চীনের ‘আকাশের সাবমেরিন’ কী? স্যাটেলাইটে ধরা পড়ল!
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন-এর স্যাটেলাইট ছবির বরাতে জানা গেছে, চীনা সামরিক বাহিনী উত্তর-পশ্চিম চীনের একটি প্রান্তিক ঘাঁটিতে একটি ব্লিম্প তথা ছোট এয়ারশিপ তৈরি করেছে। এ ছবিগুলো দক্ষিণ ক্যারোলিনার উপকূল থেকে চীনা গুপ্তচর বেলুনটিকে ভূপাতিত করার তিন মাস আগে তোলা হয়েছিল। স্যাটেলাইট ইমেজিং কোম্পানি ব্ল্যাকস্কাই ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে এ ছবিগুলো তোলে। খবর ইউরেশিয়ান টাইমস-এর।
ছবিগুলোতে উত্তর-পশ্চিম চীনের মরুভূমিতে অবস্থিত একটি সামরিক কমপ্লেক্সের রানওয়েতে পার্ক করা অবস্থায় প্রায় ১০০ ফুট লম্বা একটি ব্লিম্প দেখা যায়।
মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ছবিতে দেখা ব্লিম্পটি চীনাদের কাছ থেকে প্রকাশ হওয়া পূর্বের এয়ারক্র্যাফটগুলোর তুলনায় আরও উন্নতমানের হতে পারে। তাছাড়া এটি দেশটির এয়ারশিপ প্রোগ্রামের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে চীনা সামরিক ঘাঁটি এবং সেখানে যে ব্লিম্প লক্ষ্য করা গেছে সে সম্পর্কে অবগত আছেন। তবে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে পেন্টাগন ব্লিম্পের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে। তিনি জানান, পেন্টাগন বস্তুটি ট্র্যাক করবে।
ছবিগুলোতে প্রায় ৯০০ ফুট বড় একটি এয়ারশিপ হ্যাঙ্গারও দেখা গেছে। চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ২০১৩ সালে বিশাল এই হ্যাঙ্গার তৈরি করেছিল। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় কার্যক্রম ছিল খুবই কম। এমনকি শীতকালের তুষার ঝড়ের সময়ও রানওয়ে এবং হ্যাঙ্গারসহ কমপ্লেক্সের বেশিরভাগ অংশ অস্পৃশ্য ছিল, কেবল কমপ্লেক্সের সামান্য কিছু অংশ এবং রাস্তাগুলো থেকে তুষার সরানো হয়েছিল।
ওকলাহোমা অ্যারোস্পেস ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক জেমি জ্যাকবস স্যাটেলাইট ছবির বিশাল হ্যাঙ্গারটি চীনা সামরিক ঘাঁটিতে আবিষ্কৃত ব্লিম্পের জন্যই বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
জ্যাকবস সিএনএনকে জানান, এই বিশালাকার হ্যাঙ্গারের একটি কারণ হতে পারে — ব্লিম্পটি সম্ভবত কোনো পরীক্ষার অংশ। ২০২০ সালে চীনা সামরিক ঘাঁটির রানওয়েতে একটি বিশাল দোলনার মতো কাঠামো দেখা গিয়েছিল। কাঠামোটি প্রায় ৪০০ ফুট লম্বা এবং ১৬০ ফুট চওড়া ছিল। দোলনাকার জিনিসটি এতটাই বড় ছিল যে, জ্যাকবস মনে করেন স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে দেখা তুলনামূলক ছোট ব্লিম্পটি এটি ব্যবহার করতে পারবে না।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, চীনা সামরিক ঘাঁটিতে যে দোলনাকার জিনিসটি দেখা গেছে, তার সাথে স্ট্রাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ রাখার জন্য চীনের একটি পেটেন্টের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে।
'আকাশের সাবমেরিন'
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে চীনা বেলুনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার যখন মিসাইল ছুঁড়ে নামায়, তখন চীন অভিযোগ করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্র অতি-প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। কিন্তু গুপ্তচর বেলুনের ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, চীন তাদের এয়ারশিপ প্রোগ্রামের উন্নতি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ বায়ুযান ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দাতথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগে জানিয়েছিলেন, বেলুনের সাথে জড়িত চীনা নজরদারি প্রোগ্রামগুলো পরিচালিত হয় চীনের হাইনান প্রদেশ থেকে। চাইনিজ নজরদারি বেলুন বহরে ঠিক কয়টি বেলুন আছে তা অজানা হলেও প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রোগ্রামটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাঁচটি মহাদেশে দুই ডজনেরও বেশি মিশন পরিচালনা করেছে।
দূরবর্তী ঘাঁটিতে একটি বড় ব্লিম্পের আবিষ্কার নিশ্চিত করে যে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) এই বেলুন প্রোগ্রাম তিন ধরনের এয়ারশিপ ব্যবহার করে: ব্লিম্প, অ্যারোস্ট্যাটস, ও ফ্রি-ফ্লোটিং বেলুন।
জ্যাকবসের মতে, এই ব্লিম্পের ডেডিকেটেড প্রপালশন এবং নেভিগেশন ক্ষমতার কারণে এটিকে 'আকাশে থাকা সাবমেরিন'-এর সাথে তুলনা করা যায়। এটি নির্দিষ্ট এলাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকতে পারে, যার ফলে এটি ব্যাপকহারে নজরদারি চালাতে পারবে। তিনি জানান, এ ধরনের ব্লিম্প তৈরি চীনের প্রকৌশল এবং গবেষণার অগ্রগতিকে নির্দেশ করে।
স্যাটেলাইট ছবি এবং সাইটের বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে, চীনা সামরিক বাহিনী এয়ারশিপ এবং মরুভূমির কমপ্লেক্সটি নিয়ে জন্য অনেক বড় পরিকল্পনা করছে।
চীনা সামরিক বাহিনীর এয়ারশিপ প্রোগ্রামের সাংগঠনিক কাঠামো এখনও অজানা, তবে সাম্প্রতিক পেটেন্টগুলি ইঙ্গিত করে — এই প্রযুক্তির তত্ত্বাবধানের জন্য 'ইউনিট ৬৩৬৬০' নামক একটি নতুন পিএলএ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এই ইউনিটটির হাতে এয়ারশিপ প্রযুক্তি এবং স্টোরেজ সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি পেটেন্ট বরাদ্দ করা হয়েছে, যা এর আগে ভিন্ন আরেকটি পিএলএ ইউনিটের হাতে ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যাঙ্গার থেকে যদি কোনো বড় এয়ারশিপ বের হয়, তাহলে বোঝা যাবে যে চীন সত্যিই তার এয়ারশিপ প্রোগ্রামে জোর দিচ্ছে। এর মাধ্যমে আরও বোঝা যাবে চীন ছোট আকারের পরীক্ষানিরীক্ষাগুলোর কাজ শেষ করে এখন নজরদারি বা পরিবহনের উদ্দেশ্যে বড় আকারের এয়ারশিপ তৈরি করা শুরু করেছে।