বড় শক্তিগুলো চাঁদে ভিড় জমাচ্ছে কেন? গোল্ডরাশের মতো সোনার নেশায়?
পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদে থাকা বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে আরও তথ্য অনুসন্ধানের জন্য আমেরিকা, চীন ও ভারতসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলোর সাথে আবারও যোগ দিলো রাশিয়া। ৪৭ বছর পর প্রথমবার চাঁদে অবতরণযোগ্য যান মহাকাশে পাঠিয়েছে দেশটি। কিন্তু দেশগুলোর চাঁদে এ ধরনের অনুসন্ধান চালানোর পেছনে কি কোনো অর্থনৈতিক লাভ আছে?
রাশিয়া জানিয়েছে, সামনে তারা আরও চন্দ্র অভিযান চালাবে। এমনকি চীনের সাথে যৌথভাবে নভোচারীও পাঠাবে পৃথিবীর উপগ্রহে।
সম্প্রতি 'লুনার গোল্ড রাশ' বা 'চাঁদে সোনার খোঁজ' নিয়ে কথা বলেছে নাসা; একইসাথে চাঁদের খনির সম্ভাব্যতাও অন্বেষণ করেছে তারা।
আমাদের গ্রহ থেকে ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার (২,৩৮,৮৫৫ মাইল) দূরে অবস্থিত চাঁদ। পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনার পেছনেও রয়েছে এই উপগ্রহ।
বিজ্ঞানীদের ধারণামতে, প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সাথে একটি বিশাল মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষ থেকে চাঁদের সৃষ্টি। সে সংঘর্ষের ধ্বংসাবশেষ একসাথে মিশে গঠিত হয় চাঁদ।
চাঁদের তাপমাত্রায়ও রয়েছে বেশ বৈপরীত্য। পুরোপুরি সূর্যের সংস্পর্শে থাকা অবস্থায় চাঁদের তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও ওঠে। আবার অন্ধকারে তাপমাত্রা মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রিতে নেমে আসে। এ উপগ্রহের এক্সোস্ফিয়ারে সূর্যের বিকিরণ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার মতো কোনো উপাদান নেই।
তবে চাঁদে এমন কিছু উপাদান রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা থেকে উপকৃত হতে পারে পৃথিবীবাসী।
পানি
২০০৮ সালে চাঁদে পানির উপস্থিতি আবিষ্কৃত হয়। ভারতের চন্দ্রযান-১ মিশনটির মাধ্যমে জানা যায়, চন্দ্রপৃষ্ঠ জুড়ে হাইড্রোক্সিল অণু ছড়িয়ে আছে এবং উপগ্রহটির মেরুতে সেগুলো ঘনীভূত অবস্থায় আছে।
পানি মানুষের জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এটি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনেরও উৎস। মূলত রকেট জ্বালানিতে ব্যবহার করা হয় এ দুটি উপাদান।
হিলিয়াম-৩
হিলিয়ামের একটি আইসোটোপ হিলিয়াম-৩; যা পৃথিবীতে বিরল। তবে নাসা বলছে, চাঁদে প্রায় এক মিলিয়ন টন হিলিয়াম-৩ আছে বলে অনুমান করছে তারা।
এই আইসোটোপটি একটি ফিউশন চুল্লিতে পারমাণবিক শক্তি সরবরাহ করতে পারে। তবে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মতে, এটি তেজস্ক্রিয় না হওয়ায় এ থেকে যে বর্জ্য তৈরি হবে তা অন্যান্য তেজস্ক্রিয় উপাদানের মতো বিপজ্জনক হবেনা।
বিরল ধাতু
বোয়িং-এর গবেষণা অনুসারে, চাঁদে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ১৫ ল্যান্থানাইডের মতো বিরল ধাতু রয়েছে। স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও উন্নত প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয় এগুলো।
চাঁদে খননকাজ চলবে কিভাবে?
চাঁদে এসব উপাদানের উপস্থিতি অনুমান করা হলেও, এগুলো আসলে কিভাবে খনন করা হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
চাঁদে কিছু অবকাঠামো স্থাপন করতে হবে। চাঁদের আবহাওয়া ও প্রতিকূলতা বিবেচনায় বোঝা যাচ্ছে, বেশিরভাগ কঠোর পরিশ্রম করতে হবে রোবটদেরকেই।
আর চাঁদে পানির উপস্থিতি থাকলে সেখানে বেশি সময় ধরে মানুষ উপস্থিত থাকার সম্ভাবনাও তৈরি হয়।
এক্ষেত্রে কোনো আইন আছে কি?
চাঁদে খননের মতো আইনটিও অস্পষ্ট; এতে রয়েছে নানা ফাঁকফোকর।
জাতিসংঘের ১৯৬৬ সালের আউটার স্পেস চুক্তি অনুযায়ী, কোনো জাতি চাঁদ বা অন্য মহাজাগতিক বস্তুর উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারে না। এতে আরো বলা হয়, মহাকাশের অন্বেষণ সব দেশের উপকারের জন্যই করা উচিত।
তবে আইনজীবীরা বলছেন, চাঁদের একটি নির্দিষ্ট অংশের উপর কোনো বেসরকারি সংস্থা সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
গত বছর তাদের একটি ব্লগে র্যান্ড করপোরেশন জানায়, "স্পেস মাইনিং নিয়ে বিদ্যমান নীতি তুলনামূলকভাবেই কম।"
১৯৭৯ সালের মুন অ্যাগ্রিমেন্টে বলা হয়েছে, চাঁদের কোনো অংশ "কোনো রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকারি বা বেসরকারি সংস্থা, জাতীয় সংস্থা বা বেসরকারি সত্তা বা কোন ব্যক্তির সম্পত্তি হতে পারবে না।"
তবে, এটি কোনো বড় মহাকাশ বিষয়ক সত্তার দ্বারা অনুমোদিত নয়।
নাসা'র আর্টেমিস মুন প্রোগ্রামের নামানুসারে ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে 'সেফটি জোন' বা নিরাপত্তা অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন তৈরির চেষ্টায় আর্টেমিস অ্যাকর্ড ঘোষণা করে। তবে রাশিয়া এবং চীন এ চুক্তিতে যোগ দেয়নি।