গ্রিস উপকূলে ট্রলার ডুবি: পাকিস্তানিদের জোরপূর্বক ‘ডেকের নিচে’ পাঠানোর অভিযোগ
বুধবার (১৪ জুন) গ্রিসের দক্ষিণ উপকূলে শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী ট্রলার ডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বলেছেন, ডুবে যাওয়ার আগে ট্রলারে থাকা পাকিস্তানিদের জোরপূর্বক ডেকের নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'প্রায় ৫০০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেঁচে যাওয়াদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশুদের পাশাপাশি আরও অনেককে ট্রলারের সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশে ভ্রমণে বাধ্য করা হয়েছিল।'
'বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা গ্রিক কোস্টগার্ডকে জানান, পাকিস্তানিদের জোর করে ডেকের নিচে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে অন্য দেশের নাগরিকদের ডেকের উপরেই থাকতে দেওয়া হয়। ডেকের উপরে থাকলে তারা হয়তো বেঁচে যেতেন,' যোগ করা হয় প্রতিবেদনে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেঁচে যাওয়া লোকেদের সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায়, ট্রালারটিতে নারী ও শিশুদের মূলত আটকে রাখা হয়েছিল। যখন তারা খাবার পানি খুঁজছিলেন বা সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাদের সঙ্গে তখন দুর্ব্যবহার করা হয়।
ট্রলারটিতে মানবেতরভাবে দিন পার করিছেলেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, ডুবে যাওয়ার আগে শুধুমাত্র খাওয়ার পানির অভাবে ট্রলারটিতে ৬ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে মরক্কো-ইতালীয় সমাজকর্মী এবং অ্যাক্টিভিস্ট নাওয়াল সুফি বলেছেন, "আমি বিশ্বাস করি, ডুবে যাওয়ার আগে ট্রলারের যাত্রীরা কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েছিলেন, বাঁচাতে চেয়েছিলেন।" যদিও তার এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে গ্রিস সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যাত্রীরা কোনো ধরনের সাহায্যের অনুরোধ করেননি, বরং তারা ইতালি যেতে চেয়েছিলেন।
উদ্ধারকৃত এক যাত্রী জানান, ডুবে যাওয়ার কয়েকদিন আগেই ট্রালারের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, "মোট ৭০০ জনের মতো ছিলাম আমরা। শুক্রবার ভোরে যাত্রা শুরু করেছিলাম। এর তিনদিন পরেই ট্রালারের ইঞ্জিন অকেজো হয়ে পড়ে।"
তবে দাবি করা হচ্ছে, ট্রলারটির সঙ্গে কোস্টগার্ড দড়ি সংযুক্ত করায় এটি ডুবে যায়, যদিও এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন গ্রিসের কর্মকর্তারা।
এথেন্সে পাকিস্তানের দূতাবাস জানিয়েছে, কোস্টগার্ড দ্বারা উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১২ জনকে তারা পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করেছে।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় আজ সোমবার (১৯ জুন) পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িত মানব পাচারকারীদের ধরতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের ঘোষণাও দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার কবলে পড়া ট্রলারটি লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে গ্রিক কোস্টগার্ডের নজরে পড়ে। এদিকে, যাত্রীদের উদ্ধারে কোস্টগার্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে; কারণ ডুবে যাওয়ার আগে ট্রালারটি কোস্টগার্ডের নৌযানের বেশ কাছাকাছি অবস্থান করছিল।