চলতি জুলাই বিশ্বের রেকর্ডকৃত উষ্ণতম মাস! ১ লাখ ২০ হাজার বছরে যা সর্বোচ্চ!
তীব্র তাপমাত্রায় যেন বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এরই মাঝে বিজ্ঞানীদের দাবি, চলতি জুলাই মাস হতে যাচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ডকৃত উষ্ণতম মাস।
দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস ও দ্য ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন কর্তৃক গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
রিপোর্ট মতে, চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৩ দিনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬.৯৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস; যা মাসের তাপমাত্রা হিসেবে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৬.৬৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
মূলত ১৯৪০ সাল থেকে রেকর্ড করা ডেটার ওপর ভিত্তি করে উষ্ণতম দিন কিংবা মাসের হিসেবটি করা হয়। তবে এরও আগে হাজার হাজার বছরের জলবায়ু সম্পর্কিত ধারণা পেতে নানা বিষয়বস্তু বিবেচনায় আনা হয়।
বরফ স্তরের কেন্দ্র ও বৃক্ষচক্রের মতো জিনিসগুলো ঠিক তেমনি কয়েকটি ফ্যাক্টর। এগুলো পর্যালোচনা করে সংস্থা কোপার্নিকাসসহ বিজ্ঞানীরা জানায়, চলতি জুলাই মাসের রেকর্ডকৃত গড় তাপমাত্রা গত ১ লাখ ২০ হাজার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এ সম্পর্কে কোপার্নিকাসের ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেন, "মানবজাতির ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।"
এমনকি সার্বজনীনভাবে উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মের গড় তাপমাত্রায়ও বড় ধরণের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। এ বিষয়ে কোপার্নিকাসের ডিরেক্টর কার্লো বুওনটেম্পো বলেন, "চলমান উষ্ণ অবস্থা অবশ্যই রেকর্ড পরিমাণ গ্রীষ্মের তাপমাত্রার দিকে ইঙ্গিত করছে।" তবে এত আগেই এটি নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে বহু দেশে উষ্ণ তাপমাত্রা কেড়ে নিচ্ছে বহু জীবন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। এছাড়াও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রার ফলশ্রুতিতে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে প্রাণ হারিয়েছে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ।
অন্যদিকে এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী তীব্র তাপদাহের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। বৈশ্বিক এ টালমাটাল পরিস্থিতির জন্য মূলত মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবর্তনশীল জলবায়ু দায়ী।
এ বিষয়ে সামান্থা বার্গেস বলেন, "বৈশ্বিক তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্বের সাথে সরাসরি সমানুপাতিক।"
সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, চলতি বছরের গ্রীষ্মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও দক্ষিণ ইউরোপে তীব্র তাপদাহ সৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
অন্যদিকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এল নিনোর প্রভাব নিয়েও রয়েছে চিন্তার কারণ। যদিও এল নিনো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং তাই এর প্রভাব এখনই ততটা বোঝা যাচ্ছে না।
এ সম্পর্কে সামান্থা বার্গেস বলেন, "আগামী বছর থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রায় এল নিনোর প্রভাব দেখা যাবে। এতে করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে।"
অথচ চলতি বছরের তাপমাত্রা গড়েছে একের পর এক রেকর্ড। কোপার্নিকাসের তথ্যমতে, গত মাস গড়েছে উষ্ণতম জুন মাসের রেকর্ড। একইসাথে গত ৩ জুলাই গড়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের রেকর্ড।
সেদিন বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৭.০৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগে সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের রেকর্ড ছিল ২০১৬ সালে আগস্ট মাসে; বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৬.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এমনকি ২০১৬ সালে তুলনায় এখন পর্যন্ত চলতি বছরের জুলাইয়ের সকল দিনই উষ্ণতম।
অন্যদিকে শুধু স্থলভাগেই নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রেও পড়েছে তাপমাত্রার প্রভাব। চলতি বছরের মে মাসের মাঝ থেকে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অন্য বছরগুলোর একই সময়ের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ সম্পর্কে সামান্থা বার্গেস বলেন, "আমরা বর্তমানে যা দেখছি, এমনটা আগে কখনো হয়নি।"
অন্যদিকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ক্লাইমেট সাইন্টিস্ট কিম কব মনে করেন, চলতি বছরের জুলাইয়ের তাপমাত্রা অবাক করার মতো। তবে ভবিষ্যতে এই তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কিম কব বলেন, "এটা খুবই ভীতিকর যে, পরবর্তী দশকে বরং চলতি বছরটিকেই অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বছর হিসেবে ধরা হবে। যদিও চলতি বছরের গ্রীষ্মকে গরমের জন্য মানুষ অপছন্দ করছে। অথচ ভবিষ্যতের অপেক্ষা করছে আরও উচ্চ তাপমাত্রা।"
অন্যদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল পেটেরি তালাস মনে করেন, জুলাইয়ের তীব্র তাপমাত্রা যেন জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।
পেটেরি তালাস বলেন, "গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর প্রয়োজনীয়তা পূর্বের তুলনায় এখন আরও জরুরী। জলবায়ু নিয়ে কাজ করা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।"