ইসরায়েলের সামরিক শক্তি বাড়াতে দ্রুত যেসব সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে রণতরী ও যুদ্ধবিমান পাঠাতে শুরু করে আমেরিকা। প্রয়োজনের সময় ইসরায়েল যেন সব ধরনের সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করতেই ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে মার্কিন নৌবহর।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বিমানবাহী রণতরী-সজ্জিত নৌবহরকে পাঠানো হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিকল্পনায় সহায়তা করছে এবং গোয়েন্দা তথ্য দিচ্ছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যেকার সংঘাত আরও বিপজ্জনক আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে।
যেসব যুদ্ধজাহাজ ও বিমান পাঠানো হয়েছে তাদের প্রাথমিক মিশন হলো– যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি প্রদর্শন করে হিজবুল্লাহ, ইরান ও অন্যান্য পক্ষগুলোকে চরম প্রতিক্রিয়ার ভয় দেখানো, যাতে তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হামাসের পক্ষে যুদ্ধে যোগ না দেয়। কিন্তু, প্রয়োজন দেখা দিলে, তার চেয়েও বেশি কিছু করার সামর্থ্য আছে মার্কিন নৌবহরের।
ঐতিহাসিকভাবেই যুদ্ধের সময় ইসরায়েলকে জরুরি ভিত্তিতে সামরিক সরঞ্জাম, গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে ওয়াশিংটন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এরমধ্যেই ইসরায়েলে গোলাবারুদ ও আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইন্টারসেপ্টর মিসাইলের চালান প্রেরণ দ্রুততর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পরাশক্তিটি অস্ত্র ও অন্যান্য যেসব উপায়ে ইসরায়েলকে সহায়তা দিচ্ছে বা পরবর্তীতে দেবে, তার একটি ধারণা দিয়েছে বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস- এর প্রতিবেদন। টিবিএসের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো—
অস্ত্র ও বিশেষ বাহিনীর শক্তি
দরকারি গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা (মিউনিশন) এর পাশাপাশি ইসরায়েলে কিছু সেনাও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের একটি ছোট দল ইসরায়েলকে গোয়েন্দা তথ্য ও সামরিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।
এদিকে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছে, হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের উদ্ধারে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা অংশ নিতে পারে। এবিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদেরকে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, তবে ইসরায়েল যদি অনুরোধ করে, তাহলে তারা অভিযানে অংশ নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ইসরায়েল যেসব সমরাস্ত্র ক্রয়ের অর্ডার দিয়েছে, সেগুলো এখন দ্রুততর সময়ে পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছে মার্কিন সরকার। বিশেষত, আয়রন ডোম আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, আয়রন ডোম-সহ বিভিন্ন আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোকে এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'গোলাবারুদ ও আয়রন ডোমের ইন্টারসেপ্টর মিসাইল-সহ আমরা অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা বাড়াচ্ছি। নিজ নাগরিক ও শহরগুলোকে রক্ষায় ইসরায়েলের এসব সম্পদ যেন ফুরিয়ে না যায়, আমরা তা নিশ্চিত করব।'
প্রস্তুতকারক সংস্থা রেথিওনের মতে, ইসরায়েলের শহরগুলোর দিকে ধেয়ে আসা শত্রুর রকেট, মিসাইলকে প্রতিহত করে আয়রন ডোমের ইন্টারসেপ্টর মিসাইল।
ইসরায়েলের কাছে ১০টি আয়রন ডোম সিস্টেম ও তার অধীনে কয়েকশ' লঞ্চার বা উৎক্ষেপক রয়েছে। গত শনিবার থেকে হামাস পাঁচ হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলে। এর বেশিরভাগই আয়রন ডোম ধবংস করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আয়রন ডোমে ব্যবহৃত তামির মিসাইলের অধিকাংশ উপকরণ যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করে রেথিওন। মার্কিন সেনাবাহিনীর মজুতেও দুটি আয়রন ডোম সিস্টেম রয়েছে।
যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গিবিমান
সর্বাধুনিক বিমানবাহী রণতরী জেরাল্ড আর ফোর্ডের অধীনে নৌবহর পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ দিয়েছে।
রোববার পেন্টাগন এক ঘোষণায় জানায়, রণতরী জেরাল্ড আর ফোর্ডের নেতৃত্বে ক্যারিয়ার স্ট্রাইক ফোর্স ইসরায়েলের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা ছিল ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একচোখা সমর্থনের সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ।
এই রণতরীর মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা পাবে ইসরায়েল। ফোর্ডের তথ্যযুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা আছে। রণতরী থেকে উড্ডয়ন করতে পারে ই-২ হকআই নজরদারি বিমান। এই বিমান হামাসের গোপন প্রস্তুতির সার্বক্ষণিক তথ্য ইসরায়েলকে জানিয়ে দেবে। হামাস রকেট ছোঁড়া মাত্রই সেটা শনাক্ত করতে পারবে হকআই বিমানের রাডার। ফলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে ইসরায়েল।
এছাড়া, ফোর্ড রণতরীতে আছে এফ-১৮ যুদ্ধবিমান, যা প্রয়োজনে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকবে। জাহাজে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা আছে। আছে একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও একটি জরুরি কক্ষ। গুরুতর আহত ইসরায়েলি সেনা বা বেসামরিক নাগরিকদের এখানে নিয়ে আসা হতে পারে। জাহাজের হেলিকপ্টারগুলো দরকার মতো স্থানে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছে দেবে, অথবা আহতদের উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেবে।