পুরো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গাজা
ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি স্থলবাহিনী গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে গাজায় অভিযান বাড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় আল জাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজজুমকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উপত্যকাটির খান ইউনিসের আশেপাশের এলাকা থেকে বিক্ষিপ্ত লাইভ সম্প্রচার করে পাঠাতে হচ্ছে।
কিন্তু গাজার সংবাদদাতাদের সাথে সংবাদমাধ্যমটি সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছে না। কেননা বোমার আঘাতে জ্বলতে থাকা অঞ্চলটিতে সাধারণ যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে গাজার অবস্থা এমনিতেই শোচনীয় ছিল। এখন স্থল আক্রমণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি যেন আরও অবনতির দিকে পৌঁছেছে।
প্রায় ২৩ লাখ গাজাবাসী পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা আত্মীয়দের সাথে কিংবা একে অপরের সাথে যোগাযোগও করতে পারছে না।
বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, "আমরা এখন গাজায় যা দেখতে পাচ্ছি সেটা খুবই অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতি। অনুগ্রহ করে যদি কোনো বন্ধু আমাদের শুনতে পান তবে তাদের জানাতে চাই যে, আমরা এখন সংবাদ ডেস্কের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছি না। যোগাযোগের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।"
গাজার বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী যা করছে সেটাকে সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য অনেকটা 'সম্মিলিত শাস্তি' বলে মনে করছে অনেকে। তারই ফলস্বরূপ এত বিশাল সংখ্যক মানুষ এখন বাকি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
আইডিএফ মুখপাত্র হ্যাগারি বলেন, "ইসরায়েলি বাহিনী এখনো জিম্মি হওয়া সকলকে উদ্ধারে জাতীয় মিশনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। সামরিক বাহিনী সবদিক রক্ষা করতে প্রস্তুত।"
এছাড়াও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজার বাসিন্দাদের ফের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সেখানেও নির্বিচারে বোমা ফেলছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।
এদিকে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট এক টুইটে জানিয়েছে, তারা গাজায় তাদের দলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছে না। আল জাজিরার সংবাদদাতা জেমস বেস জানান, ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি এ ঘটনাকে যুদ্ধের সম্ভাব্য নতুন পর্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রেড ক্রিসেন্টের টুইটে বলা হয়: "ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ল্যান্ডলাইন, সেলুলার ও ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার কারণে গাজা উপত্যকায় আমরা অপারেশন রুম ও সেখানে কর্মরত সকল দলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি।"
আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহতের যে সংখ্যা ফিলিস্তিনিরা প্রকাশ করছে, সেটির ওপর 'আস্থা নেই' বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৭ অক্টোবর থেকে নিহত হওয়া ৭,০২৮ জনের নামসহ বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছে।
ডকুমেন্টে থেকে জানা যায়, ইসরায়েলি হামলায় রিপোর্টটি প্রকাশ পর্যন্ত ২,৬৬৫ জন শিশু নিহত হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিচয় সনাক্ত করতে না পারা ২৮১ টি মরদেহের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।