নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকারকে বেছে নিয়েছে পাকিস্তান
বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির সিনেটর আনোয়ারুল হক কাকারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে পাকিস্তান। এ বছরের নভেম্বরের মধ্যে হতে যাওয়া দেশটির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করবেন কাকার।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং দেশটির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিদায়ী বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজ শনিবার (১২ আগস্ট) এক বৈঠকে কাকারের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) থেকে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ এবং রিয়াজ উভয়েই রাষ্ট্রপতি আলভির কাছে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাকারের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের সঙ্গে দেখা করার পর প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
'আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হতে হবে কোনো ছোট প্রদেশের এবং তার ব্যক্তিত্ব নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ছোট প্রদেশগুলোতে বঞ্চনার অনুভূতি দূর করা।
'আমরা অবশেষে আনোয়ারুল হক কাকারের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি,' রিয়াজ বলেন।
কে এই আনোয়ারুল হক কাকার?
২০১৮ সালে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন কাকার। ছয় বছরের মেয়াদি এ পদে তিনি ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত থাকবেন।
একই সময়ে তিনি সিনেটে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির সংসদীয় নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে এ দলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
পাঁচবছর ধরে কাকার এ নেতৃস্থানীয় পদে বহাল ছিলেন। তবে পাঁচ মাস আগে দলটি নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় কাকারকে।
বেলুচিস্তানে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) [পিএমএল-এন] ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম গ্রুপ) [পিএমএল-কিউ]-এর রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দ্বারা বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর দলটি বেলুচিস্তানের বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং প্রদেশটিতে একটি জোট সরকারের নেতৃত্ব দেয়।
বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ক্ষমতাসীন জোটেরও একটি অংশ। খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলিতে এটির চারজন নির্বাচিত সদস্য রয়েছে।
যারা বিবেচনায় ছিলেন
৯ আগস্ট পাকিস্তানের ন্যাশনার অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার একদিন পর থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ এবং রাজা রিয়াজের মধ্যে প্রাথমিক বৈঠক ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে উভয় নেতা মর্যাদাপূর্ণ এ পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা বিনিময় করেন।
এরপর গত রাতে বিদায়ী ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের আয়োজন করা নৈশভোজে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবারের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধানের নাম চূড়ান্ত করা হবে বলে দৃঢ়বিশ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ।
বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপটের সঙ্গে পরিচিত সংশ্লিষ্টরা ডনকে জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিলম্ব দৃশ্যত রাজা রিয়াজের কারণে হয়েছে। 'বন্ধুত্বপূর্ণ বিরোধীদলীয় নেতা' হিসেবে পরিচিত রিয়াজ বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন।
পিএমএল-এন-এর প্রস্তাবিত নামগুলোতে সম্মত হওয়ার পরিবর্তে রাজা রিয়াজ তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিচ্ছিলেন।
সূত্র জানায়, পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের মাধ্যমে সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়ার পক্ষে কথা বলছিলেন। দার না হলে এ পদের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির কথা ভাবা হয়।
তবে সূত্র জানিয়েছ, রিয়াজ সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সানজরানিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। শুক্রবার দার ও আহসান ইকবালের সমভিব্যাহারে সানজরানি রিয়াজের সঙ্গে দেখা করেন।