অল্টম্যানকে চাকরীচ্যুত করায় বোর্ডের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছে ওপেনএআইয়ের কর্মকর্তারা
গত শুক্রবার ওপেনএআইয়ের সিইও পদ থেকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে কোম্পানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানকে। এবার এই বরখাস্তের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উল্টো বোর্ড অফ ডিরেক্টরসদের পদত্যাগ করতে বললেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। খবর বিবিসির।
একটি চিঠিতে ওপেনএআইয়ের কর্মীরা বোর্ডর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একইসাথে বোর্ড প্রতিষ্ঠানটির কাজে বেশ অবমূল্যায়ন করেছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়৷ চিঠিতে সদ্য চাকরি হারানো অল্টম্যানকে স্বপদে বহাল করার দাবিও জানানো হয়।
তবে চাকরি হারিয়ে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি এআই জগতের শীর্ষ এই প্রযুক্তিবিদকে। ইতিমধ্যেই অল্টম্যান মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছেন এবং সেখানেই থাকবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
কেননা অল্টম্যান ও মাইক্রোসফট সিইও সত্য নাদেলা ওপেনএইআইয়ের সফলতাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন।
অল্টম্যান টুইট করে বলেন, "ওপেনএআই যাতে অব্যাহতভাবে উন্নতি লাভ করে সেটা নিশ্চিত করা নাদেলা ও আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা আমাদের অংশীদার এবং গ্রাহকদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা সম্পূর্ণরূপে প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওপেনএআই ও মাইক্রোসফটের অংশীদারিত্ব এটিকে সম্ভব করে তোলে।"
আচমকা অল্টম্যানের বহিষ্কারের ঘটনাটি প্রযুক্তি দুনিয়ায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কোম্পানিটির সিনিয়র-জুনিয়র শত শত কর্মকর্তা। তাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে নিজেরাই পদত্যাগ করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তারা।
ঠিঠিতে আরও বলা হয় যে, ওপেনএআইয়ের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে চাকরির ছাড়ার হুমকি দেওয়া কর্মীদের চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের দাবি মানা না হলে সকলে প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিটিতে যোগ দিতে পারে।
সিএনবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে নাদেলা বলেছিলেন যে, ওপেনএআই থেকে মাইক্রোসফটে আসা কর্মীদের সাথে কাজ করতে তিনি স্বাচ্ছদ্যবোধ করেন।
মাইক্রোসফট বস বলেন, "এই পর্যায়ে এটা বেশ স্পষ্ট যে, ওপেনএআইয়ের গভার্নেন্সে কিছু জিনিস অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।" এই বিষয়ে মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে ওপেনএআইয়ের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি৷
ওপেনএআইয়ের এনগেঞ্জমেনন্ট ম্যানেজার ইভান মরিকাওয়া এক্স (প্রাক্তন টুইটার) এ পোস্ট করে জানান, ওপেনএআইয়ের ৭৭০ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৭৪৩ জনই চিঠিতে নিজের নাম লিখিয়েছেন।
চিঠিতে নাম থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যে নামটি সবচেয়ে অবাক করেছে, সেটি হচ্ছে ওপেনএআইয়ের চিফ সাইনটিস্ট ইলিয়া সুটস্কেভার। কেননা তিনি নিজেও একজন বোর্ড সদস্য এবং অল্টম্যানকে চাকরীচ্যুত করার বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এক্স-এ এক পোস্টে ইলিয়া সুটস্কেভার নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, "এখন আমি বোর্ডের কর্মকাণ্ডে আমার অংশগ্রহণের জন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমি কখনই ওপেনএআইয়ের ক্ষতি করতে চাইনি। আমরা যা কিছু একসাথে তৈরি করেছি তা আমি ভালোবাসি। তাই কোম্পানিকে পুনরায় একত্রিত করার জন্য আমি যা করতে পারি সেটাই করব।"
বর্তমানে ওপেনএআইতে চলমান অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে যে, অল্টম্যান সম্ভবত স্বপদে বহান হবেন। যদিও তিনি বর্তমানে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছেন, যেটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ওপেনএআইয়ের ৪৯ ভাগ ডলার কিনে নিয়েছে।
অন্যদিকে নাদেলা এক্স এ বলেন, "অল্টম্যান মাইক্রোসফটের এআই রিসার্চ টিমের নেতৃত্ব দেবেন।"
নিজের মাইক্রোসফটে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করে অল্টম্যান বলেন, "মিশন চলতে থাকবে।" অন্যদিকে কর্মকর্তাদের চিঠি প্রকাশের পর তিনি যোগ করেন যে, "আমরা সকলেই কোনো না কোনোভাবে একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি। আমি খুবই উচ্ছ্বাসিত। একটি দল, একটি মিশন।"
অন্যদিকে টুইটারের সাবেক সিইও এমেট শিয়ার ওপেনএআইয়ের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সিইও হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এক্স এ পোস্ট করে তিনি নিজের নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন, "জীবনের একটি বড় সুযোগ।"
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি বাজারে উন্মুক্তের পর থেকে ৩৮ বছর বয়সী অল্টম্যান প্রযুক্তি বিশ্বে ওপেনএআইকে তুলে ধরতে বেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে চ্যাটবটটি ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী লাভ করে।
২০১৫ সালে ইলন মাস্ক, পিটার থিয়েল ও লিংকডইনের প্রতিষ্ঠাতা রেইড হুফম্যানের মতো হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেন অল্টম্যান। পরবর্তীতে মাত্র ৩৮ বছর বয়সী এই প্রযুক্তিবিদের হাত ধরেই কোম্পানিটি শক্তিশালী 'আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টিলিজেন্স সিস্টেম' তৈরি করে।