আফগানিস্তানের পর এবার পাকিস্তানেও গণবিবাহ
ছককাটা এক সামিয়ানার নিচে ঝলমলে ঝাড়বাতির আলোয় ১২২ জন হিন্দু দম্পতি যাদের নিজেদের বিয়ের অর্থ জোগাড় করার সামর্থ্য ছিল না, তাদেরই বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ পাকিস্তানে।
জানুয়ারির ৭ তারিখে দেশটির করাচি শহরের দক্ষিণে এই গণবিবাহ আয়োজনের প্রধান কারণ ছিল দারিদ্র্য এবং নিপীড়নকে শক্তভাবে প্রতিহত করা।
গতবছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একইভাবে গণবিবাহ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫০টি গরীব দম্পত্তির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল।
ঐতিহ্যবাহী লাল বেনারসি পরিহিত ২৫ বছর বয়সী কনে কল্পনা দেবী বলেন, "আমি এখানে বিয়ে করছি কারণ আমার পরিবার গরীব। তাদের পক্ষে বিয়ের আয়োজনে টাকা খরচ করা সম্ভব না।"
দরিদ্রতার পাশাপাশি এইরকম একটি বিশেষ দিন আরো অনেক কনের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার পরও কল্পনার উৎসাহের কোন কমতি নেই। তিনি বলেন, "আমি আশা করি সবাই যাতে এইখানে বিয়ে করতে পারে।"
পাকিস্তানে বিয়ে মানেই অনেক খরচ কারণ কনের পরিবারকে অধিকাংশ সময়েই বরের পরিবারকে যৌতুক দিতে হয়। এইজন্য অনেক মেয়ের বিয়ে পিছিয়ে যায়।
কনে নেহা পার্মারের ২৫ বছর বয়সী ভাই সতীশ পার্মার বলেন, "এটা আমার জন্য ভালো সুযোগ কারণ আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। আমার বোনের বিয়ের জন্য এত অর্থ জোগাড় করা সম্ভব ছিল না।"
পাকিস্তান আর্থিক দুরবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। মানবাধিকারকর্মীরা এতদিন বলে এসেছেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।
এই গণবিবাহের আয়োজক পাকিস্তান হিন্দু পরিষদের ভাষ্যমতে, গত বছরের আদমশুমারি অনুযায়ী পাকিস্তানের ২৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মোট ৮০ লক্ষ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, হিন্দু নারীদের বিয়ের মাধ্যমে প্রায়ই জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে মুসলমান বানানো হয়।
গত জানুয়ারিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, দেশটিতে ১৩ বছর বয়সী বা তার থেকেও কম বয়সী মেয়েদের "অপহরণ করে তাদের বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের সাথে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয় এবং তাদের ধর্মান্তরিত করে মুসলমান বানানো হয়।"
হিন্দু অধিকারকর্মী শিব কাচ্চি জানান, তিনি এইরকম ১৭০টি পরিবারের সাথে কথা বলেছেন যাদের মেয়েদের জোরপূর্বক ২০২২ সালে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, মেয়েগুলো আসলে সচ্ছল মুসলমান পুরুষদের সাথে পালিয়ে যায় দরিদ্রতা কাটানোর জন্য।
এই গণবিবাহের অন্যতম আয়োজক হিন্দু অধিকারকর্মী সুন্দরতা রাঠোর বলেন, "তরুণীদের কিছু আকাঙ্ক্ষা আছে যেটি তাদের পরিবার দারিদ্রতার জন্য পুরন করতে পারেনা।"
তিনি আরও বলেন, "দারিদ্র্য এবং পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাহ্যিক চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকে।"