৮৭ বছর বয়সে মারা গেলেন বুকারজয়ী বিখ্যাত ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক এ.এস বায়াট
বুকার পুরষ্কারবিজয়ী বিখ্যাত ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক এ.এস. বায়াট গত বৃহস্পতিবার ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। লন্ডনে লেখকের নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগের খবরটি গতকাল (শুক্রবার) নিশ্চিত করেছে তারই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'চ্যাটো এন্ড উইন্ডাস'। তবে ঠিক কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
বায়াট বুকার পুরস্কারটি পেয়েছিলেন ১৯৯০ সালে প্রকাশিত 'পজেশন' উপন্যাসের জন্য। নিজের ছয় দশকের লম্বা ক্যারিয়ারে তিনি ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান এবং মিথোলজি ইত্যাদি নানা জগতে আলো ছড়িয়েছেন। এছাড়াও তাকে একজন অন্যতম উচ্চাকাঙ্ক্ষী লেখক ও একাডেমিশিয়ান হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
বায়াটের লেখা ১১ টি উপন্যাস ও ৬ টি গল্প সংকলন যেন বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। শিল্প, রাজনীতি, স্মৃতিচারণ, একাডেমিক তত্ত্ব কিংবা রোমান্টিক আবেগ; সবই তার লেখার মধ্যে উঠে এসেছে।
বায়াটের লেখা বেস্টসেলার উপন্যাস 'পজেশন' নিয়ে ২০০২ সালে নির্মিত হয়েছে একটি ফিচার সিনেমাও। সিনেমাটির পরিচালক নিল লাবুতে এবং এতে অভিনয় করেছেন গুইনেথ প্যালট্রো।
অন্যদিকে ১৯৯২ সালে বায়াটের প্রকাশিত 'এঞ্জেলস অ্যান্ড ইনসেক্টস' উপন্যাস নিয়েও সিনেমা নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমাটি ১৯৯৫ সালে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এই দুটি সিনেমার গল্পে একজন লেখক হিসাবে তার অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
বায়াট সাহিত্য জগতে নিজের খ্যাতি অর্জন করেছেন ধীরে ধীরে; নিজের প্রথমদিকে প্রকাশিত দুই উপন্যাস দিয়ে যার শুরু। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত 'দ্য শ্যাডো অফ দ্য সান' এবং ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত 'দ্য গেইম' লেখক হিসেবে তাকে সকলের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।
বায়াটের প্রথমদিকের ক্যারিয়ার যেন তারই বোন, লেখক মার্গারেট ড্র্যাবলের জন্য বেশ চাপা পড়ে গিয়েছিল। কেননা মার্গারেটের ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত উপন্যাস 'আ সামার বার্ড কেইজ' খুবই দ্রুতই একটি বেস্টসেলারে পরিণত হয়। এতে করে সমালচকেরা বায়াটের কাজকে তার বোনের কাজের সাথে তুলনা করেছে।
বায়াটের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৪ আগস্ট, ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে। তার বাবা জন এফ ড্রাবল পেশায় একজন ব্যারিস্টার ছিলেন; তবে তিনি নিজেও দুইটি উপন্যাস লিখেছেন। তার মা ক্যাথলিন ড্রেবল ছিলেন একজন শিক্ষক ও গৃহিণী।
১৯৫৯ সালে বায়াট বিয়ে করেন ইয়ান নামের একজন অর্থনীতিবিদকে। তখন মাত্র ২৫ বছর বয়সে সম্ভবনাময়ী এই লেখিকা নিজেকে একজন শুধু স্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখেন; যেটি তিনি কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না। তারা দুই সন্তানের জনক হন; যদিও এই যাত্রায় তিনি সন্তান লালন-পালনের সময় ভয়ানক হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
এরপর বায়াট ইনভেস্টমেন্ট এনালিস্ট পিটার জনকে বিয়ে করেন। সেখানেও তিনি আরও দুই সন্তানের জনক হন।
২০১৬ সালে বায়াট ইরাসমাস পুরষ্কার লাভ করেন। আর ২০১৮ সালে ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন লিটারেচার পুরস্কারে ভূষিত হন।
২০১৩ সালের টাইমস অফ লন্ডনের তথ্যমতে, বায়াট তার উইলে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, তাকে নিয়ে যেন কোন জীবনী লেখা না হয়। একইসাথে তার জীবনের ব্যক্তিগত সব ঘটনা যতটা সম্ভব ব্যক্তিগতই যাতে রাখা হয়।
এ সম্পর্কে বায়াট বলেন, "আপনি যখন একজন ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু লিখবেন, তখন বিষয়টা অনেকটা এমন যে, আপনি তাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাই আমি নিজের আত্মজীবনী লেখা হোক, সেটা চাই না। এক্ষেত্রে এমন ইচ্ছা যত ভালো কিংবা দুর্দান্ত কেউই পোষণ করুক না কেন। আপনারা বরং আমাকে আমার কাজের মধ্যেই খুঁজে পাবেন।"