ভাগনার বিদ্রোহের পর আলজেরিয়া সফরে রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলজেরিয়া সফরে গিয়েছেন রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন। গত জুনে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহে সুরোভিকিনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়; তবে আলজেরিয়ার সফরের মাধ্যমে আবারও তিনি দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনে ফিরে এসেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রুশ জেনারেলের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ান সংবাদপত্র কমারসান্ত।
খাকি রঙের স্যুট পরা সুরোভিকিনের ছবি প্রকাশ করে সংবাদপত্রটি জানায় ছবিটি আলজেরিয়ায় তোলা হয়েছে। তবে সুরোভিকিনের এই পোশাকে কোনো সামরিক পদমর্যাদা-চিহ্ন দেখা যায়নি। রাশিয়ার অস্ত্রের অন্যতম প্রধান ক্রেতা হলো আলজেরিয়া।
সিরিয়ায় রুশ অভিযানের সময় নিষ্ঠুরতার জন্য পরিচিতি পান সুরোভিকিন। সেখানে তিনি 'জেনারেল আর্মাগেদন' নামে পরিচিত ছিলেন। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সামরিক ইউনিটের কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সুরোভিকিন। এরপরে তাকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
রুশ সামরিক বাহিনীর কট্টর সমালোচকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সের্গেই সুরোভিকিন। এদের মধ্যে প্রয়াত ভাগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনও ছিলেন। গত ২৩ আগস্ট মস্কোর কাছে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিগোজিন।
এর আগে জেনারেল সুরোভিকিনকে দেখা গিয়েছিল বিদ্রোহের সময়ের একটি ভিডিওতে, যেখানে তিনি ভাগনার বাহিনীর সৈন্যদের বিদ্রোহ থামিয়ে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ভাগনার প্রধান প্রিগোজিন জনসমক্ষেই জেনারেল সুরোভিকিনের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু ভাগনার গ্রুপের সংক্ষিপ্ত ও ব্যর্থ বিদ্রোহের পর হঠাৎ 'উধাও' হয়ে যান সুরোভিকিন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস- সুরোভিকিন আগে থেকেই ভাগনার বিদ্রোহের কথা জানতেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতার ২৪ বছরে এই বিদ্রোহই ছিল তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এর আগে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সুরোভিকিন ক্রেমলিনের সমর্থন হারিয়েছেন এবং সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ গত মাসে জানায়, সুরোভিকিনকে বিমানবাহিনী প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে এবং তাঁর ডেপুটি ভিক্টর আফজালভকে অস্থায়ী ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে সুরোভিকিনের পেশাদার অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ক্রেমলিন।
চলতি মাসে কিছু অসমর্থিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সুরোভিকিনকে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস-এর বিমান প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান নিযুক্ত করা হয়েছে। রাশিয়া এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের আরও আটটি রাষ্ট্রকে নিয়ে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস গঠিত।
এদিকে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সের্গেই সুরোভিকিনের আলজেরিয়া সফরের উদ্দেশ্য কী তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে একটি অস্পষ্ট ছবিতে তাঁকে একটি অডিটোরিয়ামে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে যেটিকে সরকারি কোনো অনুষ্ঠান বলেই মনে হয়েছে। ছবির পটভূমিতে আলজেরিয়ার পতাকা দেখা গেছে এবং সেই কক্ষে কয়েক ডজন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আরও একটি ছবিতে সুরোভিকিনকে পশ্চিম আলজেরিয়ার বন্দর নগরী ওরানের আবদেলহামিদ বেন বাদিস মসজিদে দেখা গিয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, কর্মকর্তারা তাঁকে মসজিদটি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন।
গত জুনে প্রিগোজিনের নেতৃত্বে ভাগনার গ্রুপ রুশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহ করে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব ছিল তাদের। প্রিগোজিন হাজার হাজার যোদ্ধাকে মস্কোর উপকণ্ঠে নিয়ে যান এবং মস্কো অভিমুখে মার্চ করার হুমকি দিয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রিগোজিনকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেন এবং শেষ পর্যন্ত 'রক্তপাত এড়াতে' মস্কোতে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ভাগনার গ্রুপ।
এই ব্যর্থ বিদ্রোহের পর সুরোভিকিনের ভাগ্যে কী ঘটবে তা নিয়েও শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। সেসময় বলা হয়েছিল যে সুরোভিকিনকে আটক করা হয়েছে। তবে গত আগস্টে বিমানবাহিনীর পদ থেকে বরখাস্ত হলেও, বলা হয়েছিল যে তিনি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকবেন।
ভাগনার বিদ্রোহের পর চলতি মাসের শুরুতেই প্রথমবারের মতো সুরোভিকিনের দেখা মেলে। রাশিয়ার সুপরিচিত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কেসেনিয়া সোবচাক গত ৫ সেপ্টেম্বর ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে সুরোভিকিনের নতুন একটি ছবিটি প্রকাশ করেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন, "জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন জীবিত ও সুস্থ আছেন। তিনি এখন নিজের পরিবারের সঙ্গে আছেন। ছবিটি আজকে তোলা।"
আলজেরিয়ায় সুরোভিকিনের ছবিগুলো প্রকাশের পর রুশ সামরিক ব্লগার সের্গেই কলিয়াসনিকভ একটি রাশিয়ান ওয়েবসাইটকে বলেন, "রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলেই সুরোভিকিনকে বরখাস্ত করতে পারতো। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সুরোভিকিনই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি ইউক্রেনেসহ নানা কঠিন পরিস্থিতি থেকে একাধিকবার রাশিয়াকে উদ্ধার করেছেন।"