কলম্বিয়ায় বিমান দুর্ঘটনা: এবার খোঁজা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া কুকুর উইলসনকে
কলম্বিয়ার আমাজন বনে বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর চার শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ঘটেছে আরেক বিপত্তি। উদ্ধারে অংশ নেওয়া উইলসন নামক এক প্রশিক্ষিত কুকুর বনটিতে হারিয়ে গেছে।
শিশুদের খুঁজে পাওয়ার একদিন আগে, অর্থাৎ ৮ জুন সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কুকুরটির বনে হারিয়ে যাওয়ার তথ্য জানানো হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধারকারী কুকুরটি দুর্গম ভূখণ্ড, আর্দ্রতা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পথ হারিয়ে ফেলেছে।
ইতোমধ্যে পায়ের ছাপ ধরে সৈন্যরা কুকুরটির খোঁজ শুরু করেছে। আন্দাজ করা হচ্ছে, শিশুদের যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, কুকুরটি তার আশেপাশেই রয়েছে। কেননা উদ্ধারকৃত ঐ জায়গা থেকে অল্প দূরত্বেই কুকুরটির অবস্থানের আলামত পাওয়া গিয়েছে।
ছয় বছর বয়সের উইলসন বেলজিয়ান শেফার্ড জাতের কুকুর। এটির জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেনা সদস্যদের মাঝেই। শিশুদেরকে উদ্ধার করতে কুকুর উইলসন ছাড়াও আরও বহু আঙ্গিকে চেষ্টা করা হয়েছিল।
গত ১৬ মে আমাজনে বিধ্বস্ত প্লেনটির সন্ধান ও শিশুদের বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর শুরু হয় সমন্বিত উদ্ধার অভিযান। এক্ষেত্রে উদ্ধারকাজে কলম্বিয়ার বিশেষ বাহিনীর ১০০ জন প্রশিক্ষিত সৈন্য, সিভিল ডিফেন্সের সদস্য ও প্রায় ৭০ জনেরও বেশি আদিবাসীকে যুক্ত করা হয়।
আদিবাসীদের আমাজন সম্পর্কে থাকা অভিজ্ঞতা উদ্ধার অভিযানে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। অবশেষে গত শুক্রবার শিশুদেরকে উদ্ধারের পর জানানো হয়, কুকুর উইলসনেরও খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
তবে পরে জানা যায়, কুকুরটির খোঁজ পাওয়ার তথ্যটি ভুল ছিল। ঠিক যেমনটা উদ্ধারকালীন শিশুদের খোঁজ পাওয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ভুল জানানো হয়েছিল।
গত মাসে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের টুইটার থেকে শিশুদের উদ্ধার করা হয়েছে এমন টুইট প্রকাশিত হলে সমালোচনা শুরু হয়। পরে সে টুইট মুছে দেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, নিশ্চিত না হয়েই কলম্বিয়ার শিশুকল্যাণ সংস্থার তথ্য পেয়ে তার কার্যালয় টুইট করে বসে।
অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া চার শিশুর মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড় লেসলি কুকুরটিকে দেখতে পেয়েছিল বলে জানা গেছে। কলম্বিয়ান ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর অসট্রিড ক্যাসেরেস বলেন, 'লেসলি (উদ্ধারের পর) আমাদের দিকে তাকিয়ে হেসেছে, জড়িয়ে ধরেছে এবং কুকুরটির সম্পর্কে জানিয়েছে।'
চার শিশু উদ্ধার হলেও সৈন্যরা এখনো আমাজনে অবস্থান করছেন। এবার তাদের লক্ষ্য উইলসনকে খুঁজে বের করা।
কলম্বিয়ান সামরিক বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল হেলডার জিরালদো সৈন্যদেরকে কুকুরটির পদচিহ্ন অনুসরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে এ কমান্ডার বলেন, 'একজন পতিত কমরেডকে যুদ্ধের ময়দানে কখনোই ছেড়ে আসা যায় না।'
উইলসনের খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়া হবে বলে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
উদ্ধারকাজের নেতৃত্বে থাকা জেনারেল পেড্রো সানচেজ জানান, গত ১৮ মে উইলসন সর্বপ্রথম নিখোঁজ হয়। এরপর দুইবার সৈন্যরা কুকুরটির খোঁজ পেলেও পরবর্তীসময়ে সেটি আবারও হারিয়ে যায়।
জেনারেল পেড্রো সানচেজ বলেন, 'শিশুদের কাছে পৌঁছানোর পর উইলসনকে খাবারের অভাবে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। কুকুরটিকে খুঁজে বের করাই আমাদের নতুন লক্ষ্য। যাতে করে শিশুদেরকে উদ্ধারের এ গল্পের একটা সুন্দর সমাপ্তি হয়।'
অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট শিশুদের খুঁজে পাওয়াকে একটি 'জাদুকরি দিন' আখ্যা দিয়ে বলেছেন, 'শিশুরা একা ছিল। তারা নিজেরাই বেঁচে থাকার এমন উদাহরণ তৈরি করেছে, যা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এই শিশুরা এখন কলম্বিয়ার সন্তান, শান্তির দূত।'