মানুষের মস্তিষ্কে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেল জীবন্ত কৃমি
অস্ট্রেলিয়ায় এক নারীর মস্তিষ্কে একটি আট সেন্টিমিটার (তিন ইঞ্চি) লম্বা জীবন্ত কৃমি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বে এমন ঘটনা এটাই প্রথম।
গত বছর অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় ওই রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত ফ্রন্টাল লোব টিস্যু অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের সময় 'দড়ির মতো গড়নের' এই কীটটি পাওয়া যায়।
ওই নারীর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেন ডা. হরি প্রিয়া বান্দি। তিনি বলেন, 'আমরা মোটেই এটা আশা করছিলাম না। প্রত্যেকে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।'
৬৪ বছর বয়সি বয়সি ওই নারী বেশ কয়েক মাস ধরে পেটে ব্যথা, শুকনো কাশি, রাতের বেলায় ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া, বিষণ্ণতা ও ভুলে যাওয়ার মতো উপসর্গে ভুগছিলেন।
২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্ক্যান করে দেখা যায়, তার মস্তিষ্কের ডান দিকের ফ্রন্টাল লোবে অস্বাভাবিক ক্ষতের মতো কিছু একটা রয়েছে।
অবশেষে ২০২২ সালের জুনে বায়োপসি করার পর তার আসল অবস্থা জানা যায়।
চিকিৎসকরা বলেন, লাল রঙের পরজীবীটি ওই নারীর মস্তিষ্কে দুই মাস ধরে জীবিত থাকতে পারে।
অস্ত্রোপচারের পর নিউ সাউথ ওয়েলসের বাসিন্দা ওই নারী এখন সেরে উঠছেন।
অস্ট্রেলিয়ার 'ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজেস' জার্নালে এ ঘটনার খবর প্রকাশ করে বলা হয়েছে, মানব মস্তিষ্কে কীটের আক্রমণ ও বেড়ে ওঠার এটিই প্রথম ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডা. প্রিয়া বলেন, 'সবাই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। আমরা যে কীটটি পেয়েছিলাম, সেটি মহা আনন্দে মস্তিষ্কের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।'
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি হ্রদের পাশে ওয়ারিগাল গ্রিন নামের একধরনের স্থানীয় সবজি তোলার সময় খুব সম্ভব এই কৃমি ওই নারী দেহের সংস্পর্শে আসে। অফিডাসকারিস রবার্টসি প্রজাতির এই কৃমি অস্ট্রেলিয়ার কার্পেট অজগরে প্রায়ই দেখা যায়। ওই অঞ্চলে এই প্রজাতির অজগর বাস করে।
অস্ট্রেলিয়ার পরজীবীবিদ্যাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মেহরাব হোসেন একটি জার্নালে লিখেছেন, তার ধারণা, ওই নারী যে সবজি তুলেছিলেন, তাতে অজগরের বিষ্ঠা ও পরজীবী কীটের ডিম ছিল। সেই দূষিত সবজি রান্না করে খাওয়ার পর খুব সম্ভব ওই নারীর মস্তিষ্কে এই কীট বেড়ে উঠেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় বিবিসিকে বলেন, এ ঘটনা একটি সতর্কবার্তা। গত ৩০ বছরে নতুন ধরনের ৩০টি সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই জুনোটিক—এগুলো প্রাণী থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়।
গবেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, এ ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রাণী থেকে মানুষের দেহে রোগ ও সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।