কে-পপ তারকারা কি শ্রমিক? দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, তারা শ্রমিক না
গতবছর কে-পপ ব্যান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যালবাম বিক্রি করেছে নিউ জিন্স। বিশ্বজুড়ে ব্যান্ডটির হয়েছে কোটি কোটি ভক্ত। এর সদস্যদের দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম বড় তারকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খবর বিবিসির।
তবে কর্মপরিবেশ নিয়ে বিতর্কে নিউ জিন্সের তারকারা দেশটির আইন অনুযায়ী শ্রমিকও কি-না, সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয় গত বুধবার দাবি করেছে, দেশটি শ্রম আইন অনুযায়ী কে-পপ তারকাদের শ্রমিকদের মতো বিবেচনা করা হয় না।
একইসাথে নিউ জিন্সের তারকাদের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে হওয়া শোষণের অভিযোগকে অস্বীকার করে মন্ত্রণালয় জানায়, এসব তারকাদের অধিকারকে শ্রমিকদের অধিকারের মতো বিবেচনা করা হয় না।
যদিও কে-পপ জগতের তারকাদের তীব্র পরিশ্রম ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কিছুদিন আগেও রেকর্ড লেবেল এডরের সাথে নিউ জিন্সের সদস্যদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসে।
যদিও গত বছর সুপার শাই, ওএমজি ও সুপারন্যাচারালের মতো হিট গান ভক্তদের উপহার দিয়েছে নিউ জিন্স। এমনকি ব্যান্ডটি চলতি বছর এমটিভি অ্যাওয়ার্ডের জন্যও মনোনীত হয়েছে। তবে রেকর্ড লেভেলের সাথে বিবাদ যেন কিছুতেই সুরাহা হচ্ছে না।
২০২২ সালে গঠিত নিউ জিন্সের সদস্য মোট পাঁচজন; অলেন মিনজি, হানি, ড্যানিয়েল, হেরিন ও হাইইন। এদের প্রত্যেকের বয়সই ১৬ থেকে ২০ বছর। সমস্যার শুরু হয় যখন ১১ সেপ্টেম্বর একটি ইউটিউব লাইভস্ট্রিমিংয়ে এসে ব্যান্ডটির সদস্যরা তাদের রেকর্ড লেভেলের প্রতি অভিযোগ তোলে।
ঐ ভিডিওতে নিউ জিন্সের তারকারা রেকর্ড লেভেলের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ তোলেন। একইসাথে হানি জানান, কোম্পানিটি তাদের ঘৃণা করে বলে তার মনে হয়।
যদিও হাইব-এর পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। কোম্পানিটির মূল প্রতিষ্ঠান এডর-এর সিইও বলেন, "শুনানিতে শিল্পীদের কথা আরও গুরুত্বসহকারে শোনা হবে।"
এক্ষেত্রে হানির সাথে কোম্পানির পক্ষ থেকে স্বাক্ষরকৃত চুক্তিটি পর্যবেক্ষণ করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে তারা নিশ্চিত করেছে যে, দেশটির আইন অনুযায়ী তাকে শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হয় না।
সিউলের ইয়ালচন ল ফার্মের সিনিয়র পার্টনার চুংঘোয়ান চোই বলেন, "শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে একজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। একইসাথে তাকে নিয়োগকর্তা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করেন। এক্ষেত্রে সংগীতশিল্পীর মতো তারকাদের স্বাধীন বিবেচনা করে চুক্তি করা হয়।"
সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, হানির আয়ের বিষয়টিও ব্যতিক্রম। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এক্ষেত্রে তিনি বেতন না নিয়ে বরং মুনাফার ভাগ লাভ করেন। একইসাথে তিনি শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত ইনকাম ট্যাক্স না দিয়ে বিজনেস ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে থাকেন।
এই ব্যাখ্যায় পুশান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কোরিয়ান এন্ড ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক সিডারবাফ সেজি অবশ্য ভিন্নমত দিয়েছেন। তিনি মনে করেন সরকারের প্রতিক্রিয়া অন্যায্য কিন্তু অবাক করার মতো নয়।
সিডারবাফ বলেন, "কে পপ তারকাদের কাজ মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশ ক্লান্তিদায়ক। তাদের বহু লম্বা সময় ধরে কাজ করতে হয়। কখনো সপ্তাহে সাতদিন থেকে শুরু করে পুরো মাসজুড়ে! বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগও হয় না।"
তিনি আরও বলেন, "এসব শ্রমিকদের শোষণ করা বেশ সহজ। কেননা তারা স্বাভাবিক বিবেচনায় কর্মী নন; কোন লেবার ইউনিয়ন নেই। এমনকি এখন আমরা দেখছি যে, তাদের কর্ম পরিবেশ নিয়ে কথা বলার জন্য কোনো সরকারি এজেন্সি কাজ করছে না।"
এদিকে গতকাল (বুধবার) নিউ জিন্সের ভক্তরা 'আইডলস আর ওয়ার্কার্স' হ্যাশট্যাগে বিক্ষোভ করেছেন। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী তারকারা শ্রমিক না হলেও চলমান শোষণের বিরুদ্ধে কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির বড় রকমের সংস্কারের দাবি তারা জানিয়েছেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান