ভিয়েতনামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড!
গত শনিবার (৬ মে) ভিয়েতনামে ৪৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর হাইড্রো মেটেওরজিকাল ফোরকাস্টিং এর তথ্যমতে, ভিয়েতনামের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। খবর বিবিসির।
দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ থানহ হোয়ায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটিতে তাপমাত্রা সামনে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে সবাইকে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সময়টা বাড়িতে অবস্থান করতে বলেছে।
তবে শুধু ভিয়েতনাম নয়, এর আশেপাশের দেশগুলোতেও অতিরিক্ত তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। থাইল্যান্ডে গত ১৫ এপ্রিল রেকর্ড সমতুল্য ৪৪.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
একইসাথে সম্প্রতি মিয়ানমারে ৪৩.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা দেশটির গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সাধারণত থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বর্ষাকালের আগে তাপমাত্রা কিছুটা বেশিই থাকে। তবে সম্প্রতি সেই তাপমাত্রার পরিমাণ যেন আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ গুয়েন নক হুই ভিয়েতনামে তাপমাত্রার এ নতুন রেকর্ডকে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে 'উদ্বেগজনক' বলে অভিহিত করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, "আমি মনে করি, ভিয়েতনামকে আরও বেশ কয়েকবার এই রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে হবে। এটা নিশ্চিত করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপদের যে শঙ্কা, সেটি সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।"
শিল্পায়ন শুরু হওয়ার পর থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রায় ১.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশগুলোর পক্ষ থেকে যদি জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকবে।
ভিয়েতনামের ডানাং শহরের কৃষক গুয়েন থাই ল্যান এএফপিকে বলেন, "তাপমাত্রা এতটাই বেশি যে কৃষকেরা খুব সকালে কাজ শুরু করছে। বেলা ১০টা বাজার আগেই তাদের কাজ শেষ করতে হচ্ছে। দুপুরের দিকে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হয়।"
এর আগে ভিয়েতনামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চার বছর আগে দেশটির সেন্ট্রাল হ্যা তিন প্রদেশে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো বাংলাদেশ এবং ভারতেও চলছে তীব্র তাপদাহ। গত ১৭ এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় ১৯৬০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ ৪০.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। একইসাথে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ডিগ্রী অতিরিক্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
চলতি বছর স্পেনের ইতিহাসে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির দক্ষিণের কর্ডোবা বিমানবন্দর এলাকায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা যাতে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে না যায়, তাই বিশ্বের দেশগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করার জন্য সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের 'ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, "বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি চলমান নানা বিপদকে আরও তীব্র করবে।"