‘কে-ড্রামা’ দেখে ১২ বছরের কঠোর পরিশ্রমের সাজা পেল উত্তর কোরিয়ার কিশোর
দক্ষিণ কোরিয়ার গান কে-পপ, কে-ড্রামা, সিনেমা, টিভি শো দেখা উত্তর কোরিয়ায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সম্প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে কে-ড্রামা ও কে-পপ দেখে ১২ বছরের 'কঠোর পরিশ্রমের' সাজা পেয়েছে উত্তর কোরিয়ার দুই কিশোর। এই কিশোরদের জনসমক্ষে সাজা দেওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা ও মিউজিক ভিডিও দেখায় দুই কিশোরকে হাতকড়া পরাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার ইউনিফর্মধারী অফিসার। জনসম্মুখেই তাদের ১২ বছর 'কঠোর পরিশ্রমের' সাজা দিচ্ছেন তারা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ অ্যান্ড নর্থ ডেভেলপমেন্ট (স্যান্ড) ইনস্টিটিউট ভিডিওটি প্রকাশ্যে এনেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা, কে-ড্রামা বা কে-পপ দেখতে বা শুনতে গিয়ে ধরা পড়লে অনেক বছর ধরে কঠিন সাজা দিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া।
দেশ থেকে পালিয়ে আসা এক উত্তর কোরিয়ান বিবিসিকে বলেন, 'আমেরিকান ড্রামা দেখেও ঘুস দিয়ে পার পেতে পারবেন, কিন্তু কোরিয়ান ড্রামা দেখলে আপনাকে গুলি করা হবে।'
'কারণ উত্তর কোরিয়ানরাদের জন্য কোরিয়া ড্রামা হচ্ছে "ড্রাগ", যা তাদেরকে কঠিন বাস্তবতা ভুলে থাকতে সাহায্য করে,' বলেন তিনি।
উত্তর কোরিয়া থেকে পালানো আর ব্যক্তি বলেন, 'উত্তর কোরিয়ায় আমাদের শেখানো হয় দক্ষিণ কোরিয়ায় মানুষ আমাদের চেয়ে খারাপ জীবন যাপন করে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ান ড্রামা দেখলে বোঝা যায়, সেটা একেবারেই আলাদা এক জগত। উত্তর কোরিয়ান কর্তৃপক্ষ সম্ভবত এ বিষয়টি নিয়েই সতর্ক।'
২০০১ সালে উত্তর কোরিয়া ছেড়ে চলে এসেছেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অভ পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং স্যান্ড-এর সভাপতি চয়ে কিয়ং-হুই। তিনি রয়টার্সকে বলেন, 'উত্তর কোরিয়াজুড়ে মানুষকে সতর্ক করার জন্য বিচারে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতে পারে। [এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়] উত্তর কোরিয়ার সমাজে দক্ষিণ কোরিয়ান সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।'
ভিডিওটি ২০২২ সালের ধারণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে জানান কিয়ং-হুই। 'কিম জং উনের [উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা] জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে, মিলেনিয়াল এবং জেন জি-র তরুণরা নিজস্ব চিন্তাধারা গড়ে তুলেছে,' বলেন তিনি।
ভিডিওতে দেখা যায়, নিজেদের ভুল গভীরভাবে উপলব্ধি না করায় ১৬ বছর বয়সি দুই কিশোরকে তিরস্কার করছেন অফিসাররা। একটি আউটডোর স্টেডিয়ামে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থীর সামনে কিশোরদের হাতকড়া পরান তারা। সবার মুখেই মাস্ক পরা ছিল। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিওটি করোনা মহামারির সময়ে ধারণ করা।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, তিন মাস ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা, গান ও মিউজিক ভিডিও দেখা এবং ছড়িয়ে দেওয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ওই ছাত্রদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
ভিডিওর ধারাভাষ্যকরা বলেন, 'তারা বিদেশি সংস্কৃতির প্রলভনে পড়েছিল…এবং তাদের জীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।'