চাঁদে পানির খোঁজে রাশিয়ার অভিযান, দক্ষিণ মেরুতে প্রথম সফল অবতরণ সম্ভব কি?
রাশিয়া ৪৭ বছর পর প্রথমবার চাঁদে অবতরণযোগ্য যান মহাকাশে পাঠিয়েছে। প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করাতে চায় রাশিয়া। এই অঞ্চলে বরফ ও পানি আছে বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের।
রাশিয়ার এই চন্দ্র অভিযান ১৯৭৬ সালের পর প্রথম। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযানের চেষ্টা করছে। তবে দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণে এর আগের সব মিশনই ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ ভারত তার চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করেছে।
মস্কোর স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ২টা নাগাদ ভোস্টোচনি কসমোড্রোম থেকে লুনা-২৫ মহাকাশযান বহনকারী একটি সয়ুজ ২.১ রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়।
রাশিয়ার স্পেস এজেন্সি রোসকসমস জানিয়েছে, চাঁদে অবতরণের জন্য নির্মিত অংশটি এক ঘণ্টা পর পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে যায়।
রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার প্রধান ইউরি বোরিসভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, যানটি ২১ আগস্ট চাঁদে নামবে বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও মহাকাশ সংস্থা পূর্বে অবতরণের সম্ভাব্য তারিখ ২৩ আগস্ট বলে জানিয়েছিল।
উৎক্ষেপণের পরে বোরিসভ বলেছিলেন, এখন আমরা ২১ তারিখের জন্য অপেক্ষা করব। আমি আশা করি যে চাঁদে একটি অত্যন্ত সফল অবতরণ ঘটবে। আমরা প্রথম হওয়ার আশা করি।
মোটামুটিভাবে ছোট গাড়ির আকারের লুনা-২৫ দিয়ে এক বছর চাঁদে গবেষণা পরিচালনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার কর্মকর্তারা বরফ হয়ে থাকা পানির উৎস চিহ্নিত করেছেন।
এই মহাকাশযানে ওপর বেশ বড় বাজি ধরেছে রাশিয়া। ক্রেমলিন বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য পশ্চিমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা রুশ অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে পারেনি। এই অভিযানের ওপর সে দাবির সত্যতা অনেকটা নির্ভর করবে।
কয়েক দশক ধরে রাশিয়া 'মুনশট' নামে এই অভিযানের পরিকল্পনা করছে। ইউক্রেন হামলার পর পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের মহাকাশ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় এই মিশন রাশিয়ার স্বাধীন মহাকাশ কার্যক্রমের পরীক্ষাও নেবে।
ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি তার পাইলট-ডি নেভিগেশন ক্যামেরাটি লুনা-২৫-এর সাথে সংযুক্ত করে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পরে এই প্রকল্পের সাথে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে।
১ দশমিক ৮ টন ওজনের লুনা-২৫ মহাকাশযানে ৩১ কেজি ওজনের বৈজ্ঞানিক উপকরণ আছে। মহাকাশযানটি চাঁদের পৃষ্ঠের ১৫ সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত পাথরের নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হবে।
চাঁদে পানি?
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সাহারা মরুভূমির চেয়ে শতগুণ শুষ্ক চাঁদে পানির উপস্থিতি নিয়ে জল্পনা করে আসছেন। ২০১৮ সালে নাসার ম্যাপিংয়ে চাঁদের ছায়াযুক্ত অংশে বরফের উপস্থিতি দেখা যায়। ২০২০ সালে সূর্যালোক পড়া অঞ্চলেও পানির অস্তিত্ব পায় মহাকাশ সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান মহাকাশ সংস্থাগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। গত বছর একটি জাপানি চন্দ্রযান দক্ষিণ মেরুতে অবতরণে ব্যর্থ হয় এবং ২০১৯ সালে একটি ইসরায়েলি মিশন ব্যর্থ হয়েছিল। একই বছর ভারতের অভিযানও ব্যর্থ হয়। কোনো দেশই দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করাতে পারেনি।
রুক্ষ ভূখণ্ডের কারণে সেখানে অবতরণ করানো কঠিন। তবে সফল হলে পানি আবিষ্কারের বিষয়টি হবে ঐতিহাসিক।
বোরিসভ বলেন, আগামী সাত বছরে অন্তত তিনটি চন্দ্র অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং এর পরে রাশিয়া ও চীন নভোচারীসহ একটি সম্ভাব্য চন্দ্র মিশনে কাজ করবে।