পাকিস্তানে এখন চলছে বিয়ের মৌসুম, নাম ‘ডিসেম্বরস্তান’
পাকিস্তানে বিবাহের মৌসুম 'ডিসেম্বরস্তান' নামে পরিচিত। এটি একটি বড় সাংস্কৃতিক উদযাপন বা অভিনব অনুষ্ঠান যা দেশটির মানুষকে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যার যন্ত্রণা থেকে কিছু সময়ের বিরতি দেয়। আর বিয়েবাড়ির দাওয়াতে উৎসব চলে সবার।
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শীতল আবহাওয়াতে লাখ লাখ মানুষ প্রতি সপ্তাহে বিয়ের দাওয়াতে যায়। বিদেশে থাকা পাকিস্তানিরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশে আসেন বিয়ে উপলক্ষ্যে। তাদের কারণে ভিড় দেখা যায় বিমানবন্দরে এবং পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে।
করাচির যোগাযোগ বিষয়ক পরামর্শক খিজরা মুনির বলেন, "ডিসেম্বরেই আসলে অনেকে বিভিন্ন চিন্তা বাদ দিয়ে এই ধরনের আয়োজন করে থাকে। সবাই ভাবে আমরা এই মুহূর্তটাকে উপভোগ করবো। এখনই পুনর্মিলনী করার জন্য উপযুক্ত সময়। এখনই উপলক্ষ্য ভালো পোশাক পড়বার।"
মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে সামাজিকতা রক্ষা এবং আনন্দ করার জন্য বিয়ে একটি বড় উপলক্ষ্য। তাই এই সময়টাতে এত বিয়ের আয়োজন আসলে আশ্চর্যজনক নয়।
পাকিস্তানি বিয়ে মানেই অন্তত তিনটি আয়োজন অথবা তারও বেশি। বিয়েতে অন্যতম আয়োজন হল 'হলুদ' যেখানে কনের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা তার হাতে এবং মুখে হলুদ দিয়ে দেয়। তারপর আছে 'মেহেদি উৎসব' যেখানে কনের হাতে ও পায়ে মেহেদি দেওয়া হয়। এই উৎসব মানেই আরো বেশি নাচ-গান এবং হৈ-হুল্লোড়।
তারপর আসে সব থেকে বড় আয়োজন যেটি হল বিয়ের অনুষ্ঠান। পাকিস্তানে বিয়ের জন্য একটি অভিজাত জায়গা ভাড়া করতেই ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত খরচ হতে পারে। স্বল্প জিডিপি এবং অধিক মূল্যস্ফীতির দেশটিতে এই ধরনের আয়োজন প্রকৃতপক্ষেই ব্যয়বহুল। তবুও ধনী পরিবারগুলো এই সব আয়োজনে সহজেই ১০ থেকে ২০ লাখ রুপি খরচ করতে পারে।
ব্যাংকগুলো ৩ মিলিয়ন রুপি ধার দেওয়ার পাশাপাশি বিয়ের জন্য অন্যান্য আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে এই সময়ে। পাকিস্তানের সরকারি কল্যাণ সংস্থা সহ অন্যান্য সংস্থা দরিদ্র এবং অসহায় পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে বিয়ের আয়োজন করার জন্য।
টাকার সমস্যা থাকার পরেও পাকিস্তানের মানুষ আসলে বিয়ের এই মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে।
মার্চ মাস চলে আসলে পাকিস্তানিদের উষ্ণ আবহাওয়ার পাশাপাশি বিয়ের আয়োজনের বিশাল খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হলেও ডিসেম্বরস্তানে তাদের আনন্দের কোন ত্রুটি থাকে না।
অনুবাদক: তাসবিবুল গনি নিলয়