পোলিশ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ওয়াগনার
রুশ মার্সেনারি বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ১০০ সৈন্য লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি বেলারুশের একটি অঞ্চলে অগ্রসর হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি।
এমনকি ওয়াগনার সেনারা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ছদ্মবেশে পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী মাতেউস।
গতকাল (শনিবার) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশি দেশ ও শক্তিশালি ওয়াগনার গ্রুপের বিরুদ্ধে সরাসরি এমন অভিযোগ করেন ন্যাটোর অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্রের এ প্রধানমন্ত্রী।
মাতেউস আরও জানান, পোল্যান্ড সরকার তথ্য পেয়েছে যে, ওয়াগনার সৈন্যরা পশ্চিম বেলারুশের শহর গ্রোডনোর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
গ্রোডনো বেলারুশের পশ্চিমে দিকে অবস্থিত। যা ন্যাটোর পোল্যান্ড ও লিথুনিয়া সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। একইসাথে এখানে গুরুত্বপূর্ণ সুওয়ালকি করিডোর অবস্থিত।
এদিকে গত মাসে পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে ব্যর্থ হয়ে হাজার হাজার ওয়াগনার সৈন্য বেলারুশে অবস্থান করছে। বেলারুশ আবার রাশিয়ার খুবই ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেই পরিচিত।
আগে থেকেই পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রমাগত অভিযোগ করছেন যে, পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে চাপে ফেলার জন্য বেলারুশ নিজেদের অভিবাসীদের ক্রমাগত দেশটির পশ্চিম দিকে পাঠাচ্ছে।
একইসাথে প্রধানমন্ত্রী মাতেউস দাবি করেন, বর্তমানে পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ওয়াগনার সেনাদের এ চলাচল সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আরও একটি পদক্ষেপ।
মাতেউস মেরাউইকি বলেন, "ওয়াগনার সৈন্যরা সম্ভবত বেলারুশের বর্ডার গার্ডের সাথে মিশে যাবে। পরবর্তীতে তারা পোল্যান্ড ভূখণ্ডে অবৈধভাবে বেলারুশের অভিবাসীদের ঢুকতে সহয়তা করবে। এতে করে পোল্যান্ডে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এছাড়াও তারা অভিবাসী সেজে পোল্যান্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে। যা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করবে।"
মাতেউস মেরাউইকি আরও অভিযোগ করেন, চলতি বছরে পোল্যান্ড থেকে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের প্রায় ১৬ হাজার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এই চেষ্টার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজেন্ডার লুকাশেঙ্কো ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে বাস্তবিক অর্থেই ওয়াগনার গ্রুপ গ্রোডনোতে অবস্থান করছে কী না এবং থাকলেও সেখানে ঠিক কী করছে সেটা পরিষ্কার নয়। কেননা এ বিষয়ে মার্সেনারি গ্রুপটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
কিন্তু রাশিয়া সমর্থিত একটি গোষ্ঠীকে সুওয়ালকি করিডোরে নিয়োগ বাস্তবিক অর্থেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। পোল্যান্ড ন্যাটোভুক্ত দেশ হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর জন্য এটি বেশ দুশ্চিন্তার কারণ।
দৈর্ঘ্যে মাত্র ৬০ মাইল হলেও সুওয়ালকি করিডোর কৌশলগত দিক থেকে ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও বেলারুশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সীমান্তবর্তী অঞ্চলটি রাশিয়ার বর্ধিতাংশ কালিনিনগ্রাদকে বেলারুশের সাথে যুক্ত করেছে। একইসাথে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য অংশের সড়কপথের একমাত্র সংযোগ এটি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে সুওয়ালকি করিডোরকে টার্গেট করা হতে পারে। কেননা রাশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমের অঞ্চল কলিনিনগ্রাদকে রক্ষা করতে এটি জরুরী। এছাড়াও এটিই ক্রেমলিনের একমাত্র অঞ্চল যেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ দিয়ে ঘেরা।
ঠিক কত সংখ্যক ওয়াগনার যোদ্ধা বর্তমানে বেলারুশে অবস্থান করছে সেটার সঠিক কোনো হিসেব নেই। মূলত বিদ্রোহ থেকে সরে আসার সময় চুক্তির শর্ত হিসেবে সেনাদলটি দেশটিতে অবস্থান করছে।
বিদ্রোহের শেষে বেলারুশে অবস্থানের পর অবশ্য প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যদের নিকট বেলারুশের সৈন্যদের প্রশিক্ষণের অনুরোধ করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে বেলারুশের সশস্ত্র বাহিনী ও ওয়াগনার গ্রুপ একত্রে পোল্যান্ড বর্ডারের নিকট সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা করছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এতে করে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এমনকি কিছুদিন আগে এক সামিটে লুকাশেঙ্কো ঠাট্টা করে পুতিনকে বলেছিল যে, ইতোমধ্যেই ওয়াগনার সৈন্যরা তাকে চাপে ফেলেছে। কেননা গ্রুপটি বেলারুশের পশ্চিম দিকে 'ভ্রমণে' যেতে চায়।
যদিও পোল্যান্ডের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, দেশটির সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্য যে, ওয়াগনার সৈন্যদের সম্ভাব্য হুমকির কারণে পোল্যান্ড নিজেদের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।