পিটিআই-এর তিন পরিষদে আসনহীন দলের সাথে জোট গঠন
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় পরিষদসহ পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সংরক্ষিত আসনের জন্য সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের (এসআইসি) সাথে জোট গঠন করেছে।
পাশাপাশি ইসলামাবাদে সম্ভাব্য বিক্ষোভের জন্য সমর্থন চাইতে পিটিআই নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল জমিয়ত উলামায়ে-ইসলামের (জেইউআই- শেরানি) নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে।
সোমবার এসআইসি পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে (ইসিপি) চিঠি দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে, ৫০ জন পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের দলে যোগ দিয়েছে।
রবিবার একটি বৈঠকে পিটিআই এবং এসআইসির মধ্যে সমঝোতা হওয়ার একদিন পরে জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈঠকে মজলিস-ই-ওয়াহদাতুল মুসলিমিনও (এমডব্লিউএম) অংশ নেয়।
সংসদে এসআইসির একটিও আসন নেই। দলটির প্রধান সাহেবজাদা মুহাম্মদ হামিদ রাজা ফয়সালাবাদ থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ইসিপির একটি নথি অনুসারে, সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল ইসিপিতে তালিকাভুক্ত এবং সাহেবজাদা মুহাম্মদ হামিদ রাজা দলটির প্রধান। তবে কেন্দ্র বা প্রদেশে দলটির কোনো আসন নেই।
হামিদ রাজার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাওয়াদুল হাসান কাজমি (যিনি ইসিপিতে এসআইসির নথি দাখিল করেছেন) সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছেন, হামিদ রাজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এনএ-১০৪ (ফয়সালাবাদ) আসন থেকে নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন।
তিনি বলেন, "নির্বাচনে জয়লাভের পর রাজা ইসিপিকে একটি আনুষ্ঠানিক নোটিশ দিয়েছেন যাতে তিনি নিজেকে এসআইসির সদস্য হিসেবে বিবেচনা করতে বলেছেন কারণ দলটি ইসিপিতে তালিকাভুক্ত।"
অ্যাডভোকেট কাজমি বলেন, জাতীয় পরিষদের অন্য কোনো আসনে এসআইসি জয় লাভ করতে পারেনি।
তিনি দাবি করেন, "কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো তালিকাভুক্ত দলে যোগদান করার অধিকার প্রার্থীদের আছে। তাই সাহেবজাদা মুহাম্মদ হামিদ রাজা এসআইসিতে যোগ দিবেন এবং পিটিআইও সংরক্ষিত আসন পাবে।"
গত সপ্তাহে পিটিআই এমডব্লিউএম-এ যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কিছু কারণে সেটি হয়নি।
এই ব্যাপারে পিটিআই সদস্যরা মতামত দিয়েছিলেন, পাঞ্জাবের এমডব্লিউএমের প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এমডব্লিউএম-এ যোগ দিয়ে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সভায় পিটিআইয়ের আসন দাবি করার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
পিটিআই এর আইনজীবীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা ইসিপিতে নিবন্ধিত যে কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারে।
কাজমি বলেন, "আমাদের সদস্যরা এসআইসিতে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে দলটির প্রায় ১০০ সদস্য থাকবে এবং সংরক্ষিত আসন দাবি করার সাংবিধানিক অধিকার থাকবে।"
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পিটিআই নেতা ব্যারিস্টার গোহর খান ঘোষণা করেছিলেন, পিটিআই-এর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পরিষদের পাশাপাশি পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়াতে এসআইসিতে যোগদান করবে। ওমর আইয়ুব, এমডব্লিউএম মহাসচিব আল্লামা রাজা নাসির
আব্বাস, এসআইসি প্রধান হামিদ রেজা এবং পিটিআই মুখপাত্র রওফ হাসানের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ইসিপিতে সংরক্ষিত আসনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন গোহর খান।
তিনি বলেন, "আমাদের প্রার্থীরা আমাদের কাছে তাদের হলফনামা জমা দিয়েছেন এবং তাদের সম্মতি নিয়ে আমরা ঘোষণা করছি, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা এসআইসিতে যোগদান করছে।"
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে হামিদ রাজা খান এবং আল্লামা নাসির আব্বাস সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং 'ব্যাট' প্রতীক ছাড়াই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য পিটিআই-এর প্রশংসা করেন।
উভয় নেতাই পিটিআইকে নিঃশর্ত সমর্থন দিবেন বলে জানিয়েছেন।
'কোন আইনি মূল্য নেই'
এসআইসির সাথে পিটিআই-এর নেতৃত্বের জোট সম্পর্কে মিডিয়া প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় পিটিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আকবর এস বাবর বলেছেন, এই জোটের কোনো আইনি প্রভাব নেই এবং সংসদে সংরক্ষিত আসন বণ্টনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
বাবর বলেছেন, দলটির নেতৃত্ব ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ইসিপির আদেশের কারণে আইনত বিলুপ্ত হওয়ায় পিটিআইয়ের আন্তঃদলীয় নির্বাচন অকার্যকর হয়ে গেছে। পিটিআই আইনত অন্য কোনো দলের সাথে জোট গঠন করতে পারে না।
জেইউআই-এসের সাথে বৈঠক
পিটিআই-এর একটি প্রতিনিধি দল আলাদাভাবে জেইউআই-এসের নেতাদের রাজপথে তাদের আন্দোলনকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আসাদ কায়সার, ওমর আইয়ুব এবং ব্যারিস্টার গোহর আলী খানের নেতৃত্বে পিটিআই প্রতিনিধি দল এফ-৭ সেক্টরে জেইউআই-এসের পার্টি অফিসে যান এবং দলটির প্রধান মাওলানা গুল নসিব খানের সাথে দেখা করেন।
দুই পক্ষ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জেইউআই-এসের কোনো পরিষদে একটি আসন না পেলেও ২০২২ সালের মে মাস থেকে পিটিআই-এর সাথে যোগাযোগ ধরে রেখেছে।
বৈঠকের পর মাওলানা নসিব খান ঘোষণা করেন, দেশের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে উভয় দলই জোটবদ্ধ।
পিটিআই নেতা ওমর আইয়ুব বলেছেন, জেইউআই-এসের সাথে তাদের সম্পর্ক সবসময়ই সৌহার্দ্যপূর্ণ।
রাওয়ালপিন্ডির প্রাক্তন কমিশনারের বিবৃতিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে আইয়ুব বলেন, প্রধান বিচারপতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের অংশ হওয়া উচিত নয়।
কয়েকদিন আগে পিটিআই মাওলানা ফজলুর রহমানের (মাওলানা শেরানির প্রতিপক্ষ) সাথে দেখা করেছিল এবং নির্বাচনে কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য তাঁর সমর্থন চেয়েছিল।
পিটিআই মূল কমিটি
পিটিআই-এর মূল কমিটি সোমবার পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির জীবনের হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কমিটি বলেছে, বুশরা বিবিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বানি গালাতে রাখা হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যেই তাকে আদিয়ালা কারাগারে স্থানান্তরর করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
পিটিআই অভিযোগ করেছে, বুশরা বিবিকে 'নিম্নমানের ক্ষতিকারক এবং বিষাক্ত খাবার' দেওয়া হচ্ছে।
তারা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আসলাম ঘুরমান এবং আহমার রশিদ ভাট্টি (যাদের পিটিআই ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল) সহ সারা দেশে পিটিআই-এর সফল প্রার্থীদের জোরপূর্বক গুম করার নতুন ধারারও নিন্দা করেছেন।
তারা পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের প্রধান সচিব এবং পুলিশ প্রধানদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।