোরিজ', 'অ্যা ওয়াইল্ড শিপ চেজ', 'দ্য উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকলের' মতো আরও বহু বেস্টসেলিং বই লিখেছেন।