পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে বড় চমক!
বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোটাররা ফলাফলের প্রত্যাশায় গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলেও পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৪টার মধ্যে শুধু তিনটি ফলাফল ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসিপির তথ্য অনুসারে, ফজল হাকিম খান (পিকে-৬ সোয়াত-৪) ২৫ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত; সামি উল্লাহ (পিকে-৭৬ পেশোয়ার-৫) থেকে ১৮ হাজার ৮৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত এবং আলী শাহ (পিকে-৪ সোয়াত-২) ৩০ হাজার ২২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত। তিনজনই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট ২৬৬টি সাধারণ আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৫৯৩টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৫৯০টি আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভোটগ্রহণ নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়ে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজা অনানুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিকদের বলেছেন, রিটার্নিং অফিসারদের অনুরোধের ভিত্তিতে গুজরাটের তিনটি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় বাড়ানো হয়েছিল।
তিনি দাবি করেছেন, কোনো নাগরিকই ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। কিন্তু সারা দেশের ভোটার উপস্থিতি অনেক কম ছিল।
ভোটের জন্য জন্য প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল যার মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার সেনা সদস্য ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ৫ লাখ ১১ হাজার পুলিশ সদস্য ছিলেন।
ফলাফলে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা কোন দলের বেশি?
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি টুইট করেছেন, "ফলাফল অবিশ্বাস্যভাবে ধীর গতিতে আসছে।"
তবে তিনি আশাবাদ দেখিয়ে বলেছেন, "আমাদের সমর্থিত দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভালো করছে।"
ঠান্ডা আবহাওয়া এবং মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকায় নির্বাচনে প্রাথমিক ভাবে প্রভাব পড়েছে। যদিও কোনো দল বিজয়ী হবে সেটা বলা যাচ্ছে না, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা অন্য সব দলের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যম ডন জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে পিটিআই-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ইনফরমেশন রওফ হাসান দাবি করেছেন তার দল বিশাল ব্যবধানে কমপক্ষে ১২৫টি জাতীয় পরিষদের আসনে এগিয়ে আছে।
পার্টির এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, "সময়ের সাথে সাথে আমরা কেন্দ্রে এবং চারটি প্রদেশের মধ্যে অন্তত দুটিতে সরকার গঠন করার মত অবস্থানে থাকব।"
তিনি 'ইমরান খানের নেতৃত্বে' আস্থা রাখার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
পিএমএল-এন পাঞ্জাব এবং অন্য কিছু জায়গায় ভালো করেছে। সিন্ধুতে পিপিপি দখল ধরে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। করাচিতে কোনো দলেরই একক আধিপত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
নির্বাচন নিয়ে পূর্বের ভবিষ্যদ্বাণী
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নির্বাচনের আগের দিন ও সপ্তাহগুলোতে বিভিন্ন বাধা ও ধড়পাকড়ের লক্ষ্যবস্তু ছিল। দলটির প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাখ্যান, অপহরণ, প্রচারণায় বাধা, পুলিশি ধড়পাকড় এবং রাজ্য কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা সহ অনেক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছিলেন।
বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল দ্বারা পরিচালিত প্রাথমিক গণনার উপর ভিত্তি করে দেখা যায়, দলের বড় বিপর্যয়ের মধ্যেও পিটিআই খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভালো অবস্থানে আছে এবং পাঞ্জাবে অপ্রত্যাশিত সংখ্যক আসনে এগিয়ে আছে।
পিএমএল-এন এবং এর নেতা নওয়াজ শরিফ (চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসতে চান) বৃহস্পতিবার শেষের দিকেও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না।
শরীফের দলকে নির্বাচনের সব থেকে জনপ্রিয় দল হিসেবে ধারণা হয়েছিল যেহেতু দেশটির ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে দলটির ভালো সম্পর্ক ছিল।
প্রার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ
পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ ছিল, রিটার্নিং অফিসাররা তাদের প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফর্ম ৪৫-এর ভিত্তিতে কোনও যুক্তিসংগত কারণ না দেখিয়ে এবং স্বাক্ষরিত ফলাফল (ফর্ম-৪৬) না দিয়ে তাদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে।
পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থী সালমান আকরাম রাজা (এনএ-১২৮) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) একটি পোস্টে বলেছেন, "অফিসে একটি সন্দেহজনক ঘটনার পরে আমাকে অবৈধভাবে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার অনুপস্থিতিতে ফলাফল প্রকাশের প্রক্রিয়া চলতে পারে না। আমাকে অবশ্যই প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।"
কিন্তু রিটার্নিং অফিসাররা জানিয়েছেন, তারা "সংশোধিত নির্দেশনায়" ফলাফল সরাসরি নির্বাচন কমিশনে পাঠাচ্ছেন ।
এই ঘটনা আগের দিনে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) ঘোষণার সম্পূর্ণ উলটো কারণ যেখানে রিটার্নিং অফিসারদের বলা হয়েছিল, তাদের কেন্দ্রের বাইরে স্বাক্ষরিত ফলাফল টানাতে এবং ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া গেলে তা ইসিপিতে স্থানান্তর করতে।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ লাহোরের টাউন হলে একটি বড় পর্দায় নির্বাচনের ফলাফল দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।